এনামুল হক কাশেমী ॥ বান্দরবান জেলার সাংগু ও মাতামুহুরী নদীর ব্যাপক ভাংগনে কৃষিজমিসহ বিপুল বসতঘর বিলীন হলেও ভাংগণ রোধে কোন উদ্যোগ নেই সরকারের। সাম্প্রতিক ভারী বর্ষণেই উজান থেকে নেমে আসা বানের পানির ধাক্কায় এ ২টি নদীর দুই তীরের নানাস্থান ক্ষত-বিক্ষত হয়ে পড়েছে। ভেংগে পড়েছে জমি-জামাসহ ঘর-বাড়ি ও বনজ-ফলজ বাগানের ব্যাপক এলাকা। কিন্তু পানি উন্নয়ন বিভাগ বা সরকারের কোন মহলই নদীর ভাংগন রোধে কোন পদক্ষেপ এখনও গ্রহণ করেনি। তবে জেলাবাসী নদীশাসক প্রকল্প গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন সরকারের কাছে। জানা গেছে, জেলায় প্রবাহিত সাংগু ও মাতামুহুরী নদীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকাসমুহে নদী শাসন প্রকল্প গ্রহণ বা ড্রেজিং করার বহুবার দাবি জানানো সত্বেও সরকারের উচ্চ মহল এ বিষয়ে এখনও উদ্যোগ নেয়নি। ফলে নদীর তীরে অবস্থিত জেলা শহর, লামা, রুমা, আলীকদম ও থানচি উপজেলা সদরগুলোর বিস্তীর্ণ এলাকা প্রতিবছরই বর্ষায় ভেংগে পড়ে নদীত বিলীন হয়ে যাচ্ছে। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড লোক দেখানো কিছু ব্লকস্পার স্থাপন করলেও চরম ক্রটি ও অদক্ষ অপরিকল্পিত কাজের কারণেই সেই প্রকল্পগুলো কার্যত ভেস্তে গেছে,বন্যার রাহুগ্রাস থেকে জানমাল রক্ষায় কোন কাজেই আসেনি এসব প্রকল্প। বান্দরবান জেলার বেশিরভাগ পাড়া/গ্রামের অবস্থান নদীর তীর এলাকাভিত্তিক। পানির উৎস নিশ্চিত আছে এমন এলাকায় স্থাপিত হয় পাড়া/গ্রাম। জেলায় কৃষি জমির গড় পরিমাণ মাত্র ১০ শতাংশ। এর ওপর প্রতিবছরের বন্যায় ব্যাপক জমি-জামা,বাগানের ফলদ-বনজ গাছপালা নদীগর্ভে তলীয়ে যাওয়ায় গৃহ ও ভুমিহারা হচ্ছেন শত শত পরিবার।
এলাকা পরিদশনকালে জানা যায়, জেলা শহর থেকে চাইংগ্যা,তারাছামুখ,লাংগিরচর এলাকা,বেতছড়া,ঘেরাউ,কৈক্ষ্যংঝিরি,রুমামুখ,গালেংগ্যা,বলিপাড়া,ডাকশৈপাড়া থানচি সদর,তিন্দুরমুখ,রেমাক্রি,ছোটমদক এবং বড়মদক পর্যন্ত সাংগু নদীপথে প্রায় ১৮০ কিমি এলাকায় দুইতীরে ভাংগন ধরেছে। তারাছা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান উথোয়াই চিং মারমা,তিন্দুর ইউপি চেয়ারম্যান মংগ্রু মারমা এবং বলিপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান জিয়া অং মারমা বলেন, নদীর ভাংগন রোধে ব্যবস্থা নিতে হবে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যেই। না হয় চলতি বর্ষাতেও শত শত পরিবার গৃহ ও ভুমি হারাবেন। তাঁরা জানান, তাদের এলাকায় গত ৫বছরে এক হাজারেরও বেশি পরিবার ভুমিসহ গৃহহারা হয়েছেন নদীর ব্যাপক ভাংগনে। পানি উন্নয়ন বোর্ড গুরুত্বপুর্র্ণ এলাকাসমুহে পাথরের স্পার বা বি ব্লক বসানোর মাধ্যমে নদীর ভাংগনরোধ করা সম্ভব বলেও তাঁরা জানিয়েছেন। তবে প্রশাসন থেকে এখনও পর্যন্ত নদী ভাংগণ রোধে কোন উদ্যাগই গ্রহণ করা হয়নি।