ভারতের পোশাকখাতের উন্নয়নে বিশাল অঙ্কের প্রণোদনা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেনের বের হয়ে যাওয়া এবং জঙ্গি হামলার প্রেক্ষাপটে দেশের পোশাক শিল্পে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করছে সরকার।
এসব ঘটনায় সৃষ্ট সম্ভাব্য হুমকি ও চ্যালেঞ্জসমূহ যথাযথভাবে মোকাবেলা করা না গেলে ২০২১ সালের মধ্যে ৫০ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হবে বলে মত দিয়েছেন অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকরা।
দেশে জঙ্গি হামলা, ভারতের পোশাক খাতের উন্নয়নে প্রণোদনা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেনের বের হয়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে পোশাকখাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারত সরকার পোশাক শিল্পের উন্নয়ন, প্রসার ও ব্যাপকভাবে বিস্তৃত করতে ছয় হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি ঘোষণা করেছে। ২০১৮ সালের মধ্যে ৪ হাজার ৩শ’ কোটি মার্কিন ডলারের পোশাক রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।
২০০৩ সালে ভারত যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে জিএসপি সুবিধা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে ইইউইবিএ সুবিধা পেয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা বাতিল ও ভারতে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় আন্তর্জাতিক বাজার দখলের কৌশলে বাংলাদেশ কঠিন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হবে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের ৭০ শতাংশ ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে বিক্রি হয়। বছরে রপ্তানির ৩ বিলিয়ন ডলারের সিংহভাগই পোশাকখাতের। ইইউ থেকে বের হয়ে যাওয়া ব্রিটেনের বাজারে বাংলাদেশি পোশাক শুল্কমুক্ত সুবিধা না পেলে সেখানকার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে দেশের অর্থনীতিতে।
দেশের পোশাক শিল্পের জন্য আরেক হুমকি যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন ১২ জাতির ট্রান্স প্যাসিফিক পার্টনারশিপ (টিটিপি) জোট। এই জোটে সম্প্রতি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে বাংলাদেশের পোশাকখাতের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী ভিয়েতনাম।
ফলে ভিয়েতনাম তাদের তৈরি পোশাক সদস্য দেশগুলোতে শুল্কমুক্ত সুবিধায় বাজারজাত করতে পারবে। বাংলাদেশি পোশাক শুল্ক দিয়ে বাজারজাত করার ফলে বাজার সম্প্রসারণের বড় বাধা হিসেবে পরিণত হচ্ছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিসহ কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠ সংলগ্ন এলাকায় জঙ্গি হামলার পর পোশাকখাতের বিদেশি বায়ার ও পোশাক শিল্পে কর্মরত বিদেশি নাগরিকদের মধ্যে নিরাপত্তা নিয়ে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে। ফলে পণ্যের অর্ডার করতে বায়াররা বাংলাদেশে না এসে তৃতীয় কোনো দেশে বাংলাদেশি উদ্যোক্তাদের যাওয়ার অনুরোধ করছেন।
ইতিমধ্যে ক্রেতা প্রতিষ্ঠান ব্লেন্ড ইউনি ক্লথ বাংলাদেশে তাদের বায়ারদের ভ্রমণে সর্তকতা জারি করেছে। নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে ইংল্যান্ডের টেসকো ও ফ্রান্সের সিলিও বাংলাদেশ সফর স্থগিত করেছে। চলতি বছরের ১৮ জুলাই ঢাকায় ইউএস কটন কাউন্সিলের বৈঠক এবং সেপ্টেম্বরে এইচঅ্যান্ডএম-এর উদ্যোগে দেশি বিদেশিদের পোশাক প্রদর্শনী হওয়ার কথা থাকলেও তা বাতিল হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশি পোশাকের সিংহভাগ বাজার ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য ও কানাডা। সরকার এ খাতের প্রসারে লাতিন আমেরিকা, রাশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে নতুন নতুন বাজার অনুসন্ধান করছে। এমন সময়ে গুলশানে জঙ্গি হামলার ফলে বায়াররা বাংলাদেশে আসতে নিরাপত্তাহীনতার ভয়ে নতুন নতুন বাজার ও ব্যবসা সম্প্রসারণের কাজ বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
পোশাক কারখানায় ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি বিদেশি টেকনিশিয়ানরা স্থাপন ও মেরামত করেন। ফলে কারখানায় যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিয়ে বিদেশি টেকনিশিয়ানরা নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে আসতে গড়িমসি করতে পারেন। এতে প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন ব্যাহত হয়ে পণ্যের ডেলিভারি দিতে সমস্যা হতে পারে।
এসব চ্যালেঞ্জ ও হুমকি মোকাবেলা করতে না পারলে পোশাক রপ্তানি মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হবে। পোশাকখাত দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই এখাতে নেচিবাচক প্রভাব পড়লে সামগ্রিক অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলেও প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পখাতে প্রত্যক্ষভাবে অর্ধকোটি এবং পরোক্ষভাবে প্রায় দুই কোটি মানুষের কর্মসংস্থান। দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র, জঙ্গি হামলা, ভারতে পোশাকখাতের উন্নয়নে বিশেষ প্রণোদনা ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেনের বের হওয়ার কারণে নতুন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে যাচ্ছে দেশের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই খাতকে।