বিমসটেক এফটিএ বাস্তবায়নে জোর শেখ হাসিনার
ভারতের গোয়ায় ব্রিকস-বিমসটেক আউটরিচ সামিটের আগে রোববার বিকালে বিমসটেক নেতাদের রিট্রিটে অংশ নিয়ে এ আহ্বান জানান তিনি।
বিমসটেক মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল গঠনের আলোচনা শুরুর পর একযুগ পেরিয়ে গেলেও চুক্তি চূড়ান্ত না হওয়ার বিষয়টি এ অঞ্চলের নেতাদের আন্তরিকতাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, “এফটিএ বাস্তবায়নের পক্ষে আমাদের রাজনৈতিক সদিচ্ছা পুনর্ব্যক্ত করতে হবে। এটা আমাদের আন্তঃআঞ্চলিক বাণিজ্য বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে এবং বিমসটেকের কার্যক্রম ও কর্মসূচিগুলো জোরদার করবে।
আগামী বছর বিসমটেকের ২০তম বর্ষপূর্তির সময় এফটিএ সংক্রান্ত চারটি চুক্তি গ্রহণের জন্য লক্ষ্য স্থির করার আহ্বান জানান তিনি।
গোয়ার লিলা হোটেলে এই রিট্রিটের আগে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বিসমটেকভুক্ত দেশগুলোর নেতাদের স্বাগত জানান। অনুষ্ঠানস্থলের বাইরে একে একে সকলের সঙ্গে তিনি করমর্দন করেন এবং ছবি তোলেন। এরপর সবাই মিলে গ্রুপ ফটোসেশন হয়।
বিসটেক রিট্রিটের আগে এই জোটের নেতাদের সম্মানে গোয়ার মুখ্যমন্ত্রী লক্ষ্মীকান্ত পারসেকারের দেওয়া মধ্যাহ্ন ভোজে অংশ নেন শেখ হাসিনা।
তার প্রেস সচিব ইহসানুল করিম জানান, বিমসটেকভুক্ত দেশগুলোর নেতারা মধ্যাহ্নভোজের সময় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
বিমসটেকের যাত্রা শুরুর পর গত প্রায় ২০ বছরে দুটি অঞ্চলের মধ্যে সংযোগ স্থাপনের কাজে অগ্রগতি খুব ধীরে হলেও সেই সংযোগের ভিত্তি দেওয়ার কাজ এখন শেষ হয়েছে বলে মনে করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “এখন আমাদের যুক্ত হওয়ার প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে হবে।”
বিমসেটক অঞ্চলের মানুষের জীবন ও জীবনযাত্রার মানোন্ননে ‘আঞ্চলিক প্রকল্প’ তৈরির প্রস্তাব দিয়ে এ জোটের নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “এতে বিমসটেক যেমন জনগণের সঙ্গে আরও সম্পৃক্ত হবে, সংগঠন আরও স্থিতিশীল ও দৃশ্যমান হবে।”
বিমসটেককে আরও কার্যকর ও ফলপ্রসূ করতে নেতাদের প্রত্যাশার পুনর্মূল্যায়নের সময় এসেছে বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা।
আগামী পাঁচ বছরে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, জ্বালানি, আঞ্চলিক সংযোগ ও সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধের মতো প্রধান ক্ষেত্রগুলোতে নজর দিতে বিমসটেক নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, সহযোগিতার প্রধান ক্ষেত্রগুলোতে নিয়মিত মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক হলে তাতে কাজে গতি আসবে।
সড়কপথে যোগাযোগ বাড়াতে বিমসটেক ওয়ার্কিং গ্রুপ ইতোমধ্যে আলোচনা শুরু করেছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সংযোগ বাড়াতে আমরা এখন উপকূলীয় জাহাজ চলাচল চুক্তি করার কথা বিবেচনা করতে পারি।
“এখন আমরা চাই, উন্নততর উপ-আঞ্চলিক গ্রিড সংযোগ এবং জ্বালানি বাণিজ্যের বিষয়ে সমঝোতা চুক্তি ও তার বাস্তবায়ন দ্রুততর হবে।”
সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদকে পরাজিত করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, সন্ত্রাসবাদ ও সহিংস উগ্রবাদ মোকাবেলায় বিমসটেকের মধ্যে সহযোগিতা জোরদারে আমরা সক্ষম হব।”
থাইল্যান্ড, মিয়ানমার, বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, নেপাল এবং শ্রীলঙ্কাকে নিয়ে ১৯৯৭ সালে বে অফ বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি সেক্টোরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কোঅপারেশন- বিমসটেক গঠিত হয়।
পরে ২০০৪ সালে দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়া ও দক্ষিণ এশিয়ার সাতটি দেশ নিজেদের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল গড়ে তোলার বিষয়ে একমত হয়।
তবে এ ধরনের অঞ্চল গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় আইন ও নীতি এখনো চূড়ান্ত না হওয়ায় সেই উদ্যোগ এখনো আলোর মুখ দেখেনি।
বিমসটেকের তৃতীয় শীর্ষ সম্মেলন হয় ২০১৪ সালে মিয়ানমারের রাজধানী নে পি দো তে। ওই সম্মেলনে সদস্য দেশগুলো পারস্পরিক সহযোগিতা ও উন্নয়নের ১৪টি ক্ষেত্র চিহ্নিত করে।
এছাড়া প্রায় দুই বছর আগে বাংলাদেশের প্রস্তাব অনুযায়ী ঢাকার গুলশানে বিমসটেকের স্থায়ী সচিবালয় যাত্রা শুরু করে।
শনিবার গোয়ায় শুরু হওয়া অষ্টম ব্রিকস সম্মেলনে অংশ নেন এই জোটের সদস্য দেশ রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট মিশেল টেমের, দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
আর বিসমটেকভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়াও ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগে, নেপালের প্রধানমন্ত্রী পুষ্প কমল দহল, শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনা, থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী প্রায়ুথ চান-ওচা, আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ গানি, মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ ইয়ামিন ও মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রী অং সান সু চি আউটরিচ সামিটে অংশ নিচ্ছেন।