‘চুরি’ করে এখন আদালতে দাঁড়াতে ভয়: হাসিনা

“এই মহিলা কোর্টে গিয়ে মামলা মোকাবেলাই করতে সাহস পায় না। তার একটাই কারণ যে, এতিমের টাকা তিনি চুরি করেছেন।”

বুধবার গণভবনে শ্রমিক লীগের ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় একথা বলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী।

বিএনপি চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট ও জিয়া দাতব‌্য ট্রাস্টের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দুদকের করা দুটি মামলার বিচার চলছে।

এই মামলাটি দুটিতে খালেদা জিয়া হাজিরা দিতে বারবার সময় নেওয়ায় বিচার পেছাচ্ছে বলে বাদী পক্ষের অভিযোগ।

বিএনপির অভিযোগ, তার দলের নেত্রীকে শাস্তি দিয়ে নির্বাচন থেকে সরিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ‌্যে মামলা দুটি করা হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, “তারা বক্তৃতা দিয়ে বলে, আমাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে, আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা। কোনটা মিথ্যা মামলা-প্রমাণ করেন। মামলা মিথ্যা না সত্য, সেটা কোর্টে গেলেই না বোঝা যাবে।

জিয়া ট্রাস্ট মামলায় কয়েকবারই আদালতে যেতে হয়েছে খালেদা জিয়াকে (এই ছবি গত বছরের এপ্রিলের)

“মামলা কনটেস্ট করতে চান না, কোর্টেই যেতে চান না, কোর্ট থেকে পালান। সেই যে বলে চোরের মন পুলিশ পুলিশ, সেইটেই। আজ যদি সাহস থাকত, বুকে যদি বল থাকত যে আমি এই অন্যায় করি নাই, তাহলে নিশ্চয়ই যেত।”

শেখ হাসিনা ২০০৭ সালে সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে তার বিরুদ্ধে করা ‘মিথ্যা মামলা’ আদালতে গিয়ে মোকাবেলার কথা তুলে ধরে বলেন, “তখন ওরাই ঘাবড়ে গেল।”

২০১৪ ও ২০১৫ সালে বিএনপি-জামায়াতের নির্বাচন ঠেকানো এবং সরকার পতনের আন্দোলনে পেট্রোল বোমায় হতাহতের ঘটনার বিচারের কথা আবার বলেন প্রধানমন্ত্রী।

“এই যে আগুনে মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে। তাদের লোকেরা বলে মিথ্যা মামলা। কোনটা মিথ্যা মামলা? তারা কি মানুষ পোড়াই নাই?”

“তারা যে হুকুম দিয়ে দিয়ে মানুষ পোড়াল, সেটা কিভাবে তারা অস্বীকার করবে? তারা মানুষ পুড়িয়ে মারবে আর তাদের বিরুদ্ধে মামলা হবে না, কত আহ্লাদের ব্যাপার! আমি সেটাই চিন্তা করি।”

“সব জায়গায় নালিশ করে বেড়ায় মিথ্যা মামলা। কোনটা মিথ্যা মামলা? ” বিএনপির সমালোচনার জবাব দেন শেখ হাসিনা।

শ্রমিক লীগের এই অনুষ্ঠানে নাশকতার আন্দোলনে পরিবহন শ্রমিকদের মৃত‌্যুর কথাও তুলে ধরেন তিনি।

“তাদের আঘাতটা সবসময় এদেশের মেহনতি মানুষ, এদেশের সাধারণ মানুষের উপর এসে পড়ে। তাদের আন্দোলনের সবচেয়ে বড় আঘাতটা এল শ্রমিকদের উপর। অথচ শ্রমিকদের সমস্যার সমাধান কখনও তারা করেনি।”

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকানোর উদ্দেশ‌্যেই হত‌্যাকাণ্ডগুলো ঘটানো হচ্ছে মন্তব‌্য করেন তিনি।

যুদ্ধাপরাধীদের যারা মন্ত্রী বানিয়েছে তাদের বিচারের কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী।

“যারা এদেরকে এভাবে মন্ত্রী করেছে, তাহলে তাদের বিচার কেন হবে না? তাদের বিচারও অবশ্যই হবে। তাদেরও বিচার হতে হবে।”

১৯৬৯ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে গঠিত শ্রমিক লীগের স্বাধীনতা সংগ্রামসহ বিভিন্ন আন্দোলনে ভূমিকার কথাও স্মরণ করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী।

শ্রমিকদের উপর বিএনপি সরকারের নিপীড়নের কথা তুলে ধরে তার বিপরীতে আওয়ামী লীগের শাসনামলে শ্রমিকদের কল‌্যাণে নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপও তুলে ধরেন তিনি।

মজুরি বাড়ানোর দাবিতে খালেদা জিয়ার শাসনামলে ১৭ জন শ্রমিককে হত্যার কথা উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা নেওয়ার পর শ্রম আইন সংশোধন, শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানো এবং ৪৫টি খাতে মজুরি কমিশন গঠনের কথা বলেন তিনি।

“আওয়ামী লীগ সবসময় শ্রমিকদের স্বার্থটা দেখে। শুধু শ্রমিকদের স্বার্থরক্ষাই না, প্রবাসী শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষায়ও পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।”

অনানুষ্ঠানিক খাতের যে বিশাল সংখ্যক শ্রমিক শ্রেণি রয়েছে, তাদের ‘স্বার্থ ও কল্যাণ’ দেখার জন্যও উদ্যোগ নিতে বলেন প্রধানমন্ত্রী।

একইসঙ্গে দলের দৃষ্টিভঙ্গি মানুষের মাঝে নিয়ে যাওয়া, শ্রমিকদের উন্নয়নে করা কাজগুলোর ব্যাপকভাবে প্রচার করা এবং সংগঠনকে শক্তিশালী করতে শ্রমিক নেতাদের নির্দেশ দেন তিনি।

অনুষ্ঠানে শ্রমিক লীগের সভাপতি শুকুর মাহমুদ, আওয়ামী লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ, শ্রমিক লীগের সহ-সভাপতি ও নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানও বক্তব‌্য রাখেন।

Archive Calendar
Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031