॥ বান্দরবান প্রতিনিধি ॥ পার্বত্য অঞ্চলে মা, নবজাতক ও শিশুর স্বাস্থ্য সেবা উন্নয়নে “মিডওয়ে হোমস” এর প্রকল্প উদ্বোধন করেছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরা। ইউএসওআইডি-ডিএফআইডি এনজিও হেলথ সার্ভিস ডেলিভারি প্রজেক্ট এর সহযোগিতায় স্থানীয় এনজিও গ্রীন হিল উক্ত প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে। গতকাল বুধবার বান্দরবান ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট এর অডিটোরিয়ামে গ্রীন হিলের আয়োজনে এ প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। এতে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরা।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ত্ব করেন ইউএসএআইডি-ডিএফআইডি, এনএইচএসডিপি এর চিফ অব পার্টি ড: হালিদা হানুম আখতার, অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরো উপস্থিত ছিলেন, এমসিএইচ পরিচালক ও লাইন ডাইরেক্টর (এমসিআরএএইচ), ডিজিএফপি ডা: মোহাম্মদ শরীফ, বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ক্যসাপ্রু, বান্দরবান জেলা সিভিল সার্জন ডা: উদয় শংকর চাকমা প্রমুখ। অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, খাগড়াছড়ি পানছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান, রাঙ্গামাটি কাপ্তাই উপজেলা চেয়ারম্যান, বান্দরবান সদর ও আলীকদম উপজেলা চেয়ারম্যান, তিন পার্বত্য জেলার ইউপি চেয়ারম্যান ও হেডম্যানবৃন্দ।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন, গ্রীন হিলের নির্বাহী পরিচালক মং থোয়াই চিং, বান্দরবান সদর উপজেলার চেয়ারম্যান আবদুল কুদ্দুছ, খাগড়াছড়ি পানছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান, সর্বতম চাকমা, রাঙ্গামাটি কাপ্তাই উপজেলা চেয়ারম্যান দিলদার হোসেন ও বান্দরবান গ্রীনহিল জেলা কমসুচি ব্যবস্থাপক মংশৈনুক মামা।
গ্রীন হিল সূত্রে জানা গেছে, “মিডওয়ে হোমস” প্রকল্পটি মূলত মা, নবজাতক ও শিশুদের স্বাস্থ্য সেবা উন্নয়নে তিন পার্বত্য জেলায় কাজ করবে। মাতৃ মৃত্যু হার নবজাতক মৃত্যুর হার কমানোর উদ্দেশ্যে দুর্গম এলাকায় যেখানে সরকারি স্বাস্থ্য বিভাগের লোকজন পৌছাতে পারে না সেখানে কাজ করবে। প্রকল্পের মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়েছে ১৪ মাস।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরা বলেন, পার্বত্য অঞ্চল এখনো পিছিয়ে আছে অন্যান্য জেলার চাইতে। তবে বর্তমান সরকার পার্বত্য অঞ্চলের উন্নয়নে ব্যাপারে বদ্ধপরিকার। পার্বত্য চুক্তি বা শান্তি চুক্তির অনেকগুলো আইন সংশোধন করা হয়েছে। ভূমিসহ তিনটি বিষয় ছাড়া অন্যান্য বিভাগ বা সংস্থাগুলো হস্তান্তর করা হয়েছে। বিভাগ বা সংস্থাগুলো পার্বত্য জেলা পরিষদের কাছে হস্তান্তর করা হলেও বেশিরভাগ বিভাগ ও সংস্থা লাইন ডিপারমেন্টের অধীনে থেকে গেছে। যার কারণে জেলা পরিষদ হস্তান্তরিত বিভাগে সেভাবে বাজেট প্রণয়ন করতে পারেনা। এই ব্যাপারে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও সরকার চিন্তাভাবনা করছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে জেলা পরিষদের কাছে হস্তান্তরিত বিভাগের বাজেট প্রদানের ব্যাপারে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর সঙ্গে কথা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, এছাড়া আগে পার্বত্য চট্টগ্রামে উন্নয়নের ব্যাপারে কম বাজেট উপস্থাপন করা হতো। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যেকোনো ফাইল পাসে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকেন। বড় কোনো বাজেট বাস্তবায়নেও প্রধানমন্ত্রী বিশেষ অগ্রাধিকার দিয়ে থাকেন। যার ভরসায় পার্বত্য চট্টগ্রামের উন্নয়নের ব্যাপারে ৫০ কোটি টাকার উপরে প্রকল্প তৈরি করার সাহস দেখাতে পারছে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
ইউএসএআইডি-ডিএফআইডি, এনএইচএসডিপি এর চিফ অব পার্টি ড: হালিদা হানুম আখতার অনুষ্ঠানে তার বক্তব্যে জানান, মিডওয়ে হোমস” সরকারি প্রতিষ্ঠান স্থান থেকে একটু দূরে মধ্যবর্তী স্থানে সেটেলাইট ক্লিনিক স্থাপন করে সেবা দেওয়া হবে।
উপজেলা চেয়ারম্যানরা তাদের বক্তব্যে জানান, এই ধরনের প্রকল্প স্বল্প সময়ে জন্য মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণের যচেষ্ট নয়। তারজন্য দীর্ঘ মেয়াদী প্রকল্পের প্রয়োজন রয়েছে। তৃণমূল পর্যায়ে হতদরিদ্র মানুষের মাঝে স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে তারাও সহযোগিতা দিবেন বলেন আশ^াস প্রদান করেন। সেবা দীর্ঘ মেয়াদী বা প্রকল্প মেয়াদ বৃদ্ধির জন্যও বিদেশী উন্নয়ন সংস্থার কাছে আবেদন করেন। চেয়ারম্যানদের আবেদনের প্রেক্ষিতে ড: হালিদা হানুম আখতার প্রকল্প মেয়াদ বৃদ্ধির বিষয়ে আশ^াস দেন।
এমসিএইচ পরিচালক ও লাইন ডাইরেক্টর (এমসিআরএএইচ), ডিজিএফপি ডা: মোহাম্মদ শরীফ বলেন, হত দরিদ্রদের মাঝে স্বাস্থ্য সেবা পৌছে দিতে সবার সহযোগিতা থাকা দরকার। সরকারের পাশাপাশি এনজিওরাও এগিয়ে এসেছে। সরকার ও এনজিওদের মধ্যে সমন্বয় থাকা দরকার। সরকার গ্রাম পর্যায়ে স্বাস্থ্য সেবা পৌছে দিতে ইউনিয়ন পর্যায়ে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র খোলেছে। সেবা নিশ্চিত করতে চিকিৎসক নিয়োগ করছে। অথচ নিয়োগপ্রাপ্ত চিকিৎসকেরা তাদের কমিটমেন্ট রাখছেন না। যার কারণে সেবা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, চাকরী সূত্রে তিন পার্বত্য জেলায় কাজ করার সুযোগ হয়েছে। আমি দেখেছি সমতল এলাকার চাইতে পার্বত্য অঞ্চলে এখনো হত দরিদ্র ও গ্রাম পর্যায়ে সেভাবে সেবা পৌছানো সম্ভব হচ্ছে না। এরজন্য সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সেবা নিশ্চিত করতে হবে।