দেশের মানুষ সানন্দে আমাদের ডাকে: হাসিনা
৩ নভেম্বর জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের স্মরণ সভায় বক্তব্যে দেশের উন্নয়নের জন্য সরকারের ধারাবাহিকতার কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
সরকারের ধারাবাহিকতা আছে বলে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অর্জন করে গেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের প্রসঙ্গ তুলে শেখ হাসিনা বলেন, “এখন কেউ অপবাদ দিলে আর মাথা পেতে নিই না। চ্যালেঞ্জ হিসাবে নিই।”
বিশ্ব ব্যাংক দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগে পদ্মা সেতুর অর্থায়ন আটকালে টানাপড়েনের এক পর্যায়ে নিজস্ব অর্থায়নে এই সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, “এই ক্ষমতা বাংলাদেশ অর্জন করেছে। এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে।”
২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগ টানা দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করেছে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির ভোটে জয়ী হয়ে, যে ভোটে অংশ নেয়নি বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট। এছাড়া ওই নির্বাচনে অর্ধেকের বেশি আসনে বিনা ভোটে সাংসদ নির্বাচিত হওয়ায় এর গ্রহণযোগ্য নিয়ে প্রশ্ন তোলে অনেকে।
ওই ভোটে বিএনপির অংশ না নেওয়া তাদের ‘রাজনৈতিক ভুল সিদ্ধান্ত’ বলে মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা।
“রাজনীতিতে ভুল সিদ্ধান্ত নিলে ভুলের খেসারত দিতে হয়,” বলেন তিনি।
ওই নির্বাচন ঠেকাতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের আন্দোলনে সহিংসতায় প্রাণহানির প্রসঙ্গ তুলে শেখ হাসিনা বলেন, “ভবিষ্যতে জনগণই তাদের ঠেকাবে, তাদের প্রতিহত করবে।”
অন্যদিকে আওয়াম লীগের প্রতি মানুষের সমর্থন থাকার কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
“বাংলাদেশের মানুষ সানন্দে আমাদের ডাকে,” বলেন তিনি।
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার ভিভিতে নির্বাচন কমিশন গঠনে বিএনপির দাবি নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “তাদের নেতা জিয়াউর রহমান এবং খালেদা জিয়া কী করেছে? আর তাদের দোসর এরশাদ?”
তিনি বলেন, “জিয়াউর রহমানের ক্ষমতা গ্রহণের পর প্রতি রাতে কারফিউ জারি করত। কী গণতন্ত্র দিয়েছিল জিয়াউর রহমান? তাহলে কি কারফিউ গণতন্ত্র দিয়েছিল?”
জিয়াউর রহমানের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা গ্রহণকে অবৈধ আখ্যায়িত করে শেখ হাসিনা বলেন, “সে অবৈধ ভাবে ক্ষমতায় বসে দল গঠন করেছিলো।
“অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীর হাতে গঠিত দল তো অবৈধই হয়।”
১৯৮৭ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে তিনি বলেন, “একজন সেনা কর্মকর্তা হিসাবে সে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করতে পারে না।”
জেল হত্যা নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “বাংলাদেশ যেন উঠে দাঁড়াতে না পারে সেজন্য জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়।”
১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর ৩ নভেম্বর তার ঘনিষ্ঠ চার সহকর্মী সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এম মনসুর আলী ও এ এইচ এম কামরুজ্জামানকে কারাগারে হত্যা করা হয়। রাষ্ট্রের হেফাজতে হত্যাকাণ্ডের এই ঘটনাটি ‘জেল হত্যা দিবস’ হিসেবে পালিত হয়ে আসছে বাংলাদেশে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার সঠিক ইতিহাস যেন সবাই জানতে পারে সেজন্য মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তিকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদের মেয়ে সংসদ সদস্য সিমিন হোসেন রিমি তার বাবার স্মৃতিচারণ করে পঁচাত্তরের ৩ নভেম্বরের আগে শেষবার দেখা করার কথা বলেন।
তিনি বলেন, “এক সপ্তাহ আগে আব্বার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম। আব্বা বললেন, ‘আমাদের আর বাঁচিয়ে রাখবে না। আমি গত রাতে মুজিব ভাইকে স্বপ্নে দেখেছি। মুজিব ভাই বলছেন, তাজউদ্দিন তোমাকে ছাড়া ভালো লাগে না। তুমি চলে এসো। ১৯৪৪ সাল থেকে দুজন একসাথে। তুমি চলে এসো’।”
তাজউদ্দিনকন্যা বলেন, “তার কাছে বঙ্গবন্ধুই ছিল বাংলাদেশ। মনে হচ্ছিল, তিনি তার পরম আশ্রয়ের কাছে ফিরে যেতে চাচ্ছেন।
“৫ নভেম্বর আমি আমার বাবাকে দেখি রক্তাক্ত একজন মানুষ। মাত্র ১৪ বছর বয়সে, আমি হঠাৎ করে অনেক বড় হয়ে যাই।”
ধানমন্ডির সাত মসজিদ রোডে তাজউদ্দিন আহমেদের বাসভবনের পেছনে এম মনসুর আলীর এক আত্মীয়ের বাড়িতে তার মৃতদেহ রাখা হয়েছিল।
সে কথা উল্লেখ করে রিমি বলেন, “আমি হেঁটে ওই বাসায় যাই। দেখি মনসুর চাচার সাদা কাফনের কাপড় রক্তে লাল হয়ে আছে। তার মুখ যখন খোলা হল, দেখি একটা চোখ খোলা।
“মনসুর চাচার ওই চোখটা বাংলাদেশের কাছে একটা প্রশ্নবোধক চিত্র।”
রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে স্মরণ সভায় অন্যদের মধ্যে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, তোফায়েল আহমদ ও সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, এম মনসুর আলীর সন্তান মোহাম্মদ নাসিম ও আবদুর রাজ্জাক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান, ঢাকা মহানগর (উত্তর) আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান, ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ বক্তব্য রাখেন।