প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ মুক্ত শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে সমাজের সর্বস্তরের জনগণকে এর বিরুদ্ধে জনমত সৃষ্টির আহবান জানিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন,‘ এই দেশ হবে দক্ষিণ এশিয়ার শান্তিপূর্ণ দেশ। কাজেই সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ মোকাবেলা করার জন্য সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষকে আমি আহবান জানাব।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের মসজিদের ইমাম, শিক্ষক, অভিভাবক, সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক কর্মী, বিভিন্ন জনপ্রতিনিধি, বিভিন্ন পেশাজীবী এবং আশাদের প্রশাসন ও আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর যারা রয়েছেন- সবাইকে সম্মিলিতভাবে এই সন্ত্রসবাদ-জঙ্গিবাদ এবং মাদকের বিরুদ্ধে জনমত সৃষ্টি করতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মানুষকে বোঝাতে হবে- সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের পথ শান্তির পথ না, ইসলামের পথ না, এই পথ কখনও মানুষের কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে চট্টগ্রাম বিভাগের ১১টি জেলার বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষের সঙ্গে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ বিরোধী এবং উন্নয়ন বিষয়ত মতবিনিময় অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন।
তিনি এদিন ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানেও যোগ দেন এবং আরভি মিন সন্ধ্যানী নামক একটি জরিপ জাহাজের কার্যক্রম উদ্বোধন করেন।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, শিক্ষা মন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, তথ্য মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, রেলপথ বিষয়ক মন্ত্রী মুজিবুল হক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, ড. মহিউদ্দিন খান আলমগীর এমপি, ডা. দিপু মনি এমপি এবং এম এ লতিফ এমপি গণভবনে উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক (প্রশাসন) কবির বিন আনোয়ার ভিডিও কনফারেন্সটি সঞ্চালনা করেন।
সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় মসজিদের ইমাম, শিক্ষক, অভিভাবক, সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক কর্মী, প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা সংস্থাসহ সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “সকলকে সম্মিলিতভাবে জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে জনমত সৃষ্টি করতে হবে। মানুষকে বোঝাতে হবে- এই পথ শান্তির পথ না, এই পথ নিরাপদ পথ না। এই পথ কখনও মানুষের কল্যাণ বয়ে আনে না।”
“আমরা কল্যাণের পথে থাকতে চাই। জনগণের সার্বিক উন্নয়ন করা- এটাই আমাদের লক্ষ্য। সে লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করতে চাই।”
চট্টগ্রাম বিভাগের মানুষদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আপনাদের প্রতি আহ্বান থাকবে এটাই, সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আমাদের দেশকে যেন শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে পারি।”
প্রধানমন্ত্রী রাঙ্গামাটির কাঠমিস্ত্রি, হেডম্যান, স্কুল ছাত্রী, কক্সবাজারের শুঁটকি ব্যবসায়ী ও লবণ চাষী, কুমিল্লার কৃষক, মৃৎশিল্পী, চাঁদপুরের সাংবাদিক ও লবণ চাষী এবং চট্টগ্রামের তথ্যপ্রযুক্তি উদ্যোক্তা, রিকশাচালক ও শ্রমিদের সঙ্গে কথা বলেন।
চট্টগ্রামের লালদিঘী ময়দান থেকে একজন রিকশাচালক প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “আমি ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা শুনছি। কিন্তু, আজকে আপনার সাথে কথা বলতে পাইরা বুঝলাম ডিজিটাল বাংলাদেশ কী।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বিজয়ী জাতি হিসেবে বিশ্ব সভায় মাথা উচু করে চলতে চাই। আমরা সেভাবেই মাথা উঁচু করে চলব। সেইভাবে আমরা বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে চাই এবং আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে বাংলাদেশের উন্নতি হয়। বাংলাদেশ এগিয়ে চলে। বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। কারণ আমরা এদেশকে ভালোবাসি। দেশের মানুষকে ভালোবাসি। দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করার ব্রত নিয়েই আমরা রাজনীতি করি। নিজের ভাগ্য গড়া না, মানুষের ভাগ্য গড়া। ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্ম একটি সুন্দর দেশ রেখে যাওয়া- এটাই আমাদের লক্ষ্য।
তিনি বলেন, আমরা কল্যাণের পথে থাকতে চাই। জনগণের সার্বিক কল্যাণ করাই আমাদের লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করতে চাই। তাই সকলের প্রতি আমার আহবান থাকবে- সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আমরা আমাদের দেশকে যেন শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে পারি। কারণ ইসলাম শান্তির ধর্ম, ইসলাম সবসময় শান্তির কথাই বলেছে অথচ কিছু লোরেকর কারণে খুন খারাপি করে এই ধর্মকে হেয় প্রতিপন্ন করার অপচেষ্টা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, আমাদের ধর্মে যে শান্তির কথা বলা রয়েছে, আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা:) যে শান্তির কথাগুলো বলেছেন- আমি মসজিদের ইমাম সাহেবদের বলব জুমা’র নামাজের খুৎবায় যেন সেগুলো প্রচার করেন। কেউ যেন আর বিপথে না যায় অভিভাবকদের তাদের সন্তানদের প্রতি লক্ষ্য রাখার আহবান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অভিভাবকদের তাদের সন্তানদের সঙ্গে এমন সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে যাতে করে সন্তানরা খোলামনে তাদের মনের কথাগুলো অভিভাবকদের বলতে পারে।
বিদ্যালয়, কলেজ, বিশ্বাবিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রতিও তিনি তাদের ছাত্র-ছাত্রীদের দিকে নজর দেয়ার এবং কেউ যেন জঙ্গিবাদ বা মাদকের সাখে সম্পৃক্ত না হয় সেদিবে খেয়াল রাখার আহবান জানিয়ে বলেন, সকলে এভাবে সম্মিলিতভাবে উদ্যোগ নিলেই সন্ত্রাস দমনে আমরা যে সফলতা অর্জন করেছি তাকে আরো এগিয়ে নিতে সক্ষম হব।
বাংলাদেশে সামরিক আইন জারি ও সন্ত্রাসবাদের নেপথ্য প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সন্ত্রাসী ও খুনীদের পুরস্কৃত করেছে সামরিক স্বৈরশাসক জেনারেল জিয়াউর রহমান।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর হত্যার পরে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীরা জনগণের ওপর নিপীড়ন শুরু করে ও সন্ত্রাসের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করে এবং জিয়ার পৃষ্ঠপোষকতায় শাস্তির মুখোমুখী হওয়ার বদলে তারা পুরস্কৃত হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, জেনারেল জিয়া যুদ্ধাপরাধীদের জেল থেকে মুক্ত করে পুনর্বাসিত করে এবং তাদের মন্ত্রী ও এমপি বানায়।
তিনি বলেন, ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে খন্দকার মোস্তাক এবং জেনারেল জিয়া বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে। অবৈধভাবে মোস্তাক রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর জিয়াকে সেনাবাহিনী প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেয় এবং পরে জিয়া নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করে ক্ষমতা দখল করে।
পরে দেশ অন্ধকারে নিমজ্জিত হয় উল্লেখ করে তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, যেখানে হত্যাকারীদের বিচার হয় না এবং পরাজিত শক্তি ক্ষমতায় থাকে সেখানে উন্নয়ন কিভাবে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পরে ক্ষমতা দখলকারী সরকারগুলো নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনে পারদর্শী ছিল এবং তারা হত্যা, লুন্ঠন ও অর্থ পাচার করেছে, জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি এবং দেশের উন্নয়ন হয়নি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট ২০০১ সালে যখন ক্ষমতায় আসে তখন সন্ত্রাসীদের লেলিয়ে দেয়ার মাধ্যমে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। হাজার হাজার আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীকে হত্যা ও নির্যাতন করা হয় এবং বিএনপি-জামায়াতের ক্যাডারদের হত্যা ও নির্যাতনের মুখে দেশ ত্যাগ করে।
ছয় বছরের অজুফাসহ বহু নারী তাদের দ্বারা ধর্ষণের শিকার হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাদের একমাত্র অপরাধ ছিল ‘নৌকায়’ ভোট দেয়া।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান কেউ তাদের অত্যাচার ও নির্যাতন থেকে রেহাই পায়নি। আওয়ামী লীগ নেতা ও কর্মীদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতনের পাশাপাশি তারা ধাপে ধাপে সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করে।
তারা ভয়ঙ্কর বাংলা ভাইকে সৃষ্টি করে এবং বিএনপি’র মন্ত্রীরা তাকে পৃষ্ঠপোষকতা দেয়।
২০১৪ সালে সাধারণ নির্বাচনের আগে এবং ২০১৫ সালের প্রথম তিন মাসে বিএনপি-জামায়াত জোটের অরাজকতার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট নির্বাচন বানচাল করার জন্য পাকিস্তানী দখলদার বাহিনীর মতো গণহত্যা চালায়।
তিনি বলেন, তারা আন্দোলনের নামে ১৫০ জনের বেশি নিরীহ লোককে এবং আইন-শৃঙ্খলা সংস্থার ২০ সদস্যকে হত্যা করেছে। ‘তারা আগুনে ৫০৮ জনকে দগ্ধ ও ৬৯৮ জনকে আহত করেছে, মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডা, চার্চ, বিদ্যুৎ কেন্দ্র, প্রাইমারি স্কুল তাদের অগ্নিসংযোগ থেকে রক্ষা পায়নি।