॥ মোঃ আবু তৈয়ব/মোঃ জুয়েল ॥ সন্ত্রাসীদের চাপের মুখে বয়কট থাকা রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার সাজেকের ঐতিহ্যবাহী বাঘাইহাট বাজারটি দীর্ঘ ছয় বছর পর রবিবার থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে হাট বাজার বসতে শুরু হয়েছে। রবিবার হাটের দিন ঘোষনা করে বাঘাইছড়ি উপজেলা ও পার্শ্ববর্তী দিঘীনালা উপজেলার হাটবাজারগুলোতে বাঘাইহাট বাজার পরিচালনা কমিটির পক্ষ থেকে মাইকিং করায় ব্যাপক উৎসাহের মধ্যে দিয়ে সকল বাঁধা উপেক্ষা করে রবিবার হাটের দিন পাহাড়ী ও বাঙ্গালীরা সকাল থেকে হাট বাজারে আসতে দেখা গেছে। রবিবার সকালে সাজেকের ডানেবাইবা ছড়া থেকে বাঘাইহাট বাজারে আসা মনিময় চাকমা জানান, এতবছর পর বাঘাইহাট বাজারটি চালু দেখে আমার খুব ভালো লাগছে যা ভাষায় প্রকাশ করতে পারছিনা, এই বাজারটি বন্ধ থাকায় আমরা অনেক কষ্ট পেয়েছি বাধ্য হয়ে অন্য বাজারে গিয়ে বাজার করতে হয়েছে আমাদের। তাই আজকে বাজারটি চালু হওয়ায় আমাদের মত কেটে খাওয়া মানুষের অনেক উপকার হয়েছে। এই বিষয়ে বাঘাইহাট বাজার পরিচালনা কমিটির সভাপতি ডা. নাজিম উদ্দিন জানান, দীর্ঘ ছয় বছর ধরে আমরা প্রশাসন হতে শুরু করে জনপ্রতিনিধিদের সাথে নিয়ে অনেক চেষ্টা করেছি বাঘাইহাট বাজারটি আনুষ্টানিক ভাবে চালু করতে। তবে সন্ত্রাসীদের বাধাঁর মুখে তা সম্ভব হয়নি। কিন্তু গত ৩ মাস থেকে বাজার কমিটির উদ্যোগে সাজেক ইউপি চেয়ারম্যান ও সাজেকের সকল হ্যাডম্যান কার্বারী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সাথে নিয়ে বাঘাইহাট বাজারটি চালু করার ব্যাপারে বেশ কয়েকবার আলোচনা সভার আয়োজন করে। সর্বশেষ গত বুধবার সকলকে নিয়ে আলোচনা সভার মধ্যেদিয়ে রবিবার আনুষ্ঠানিক হাটবাজার ঘোষনা করা হয়। তার সুবাদে রবিবার হাটের দিন বাঘাইহাট বাজারে পাহাড়ী বাঙ্গালীর মিলন মেলা দেখা যায়, আশা করছি ধীরে ধীরে আগামীতে আরও এই সম্প্রীতির বন্ধন বাড়বে।
এবিষয়ে সাজেক ইউপি চেয়ারম্যান নেলশন চাকমা বলেন, আমার সাজেক ইউপি’র সকল সদস্যসহ সাজেকের সকল হ্যাডম্যান কার্বারী বাঘাইহাট বাজার কমিটি ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সাথে নিয়ে দীর্ঘদিনের সাজেকের এই সমস্যা থেকে উত্তোরণের যে সুবাতাস বইছে তা যেন আমরা ধরে রাখতে পারি সে জন্য আমি সকলের সহযোগিতা কামনা করছি। আমি আজ সকালে নিজেই বাঘাইহাট বাজার পরিদর্শন করেছি, বাজারে বিভিন্ন ধরনের ভাসমান ব্যবসায়ী এসেছে এবং আশেপাশের গ্রাম থেকেও লোকজন এসে কেনাকাটা করছে দেখে আমার খুব ভালো লাগলো। আশা করছি পর্যায়ক্রমে দুরদুরান্ত থেকে লোকজন আসবে এবং বাজারটি আরও সচল হয়ে উঠবে।
উল্লেখ্য, ১৬ জানুয়ারী ২০১০ইং বাঘাইহাট বাজারটি আঞ্চলিক পাহাড়ি সংগঠন ইউপিডিএফ বয়কটের ঘোষনা করেছিল। দীর্ঘ ছয় বছরেও চালু করা যায়নি পার্বত্য এলাকার এই ঐতিহ্যবাহী বাঘইহাট বাজারটি। বিগত ৬-৭ বছর ধরে অচল হয়ে পরেছিল এ বাজারটি। যে বাজারে প্রতি সপ্তাহে হাটের দিন পাহাড়ি-বাঙালির জমজমাট মিলন মেলা হতো, সে বাজার এখন নিঃপ্রাণ থেকে আবার সচল হয়ে উঠছে।
জানা গেছে, ২০১০ সালে বাঘাইছড়ির গংগারামমুখ এলাকায় অনাকাঙ্খিত পাহাড়ি-বাঙালীদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ঘটনার পর বাঘাইহাট বাজার বয়কট করার ঘোষণা দেয় আঞ্চলিক পাহাড়ি সংগঠন ইউপিডিএফ। তখন থেকে স্থবির হয়ে পরে ছিল বাঘাইহাট বাজারটি। আর সে খেসারত দিতে হয়েছিল সাধারণ মানুষ ও ব্যাবসায়ীদের। বাঘাইহাট বাজারটি বয়কট বাতিল করার জন্য স্থানীয় প্রশাসন ও পাহাড়ি সংগঠগুলোর নেতাদের সাথে বার বার বৈঠক করলেও তখন কোন লাভ হয়নি বলে জানা গেছে। তখন আঞ্চলিক সংগঠনের চাপে স্থানীয় পাহাড়ি চাষীরা বাজারে আসা ছেড়ে দিয়েছিল।