রাঙ্গামাটির কবি ও সাহিত্যক মনোজ বাহাদুরের “পার্বত্য চট্টগ্রামের গুর্খা সম্প্রদায়” বইয়ের মোড়ক উন্মোচন
পার্বত্যাঞ্চলের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতিসত্ত্বাগুলোকে সঠিকভাবে বিকাশের সুযোগ দেয়া হলে তাদের প্রতিভা বিকাশের আরো বেশী উদযোগী হবে বলে মন্তব্য করেছেন রাঙ্গামাটি-২৯৯ নং আসনে সংসদ সদস্য ঊষাতন তালুকদার।
রবিবার (২০ নভেম্বর) বিকেলে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্টী সাংস্কৃতিক ইন্সটিটিউটে রাঙ্গামাটির কবি, লেখক ও সঙ্গীত শিক্ষক মনোজ বাহাদুরের “পার্বত্য চট্টগ্রামের গুর্খা সম্প্রদায়” বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য তিনি এ কথা বলেন।
ঊষাতন তালুকদার বলেন, ভাব আদান প্রদানের জন্য লেখনী, লেখা প্রকাশের মাধ্যমে মানুষ জানার সুযোগ পাই। কিন্তু পার্বত্যাঞ্চলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীরা এই সৃজনশীলতা পূর্নাঙ্গ ভাবে বিকশিত করার সুযোগ পাচ্ছেনা। কালের বিবর্তনে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের সংষ্কৃতি আজ বিলপ্তের পথে। অপসংষ্কৃতির কারণে পাহাড়ের মানুষ আজ ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলছে। ভাষা, কৃষ্টি, সংষ্কৃতিগুলো প্রায় কোন ঠাসা হয়ে পরেছে। মনোজ বাহদুরের এ বই প্রজন্মকে গুর্খা জাতিগোষ্ঠীর সংস্কৃতি সর্ম্পকে সঠিক ধারণা দিতে পারবে। তিনি অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীদের ন্যায় গুর্খা সম্প্রদায়কেও নৃ-গোষ্ঠীদের অর্ন্তভুক্ত করার বিষয়ে সরকারকে অবগত করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।
রাঙ্গামাটির কবি, লেখক ও সঙ্গীত শিক্ষক মনোজ বাহাদুরের সভাপতিত্বে ও রাঙ্গামাটি বেতারের সিনিয়র উপস্থাপক শিখা ত্রিপুরার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ বেতার রাঙ্গামাটি আঞ্চলিক পরিচালক সালাহ উদ্দিন, স্থানীয় পত্রিকা দৈনিক গিরিদর্পণের সম্পাদক একেএম মকছুদ আহমেদ, রাঙ্গামাটি প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি প্রবীন সাংবাদিক সুনীল কান্তি দে, মুনীর চৌধুরী পদক প্রাপ্ত কবি ও লেখক মৃত্তিকা চাকমা, জুম ঈসথেটিকস কাউন্সিলের সভাপতি এ্যাডভোকেট মিহির বরণ চাকমা, রাঙ্গামাটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্টীর সাংস্কৃকিত ইন্সটিটিউটের পরিচালক রুনেল চাকমা, রাঙ্গামাটির বিশিষ্ট সাহিত্য গবেষক শিশির চাকমা ও রাঙ্গামাটির বিশিষ্ট লেখক ও কবি মুজিবুল হক বুলবুল প্রমূখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাঙ্গামাটি-২৯৯ নং আসনে সংসদ সদস্য ঊষাতন তালুকদার আরো বলেন, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলায় উন্নয়নে যে বরাদ্দগুলো আসে সেগুলো সাহিত্য ও সাংস্কৃতিকর কাজে কতটুকু আসে। তিনি বলেন, সমাজে একে অপরের প্রতি মূল্যবোধ সেটা অনেকাংশে কমে যাচ্ছে। এগুলো জনমানুষের মধ্যে ভাব বিনিময় হওয়া প্রয়োজন। এই দেশে শৈলকুপায় দেড় কোটি টাকার একটি টেন্ডার পাওয়ায় এক মুক্তিযোদ্ধাকে দুর্বিত্তরা হামলা করেছে। তিনি বলেন, ব্রাক্ষনবাড়িয়ার নাসিরনগর ও গোবিন্দগঞ্জে হামলা সত্যিই দুঃখজনক। রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে দুর্বিত্তরা ভুমি ভোগ করছে।
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সে একজন সংসদ সদস্যকে কিভাবে অবমাননা করা হয়েছে সেটি সুষ্ঠু সংস্কৃতি চর্চা নয়। এসব সংস্কৃতি পরিবর্তন না করলে দেশ কখনোই এগিয়ে যাবেনা। এগুলো পরিহার করলে একে আপরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ ফিরে আসবে দেশ এগিয়ে যাবে।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ বেতার রাঙ্গামাটি আঞ্চলিক পরিচালক সালাহ উদ্দিন বলেন, প্রত্যেক সম্প্রদায় ও জাতিগোষ্ঠী একে অপরের সাথে ভাব, সংস্কৃতি বিনিময়ের মাধ্যমে বিকশিত হয়। আর মনোজ বাহাদুরের লেখা এই বইটি তার একটি প্রতিফলন। আর এই ক্ষুদ্র এই সংকলন যুগ যুগ শতাব্দী ধরে থাকবে। এই সংকলনে ক্ষুদ্র গুর্খা সম্প্রদায়কে যতটুকু সম্মান দেওয়া প্রয়োজন লেখক এই বইয়ের মাধ্যমে দিয়েছেন। তিনি বলেন, এই বই প্রকাশের পর গুর্খা জনগোষ্ঠীকে পার্বত্য অঞ্চলের নৃ-গোষ্ঠীকে সংযুক্ত করবে। একটি জাতী বেঁচে থাকে তার কর্মের মাধ্যমে এই মনোজ বাহাদুরও বেঁচে থাকবে তার কর্মের মাধ্যমে। তার এই বইয়ের মাধ্যমে গুর্খা সম্প্রদায় অনেক তরুন-তরুনীদের কাছে পথপদর্শক হিসেবে কাজ করবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
দৈনিক গিরিদর্পণের সম্পাদক একেএম মকছুদ আহমেদ বলেন, ১৮৩১ সালে গুর্খাদের আগমন। তাদের নাম ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের তালিকায় না আসা সত্যিই দুঃখজনক। যেটির কারণে গুর্খা সম্প্রদায়ের অনেক শিক্ষার্থী উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাইনি। আমি এই গুর্খা জনগোষ্ঠীদের নিয়ে অনেক লেখালেখি করেছি। এছাড়া গুর্খা সম্প্রদায় নিয়ে রাঙ্গামাটিতে যতই গবেষক এসেছে তাদের সহযোগিতা করিছি। তিনি বলেন, পার্বত্য অঞ্চলের নৃ-গোষ্ঠীদের নিয়ে চট্টগ্রাম থেকে অনেক বই প্রকাশনা হয় যেগুলো ভুলে ভরা। তিন পার্বত্য জেলায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইন্সটিটিউট পার্বত্য চট্টগ্রামের বসবাসরত নৃ-গোষ্ঠীদের নিয়ে বই প্রকাশ করলে অনেক তথ্য প্রকাশ পাবে বলে মন্তব্য করেন।
পরে কবি, লেখক ও সঙ্গীত শিক্ষক মনোজ বাহাদুরের প্রতিষ্ঠিত সাংস্কৃতিক সংগঠনন সুর নিকেতনের শিল্পীদের পরিবেশনায় পরিবেশিত হয় মনোজ্ঞ সঙ্গীতানুষ্ঠান।