খাগড়াছড়িতে ৪টি আগ্নেয়াস্ত্রসহ ইউপিডিএফ নেতা উজ্জল স্মৃতি চাকমাসহ ৬জনকে আটক করেছে যৌথ বাহিনী
বিপুল পরিমাণ সামরিক সরঞ্জাম ও ধারালো অস্ত্রসহ ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট’র (ইউপিপিএফ) সামরিক শাখার প্রধান উজ্জল স্মৃতি চাকমাসহ আটক ৬ জন আটক যৌথ বাহিনীর। উজ্জল স্মৃতি চাকমা ইউপিডিএফ এর সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে খ্যাত।
রবিবার (১৩ নভেম্বর) দুপুরে খাগড়াছড়ি জেলা শহরের পেরাছড়ার হেডম্যান পাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। আটক অন্যরা হলো, রূপম চাকমা (২৫), রণি ত্রিপুরা (৩৬), সমাপন দেওয়ান (২৮), বাবুল মারমা (১৯) ও সন্ধিপন চাকমা (২০)।
খাগড়াছড়ি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তারেক মো: আব্দুল হান্নান জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে যৌথ বাহিনী দুপুর ১২টার দিকে হেডম্যান পাড়া এলাকায় ইউপিডিএফ আস্তানাটি ঘেরাও করে উজ্জল স্মৃতি চাকমাসহ ছয় জনকে আটক করা হয়। এ সময় আরও বেশ কয়েকজন পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।
পরে তাদের আস্তানা তল্লাসী করে একটি টুটু বোর রাইফেল, একটি পিস্তল, একটি দেশী বন্দুক, একটি পাইপগানসহ বিপুল পরিমাণ সামরিক পোশাক, ধারালো অস্ত্র, লিফলেট উদ্ধার হয়। উজ্জল স্মৃতি চাকমা ইউপিডিএফ’র সামরিক শাখার প্রধান বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তবে ইউপিডিএফ’র প্রচার ও প্রকাশনা শাখার প্রধান নিরণ চাকমা জানান, উজ্জল স্মৃতি ইউপিডিএফ খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সমন্বয়ক ও কেন্দ্রীয় নেতা।এ সংবাদ লেখা পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে যৌথ বাহিনীর অভিযান।
এদিকে স্থানীয় উজ্জলা দেবী চাকমা জানিয়েছেন বাড়ীটি তার ছিল। ইউপিডিএফ’র সন্ত্রাসীরা কয়েক বছর আগে তাকে জোরপূর্বক উচ্ছেদ করে এই বাড়িটি দখল করে নেয় বলে জানিয়েছেন।
এদিকে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)-এর খাগড়াছড়ি জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান সংগঠক প্রদীপন খীসা সংবাদ মাধ্যমে প্রদত্ত এক বিবৃতিতে জানান, রবিবার, ১৩ নভেম্বর দুপুরে খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার পেরাছড়া ইউনিয়নের গিরিফুল এলাকা থেকে সেনাবাহিনী কর্তৃক ইউপিডিএফের কেন্দ্রীয় সদস্য ও খাগড়াছড়ি জেলা সমন্বয়ক উজ্জ্বল স্মৃতি চাকমাসহ ৬ নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার ও বিকালে শহরের অনন্ত মাষ্টার পাড়ায় একটি বাসায় তালা ভেঙে তল্লাশি ও জিনিসপত্র লুটের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন এবং গ্রেফতারকৃতদের অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তির দাবি করেছেন।
বিবৃতিতে তিনি কোন প্রকার ওয়ারেন্ট ছাড়াই অন্যায়ভাবে নেতা-কর্মী গ্রেফতারের ঘটনাকে ন্যাক্কারজনক উল্লেখ করে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে নিপীড়িত জনগণের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনকে দমনের লক্ষ্যে সরকার সেনাবাহিনীকে লেলিয়ে দিয়ে পরিকল্পিতভাবে ইউপিডিএফ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের অন্যায়ভাবে গ্রেফতার, নির্যাতন ও হয়রানি করছে। এর মাধ্যমে সরকারের চরম ফ্যাসিস্ট চরিত্রই উন্মোচিত হয়ে পড়ছে।
অন্যায় ধরপাকড় ও দমন-পীড়ন চালিয়ে ইউপিডিএফের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলন স্তব্দ করা যাবে না মন্তব্য করে বিবৃতিতে তিনি বলেন, গঠনলগ্ন থেকে ইউপিডিএফ পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের ন্যায্য দাবি আদায়ের জন্য নানা ঘাত-প্রতিঘাত ও বাধা-বিপত্তি মোকাবিলা করে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। কোন অপশক্তিই ইউপিডিএফের এই আন্দোলনকে দমিয়ে রাখতে পারেনি, ভবিষ্যতেও পারবে না। সরকার যদি জোরজবরদস্তি করে ন্যায়সঙ্গত আন্দোলন দমনের চেষ্টা চালায় তাহলে উদ্ভুত সকল পরিস্থিতির জন্য সরকারকেই দায়ী থাকতে হবে।
বিবৃতিতে ইউপিডিএফ নেতা অবিলম্বে উজ্জ্বল স্মৃতি চাকমাসহ গ্রেফতারকৃত সকল নেতা-কর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তি, অন্যায় ধরপাকড় ও আন্দোলন দমনের ষড়যন্ত্র বন্ধের দাবি জানান। অন্যথায় পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণকে সাথে নিয়ে ইউপিডিএফ কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করতে বাধ্য হবে বলে হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করেন।