॥ রাহুল বড়–য়া ছোটন,বান্দরবান ॥ বান্দরবানে শুরু হয়েছে বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের প্রবারণা পুর্ণিমা পালন উৎসব। উৎসবকে ঘিরে বইছে পার্বত্য জেলায় আনন্দের বন্যা। বৌদ্ধ ,মুসলিম,সনাতন ধর্মালম্বীসহ সকল ক্ষুদ্র নৃগোষ্টিরা এই উৎসবে যোগ দিয়েছে। সন্ধ্যা থেকে বিভিন্ন বিহারে বিহারে চলছে মোমবাতি প্রজ্জলন, হাজার প্রদীপ জালানোসহ নানা আয়োজন। প্রতিটি বিহারে চলছে ধর্মীয় দেশনা। বৌদ্ধ ধর্মালম্বীরা নানা আনুষ্টানিকতায় এই উৎসবকে পালন করছে।
উৎসব উপলক্ষে গত রবিবার সন্ধ্যায় পুরান রাজবাড়ীর মাঠে ক্ষুদ্র নৃ গোষ্টির আয়োজনে মহাশোভাযাত্রা ও রথটানা এবং ফানুস বাতি উড়ানো হয়েছে। এসময় এক আলোচনা সভা অনুষ্টিত হয়। আলোচনা সভায় খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরীর সভাপতিত্বে এসময় অনুষ্টানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্রগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি।
এসময় অন্যান্যদের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন খাগড়াছড়ি ২৯৮ নং আসনের সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি, বান্দরবান ৬৯ পদাতিক বিগ্রেডের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ যুবায়ের সালেহীন পিএসসি এনডিইউ, জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বণিক, পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায়, পৌর মেয়র ইসলাম বেবী , বান্দরবানের জোন কমান্ডার গোলাম মহিউদ্দিন হায়দার পিএসসি, খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি রন বিক্রম ত্রিপুরাসহ সরকারী বেসরকারি কর্মকর্তারা।
এসময় আলোচনা সভায় খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে সকলেই নিজ নিজ ধর্ম পালন করতে পারছে। বর্তমান সরকারের কথা আর কাজে মিল রয়েছে তাইতো পার্বত্য এলাকাসহ বাংলাদেশের বেশিরভাগ এলাকাতে সকলের উৎসবে সকলে অংশগ্রহণ দেখা যায়। এসময় খাগড়াছড়ি ২৯৮ নং আসনের সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা বক্তব্য দিতে গিয়ে বলেন, প্রবারণা পূর্ণিমা এখন আর বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের একার উৎসব নয়, জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকলের প্রাণের উৎসবে পরিণত হয়েছে এই প্রবারনা। এই সময় তিনি আরো বলেন, পার্বত্য এলাকার বীর, বীর বাহাদুরের একান্ত পরিশ্রমে পার্বত্য এলাকায় শান্তি বিরাজ করছে। পাঁচ পাঁচবার নির্বাচিত এই বীর জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ মোতাবেক পাহাড়ের উন্নয়নের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে। এই বীরের বাহাদুরীর জন্য আজ পাহাড়ের প্রতিটি মানুষ সুঃখে শান্তিতে বসবাস করতে পারছে।
এসময় অনুষ্টানে প্রধান অতিথি পার্বত্য চট্রগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি বলেন, প্রবারণার এই দিনে পার্বত্য জেলার সকল গুনীজনদের একসাথে পেয়ে আমরা ধন্য। ধর্ম যার যার কিন্তু উৎসব সকলের তাইতো বার বার প্রমান হয় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক উজ্জল দৃষ্টান্ত বাংলাদেশ, সকল ধর্ম বর্ণের মানুষ একে অন্যের উৎসবে অংশ নিয়ে সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন। এই সরকারের আমলে সকলেই সুঃখী। মুসলিমদের কোরবানীর ঈদ কাটতে না কাটতেই সনাতন ধর্মালম্বীদের দূর্গা পূজা আর তার রেশ পেরুতে না পেরুতেই বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের প্রবারণা সব মিলিয়ে একই আত্মায় সকলে আমরা মিলিত। একে অন্যের সুখে ও বিপদে মিলে মিশে কাজ করে যাব, জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকলের উৎসবে অংশ নেব। আলোচনা সভা শেষে পুরান রাজবাড়ীর মাঠ থেকে ফানুস বাতি উড়ানো শুরু হয়।
এসময় অসংখ্য ফানুস বাতির আলোতে আলোকিত হয় পুরো পার্বত্য জেলা। একে একে ফানুস উড়তে উড়তে পাহাড়ের পরিবেশ আরো সুন্দর হয়ে ওঠে। শেষে মহারথ টানা হয়। মহারথ নিয়ে বৌদ্ধ ধর্মালম্বীরা সবাই অনুষ্টানস্থল থেকে রাজগুরু বিহারে আসে। সেখানে বৌদ্ধ ধর্মালম্বী নারী পুরুষেরা রথকে পুজা করে ও ভগবান বুদ্বের উদ্যেশে অর্থ, ফুল, মোম ও নানান সামগ্রী প্রদান করে। সোমবার মধ্যরাতে সাংগু নদীতে রথ বিসর্জনের মধ্য দিয়ে এই জাকজমক উৎসবের শেষ হবে।