॥ আমিনুল ইসলাম বাচ্চু ও রাহুল বড়–য়া ছোটন ॥ বান্দরবানে জেলা আইন শৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি বলেছেন, বান্দরবানের রিজার্ভ ফরেষ্ট থেকে প্রতিনিয়তই কাঠ চুরি হচ্ছে। এক শ্রেণীর কাঠ পাচারকারীরা এই ধরনের অপকর্মের সাথে জড়িত থাকলেও বন বিভাগের কর্মকর্তাগণ নির্বিকার হয়ে আছেন। সাম্প্রতিক সময়ে স্থানীয় সচেতন কিছু ব্যক্তির প্রতিরোধে রিজার্ভ ফরেষ্টের কাঠ কাটা বন্ধ করা সম্ভব হয়েছে। তিনি বলেন, জনরোষের কারণে বন বিভাগের লোকজন রিজার্ভ এলাকায় গিয়ে পাচারের অপেক্ষায় থাকা কিছু মূল্যবান কাঠ জব্দ করলেও জড়িত ব্যক্তিদের কাউকে সনাক্ত করতে পারেনি। তিনি দুঃখ করে বলেন, আজ ঘরের ইদুঁরই বেড়া কাটচ্ছে। বন বিভাগ ভক্ষকের কাজ করছে। বীর বাহাদুর বলেন, কাঠ পাচার প্রতিরোধে ইউপি চেয়ারম্যান, হেডম্যান, উপজেলা চেয়ারম্যানসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করতে হবে।
গতকাল বান্দরবান জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা আইন শৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বীর বাহাদুর এমপি এ কথা বলেন। জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বণিকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায়,পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য শফিকুর রহমান, কাজল কান্তি দাশ,বান্দরবান পৌরসভার মেয়র মোহাম্মদ ইসলাম বেবী, লামা পৌরসভার মেয়র জহির উদ্দিন, জেলা পরিষদ সদস্য লক্ষীপদ দাস, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল কুদ্দুছ বক্তব্য রাখেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি আরো বলেন, বান্দরবানের মধ্যম পাড়ায় অবস্থিত কাঁচাবাজার এলাকার পরিবেশ নষ্ট করছে। বাজারের দুগন্ধে মানুষের চলাচল দুরহ হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, এক সময় মানুষ নদীতে গিয়ে গোসল করতো কিন্তু বাজার স্থাপনের পর থেকে মানুষ নদীতে যাওয়ার রাস্তা খুঁজে পাচ্ছে না। তিনি এই বাজার স্থাপনকে অপরিকল্পিত কাজের নিদর্শন বলে উল্লেখ করে বলেন, নেতাদের দুরদর্শি চিন্তার অভাবেই মধ্যমপাড়ায় মারমা বাজার নামের এই জনদুঃখ সৃষ্টি করা হয়েছে। বীর বাহাদুর বান্দরবান বাজারের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে ব্যবসায়ীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। এছাড়া ট্রাফিক ও যানজট দুর করতে সংশ্লিষ্ট সকলকে ভুমিকা রাখার অনুরোধ করেন। সভায় আইন শৃঙ্খলা কমিটির একজন সদস্য এ প্রতিবেদককে বলেন, পাল্পউড বাগান বিভাগ ও বান্দরবান বন বিভাগের ১৬টি রেঞ্জ ও ৪টি পরীক্ষণ ফাঁড়ি থেকে প্রতিমাসে কমপক্ষে ১০ লাখ টাকা উপরি আদায় করা হয়। এ টাকার বিনিময়ে অবৈধ সকল কাজের মোকাবেলা করা হয়ে থাকে। মিডিয়াকর্মীসহ বিভিন্ন ব্যক্তিকে ম্যানেজ করে প্রতিমাসেই চলছে এই বাণিজ্য। সদর রেঞ্জকর্মকর্তাদের তত্ত্বাবধানে নবীন নামের ফরেষ্টার প্রতিমাসে লিষ্ট মোতাবেক মাসোয়ারা বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে পৌঁছে দেন। বিভাগীয় বনকর্মকর্তাদের সম্মতিতে এসব কাজ নিরবে চালানো হচ্ছে বলে ঐ ব্যক্তি জানান। একজন কাঠ ব্যবসায়ী বলেন, চেক স্টেশনে প্রতি গাড়ি কাঠের জন্য তিন হাজার টাকা প্রদান করতে হয়। এছাড়া ফার্নিচারের জন্য রয়েছে আলাদা হিসাব। আইন শৃঙ্খলা কমিটির আগামী মাসিক সভায় চেক স্টেশন গুলোর দুনীর্তি নিয়ে একটি হিসাব বিবরণী প্রদান করা হবে বলে তিনি জানান।
সভায় সেনাবাহিনীর প্রতিনিধি, বিজিবি, আনসার ব্যাটালিন এর অধিনায়ক, উপজেলা চেয়ারম্যান ও নির্বাহী কর্মকর্তা, জেলা সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ নির্মুল কমিটির সভাপতিসহ আইন শৃঙ্খলা কমিটির অন্যান্য সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।