বেইন ঘর ও সুতা কাটা উদ্বোধনীর মধ্যে দিয়ে রাজবন বিহারে ৪৩তম কঠিন চীবর দানোৎসব শুরু হচ্ছে
দেশের বৌদ্ধধর্মীয় সম্প্রদায়ের সর্বোচ্চ ধর্মীয় তীর্থস্থান রাঙ্গামাটি রাজবন বিহারে বেইন ঘর ও সুতা কাটার মধ্য দিয়ে মহামতি বিশাখা প্রবর্তিত নিয়মে আজ থেকে শুরু হচ্ছে দু’দিনব্যাপী ৪৩তম কঠিন চীবর দানোৎসব।
উৎসবকে ঘিরে মুখর হয়ে উঠেছে রাজবন বিহার এলাকাসহ রাঙ্গামাটি শহর। ঢল নামছে অগণিত পুণ্যার্থীর। এবার দানোৎসবে তিন পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের ২৫ উপজেলাসহ চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে যোগ দিতে এসেছে অগণিত পুণ্যার্থী। কানায় কানায় ভরে গেছে রাঙ্গামাটি রাজবন বিহার এলাকা। চার দিক পাহাড়ি-বাঙালীর মিলিন মেলায় পরিণত হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১টায় পঞ্চশীল গ্রহণের মধ্য দিয়ে রাঙ্গামাটি রাজবন বিহারে শুরু হয় দু’দিনব্যাপী কঠিন চীবর দানোৎসব। বেলা আড়াই টায় বেইন ঘর পরির্দশন শেষে সূত্রপাঠ করে করেন মহাপরিনির্বাণপ্রাপ্ত মহাসাধক শ্রীমৎ সাধনানন্দ মহাস্থবির বনভান্তের শিষ্যমন্ডলী।
বিকাল তিনটায় ফিতা কেটে বেইনঘর উদ্বোধন করবেন, রাজবন বিহারের প্রধান পৃষ্ঠপোষক চাকমা সার্কেল চিফ রাজা ব্যারিষ্টার দেবাশীষ রায়। পরে চরকায় সুতাকাটা বেইন বুনন উদ্বোধন করেন রানী ইয়েন ইয়েন রাখাইন।
এবার চীবর দানোৎসবে ১৬৫টি বেইন (পাহাড়িদের কোমর তাঁত) বসানো হয়েছে। রাতব্যাপী চলে তুলা থেকে সুতা কেটে রং করণ, বেইন বুনন। তাছাড়া উৎসবে ফানুস উড়ানো, হাজার পাতি প্রজ্জালন ও ধর্মীয় সংস্কৃতি অনুষ্ঠান।
এব্যাপারে রাঙ্গামাটি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শহীদুলাহ জানান, অনুষ্ঠিত রাঙ্গামাটি রাজবন বিহারে কঠিন চীবর দানোৎসব উপলক্ষে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যাপক নিরাপত্তা জোড়দার করা হয়েছে। সাধরাণ মানুষ যাতে সুষ্ট সুন্দর পরিবেশে উৎসব পালন করতে পারে সে বিষয়ে বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, আজ থেকে আড়াই হাজার বছর আগে মহামতি গৌতম বুদ্ধের জীবদ্দশায় তার প্রধান সেবিকা মহাপূণ্যবতী বিশাখা ২৪ ঘন্টার মধ্যে তুলা থেকে সুতা কেটে রং করণ, বয়ন ও সেলাই শেষে চীবর (বিশেষ পরিধেয় বস্ত্র) দানকার্য সম্পাদন করেন। ২৪ ঘন্টার মধ্যে মহাদানযজ্ঞ সম্পাদন করার কারণে বৌদ্ধরা এই ধর্মীয় উৎসবকে ‘দানোত্তম কঠিন চীবর দান’ বলে। রাঙ্গামাটি রাজবন বিহারে এ মহাদানযজ্ঞ সর্বপ্রথম অনুষ্ঠিত হয় ১৯৭৭ সালে।
তারও আগে ১৯৭৪ সালে বৌদ্ধ আর্যপুরুষ শ্রাবক বুদ্ধ মহাসাধক শ্রীমৎ সাধনানন্দ মহাস্থবির বনভান্তের এক স্বর্গীয় অনুভূতি থেকে রাঙ্গামাটি জেলার লংগদু উপজেলার তিনটিলা বৌদ্ধ বিহারে বিশাখার ঐতিহ্যবাহী নিয়মে এ ধর্মীয় অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। সেই থেকে প্রত্যেক বছর রাঙ্গামাটি রাজবন বিহারসহ পার্বত্য তিন জেলার রাজবন বিহারের শাখাসমূহে বিশাখা প্রবর্তিত নিয়মে কঠিন চীবর দানোৎসব সম্পাদন করা হয়ে থাকে।