মণ্ডপে মণ্ডপে এ উৎসবের সূচনা হয়েছিল দশ দিন আগে, মহালয়ার মধ্য দিয়ে। মঙ্গলবার সকালে বিজয়া দশমীতে ‘বিহিত পূজা’ আর ‘দর্পণ বিসর্জনে’ দুর্গা পূজার শাস্ত্রীয় সমাপ্তি হয়। বিকালে হয় প্রতিমা বিসর্জন।
সনাতন ধর্মের বিশ্বাস অনুযায়ী, মহালয়ার দিন ‘কন্যারূপে’ ধরায় আসেন দশভূজা দেবী; বিসর্জনের মধ্য দিয়ে তাকে এক বছরের জন্য বিদায় জানানো হয়। তার এই ‘আগমন ও প্রস্থানের’ মাঝে আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী থেকে দশমী তিথি পর্যন্ত পাঁচ দিন চলে দুর্গোৎসব।
ঢাকার ওয়াইজঘাটে বিকাল ৪টা ২০ মিনিটে টিকাটুলীর ভোলানাথ গিরি আশ্রম পূজামণ্ডপের প্রতিমা বিসর্জনে শুরু হয় রাজধানীতে দেবীকে বিদায় জানানোর আনুষ্ঠানিকতা।
বিভিন্ন ঘাটে রাত ৯টা পর্যন্ত রাজধানীর ২২৯টি মণ্ডপের প্রতিমা একে একে বিসর্জন দেওয়া হবে বলে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
কক্সবাজার ও চট্টগ্রামে প্রতিমা বিসর্জন হচ্ছে সাগর সৈকতে। একইভাবে সারা দেশে বিভিন্ন নদী ও জলাশয়ে চলছে বিসর্জনের পর্ব।
হিন্দু ধর্মের বিশ্বাস অনুযায়ী, মহালয়ার দিন ‘কন্যারূপে’ ধরায় আসেন দুর্গা; বিসর্জনের মধ্য দিয়ে তাকে এক বছরের জন্য বিদায় জানানো হয়। তার এই ‘আগমন ও প্রস্থানের’ মাঝে আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী থেকে দশমী তিথি পর্যন্ত পাঁচ দিন চলে দুর্গোৎসব।
ঢাকেশ্বরী মন্দিরের প্রধান পুরোহিত রঞ্জিত চক্রবর্তী বলেন, পঞ্জিকা অনুযায়ী দেবী দুর্গা এবার ঘোড়ায় চড়ে এসেছেন, যাবেনও ঘোড়ায় চড়ে। দেবীর এমন গমন-আগমনে সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংসারিক ক্ষেত্রে অস্থিরতার ইংগিত দেয়। রাজনৈতিক উত্থান-পতন, সামাজিক স্তরে বিশৃঙ্খলা, অরাজকতা, গৃহযুদ্ধ, দুর্ঘটনা, অপমৃত্যু বাড়ে।
ঢাকেশ্বরী মন্দিরের পুরোহিত নারায়ণ চক্রবর্তী জানান, বিজয়া দশমীর আনুষ্ঠানিকতায় মঙ্গলবার সকাল ৭টা ৩১ মিনিটে হয় দশমী বিহিত পূজা। ষোড়শপ্রচার পূজার পাশাপাশি দেবী প্রতিমার হাতে জরা, পান, শাপলা ডালা দিয়ে আরাধনা করা হয়।
সবশেষে দর্পণ বিসর্জনের সময় প্রতিমার সামনে একটি আয়না রেখে তাতে দেবীকে দেখে তার কাছ থেকে সাময়িক সময়ের জন্য বিদায় নেন ভক্তরা। মন্ত্র উচ্চারণের মাধ্যমে প্রতিমা থেকে ঘটে এবং ঘট থেকে আবার ভক্তের হৃদয়ে ‘মাকে’ নিয়ে আসাকে বিসর্জন বলে।
বিসর্জনের আগে সকাল থেকে ঢাকার মন্দিরে মন্দিরে চলে সিঁদুর খেলা আর আনন্দ উৎসব। দুপুরে নগরীর বিভিন্ন স্থান থেকে ট্রাকে করে প্রতিমা এনে জড়ো করা হয় পলাশীর মোড় ও ঢাকেশ্বরী পূজা মণ্ডপ এলাকায়।
এরপর সেখান থেকে ক্রমিক নম্বর নিয়ে শঙ্খ আর উলুধ্বনি, খোল-করতাল-ঢাক-ঢোলের সনাতনি বাদ্যের সঙ্গে আধুনিক উচ্চস্বরের সাউন্ড সিস্টেমে দেবী বন্দনার গানে গানে শোভাযাত্রা করেন ভক্তরা।
স্বল্পগতিতে চলা ট্রাক ও পিকআপ ভ্যানে চড়া পূজারিদের পাশাপাশি অনেকে পায়ে হেঁটে শোভাযাত্রায় অংশ নেন। প্রতিমা ঘাটে নেওয়ার পর ভক্তকূল শেষবারের মতো ধূপধুনো নিয়ে আরতিতে মেতে ওঠেন। শেষে পুরোহিতের মন্ত্রপাঠের মধ্য দিয়ে দেবীকে নৌকায় তুলে বিসর্জন দেওয়া হয়।
ঢাকেশ্বরী মন্দিরের পুরোহিত নারায়ণ বলেন, বিসর্জন শেষে মন্দিরে শান্তির জল নিয়ে আসা হয়; সন্ধ্যায় মণ্ডপে করা হয় আশীর্বাদ।
এ বিসর্জনকে কেন্দ্র কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা বা দুর্ঘটনা যাতে না ঘটে প্রশাসন ও পুলিশের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
কোতোয়ালী থানার ওসি মোহাম্মদ আবুল হাছান বলেন, ঢাকা মহানগরের প্রায় শতাধিক মণ্ডপের প্রতিমা ওয়াইজঘাটের বিনাস্মৃতি স্নানঘাটে বিসর্জন দেওয়া হয় প্রতিবছর।
“বিসর্জনের কর্মসূচি মাথায় রেখে পুলিশের পক্ষ থেকে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পুলিশ ছাড়াও র্যাব, নৌ পুলিশ, কোস্টগার্ড ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা রয়েছেন।”
নদীতে ফায়ার সার্ভিসের একটি বিশেষ টহল ইউনিট ‘অগ্নি শাসক’ নামের একটি নৌযান নিয়ে ঘাটে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। ভাসমান যান দিয়ে টহলের ব্যবস্থা রয়েছে, যাতে যে কোনো দুর্ঘটনায় তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া যায়।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক তাপস কুমার পাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে বলেন, “এ পর্যন্ত কোনো ধরনের বিশৃ্খলা ঘটেনি, সরকার ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগিতা দেওয়া হয়েছে।”
সনাতন ধর্মের বিশ্বাস অনুযায়ী, এক বছর পর নতুন শরতে আবার আসবেন মর্ত্যলোকে আসবেন ‘দুর্গতিনাশিনী দেবী’ দুর্গা।