খাগড়াছড়িতে বাঙালি নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মতবিনিময়
দেশের সংবিধানকে অক্ষুন্ন রেখে কাজ করবে কমিশন
——–ভূমি কমিশন চেয়ারম্যান
॥ খাগড়াছড়ি সংবাদদাতা ॥ পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমিবিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের চেয়ারম্যান অবসারপ্রাপ্ত বিচারপতি মোহাম্মদ আনোয়ার-উল হক বলেছেন, পার্বত্য এলাকায় দীর্ঘদিনের ভূমিবিরোধ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে দেশের সংবিধানকে অক্ষুন্ন রেখে কাজ করবে কমিশন।
শুক্রবার (২৮ অক্টোবর) সকালে খাগড়াছড়ি সার্কিট হাউসের ভিআইপি লাউঞ্জে পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঙালি নেতৃবৃন্দের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় কমিশনের চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মোহাম্মদ আনোয়ার-উল হক এ কথা বলেন।
আনোয়ার-উল হক কমিশনের কার্যক্রমের ওপর বাঙালি নেতৃবৃন্দকে আস্থা ও বিশ্বাস রাখার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘রাতারাতি কমিশন ভূমিবিরোধের নিষ্পত্তি করতে পারবে না। এ ক্ষেত্রে সময় ও অনুকূল পরিবেশ লাগবে। তাই কমিশনকে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। তারপর মূল্যয়ন করবেন কমিশন কী কাজ করছে।’
বাঙালি নেতৃবৃন্দর উদ্দেশে তিনি আরো বলেন, ‘আপনাদের যদি কোনো অভিযোগ থাকে তা লিখিত আকারে আমার মাধ্যমে সরকারকে জানাতে পারেন। পার্বত্য ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন সংশোধিত আইনে কমিশনের চেয়ারম্যানের ক্ষমতা খর্ব করা হয়নি। চেয়াম্যানসহ সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে বিরোধ নিষ্পত্তি করা হবে। তাই চেয়ারম্যানের ক্ষমতা এখানে গৌণ।’
মতবিনিময় সভায় পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমিবিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনে বাঙালি প্রতিনিধিত্ব না থাকায় শঙ্কা প্রকাশ করেন নেতৃবৃন্দ। এ সময় পার্বত্য ভূমিবিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন সংশোধিত আইন বাতিলেরও দাবি জানান তারা।
মতবিনিময় সভায় খাগড়াছড়ি পৌর মেয়র রফিকুল আলম, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার রইছ উদ্দিন, অ্যাডভোকেট মঞ্জুর মোর্শেদ, অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন মজুমদার, বাঙালি ব্যবসায়ী হাজী রফিক উদ্দীন, বাঙালি ছাত্র পরিষদ নেতা মাঈন উদ্দিন ও এস এম মাসুম রানা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এ ছাড়াও ভূমি কমিশনের সচিব এবং যুগ্ম জেলা দায়রা জজ মো. রেজাউল করিম ও রেজিস্টার মো. সোয়েক খান উপস্থিত ছিলেন।
এ দিকে সংশোধিত পার্বত্য ভূমিবিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন বাতিল ও কমিশনের দ্বিতীয় বৈঠকের আহ্বানে আগামী ৩০ অক্টোবর (রবিবার) খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গমাটিতে সকাল-সন্ধ্যা সড়ক অবরোধ ডেকেছে বাঙালিদের ৫টি সংগঠন।
প্রসঙ্গত, পাহাড়ে ভূমিবিরোধ নিষ্পত্তি করার লক্ষ্যে চলতি বছরের ৮ সেপ্টেম্বর ক্ষতিগ্রস্থদের কাছ থেকে ৪৫ দিনের মধ্যে আবেদন চেয়ে জারি করা গণবিজ্ঞপ্তির প্রেক্ষিতে প্রায় ১৪ হাজার ৮০০ আবেদনপত্র জমা পড়ে। পাশাপাশি আগামী ৩০ অক্টোবর পার্বত্য ভূমি কমিশনের দ্বিতীয় বৈঠক আহবান করা হয়েছে। গত কমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি খাদেমুল ইসলামের মেয়াদেও আরও এক দফা গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছিল। সে সময় ৪ হাজার ৪০৮টি আবেদন কমিশনে জমা পড়েছিল।
১৯৯৭ সালে সম্পাদিত পার্বত্য চুক্তির আলোকে গঠিত পার্বত্য ভূমি বিরোধ নিস্পত্তি কমিশন আইন-২০০১। পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান সন্তু লারমা শুরু থেকে এ আইনের বিরোধিতা করে আসছিলেন।
অবশেষে চলতি বছরের ১ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে ভেটিং সাপেক্ষে ‘পার্বত্য ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন (সংশোধন) আইন, ২০১৬’-এর খসড়ার নীতিগতভাবে অনুমোদন ও ৯ আগস্ট তা অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে গেজেট আকারে প্রকাশের পর গত ৬ অক্টোবর জাতীয় সংসদে পাস হয়। বাঙালি সংগঠনগুলো সংশোধনের পর থেকে আইনটি বাতিলের দাবিতে আন্দোলন করে আসছে।