সংস্কারের উদ্যোগ নেই ৫০ বছর ধরে, হুমকিতে
রাঙ্গামাটি ফিসারী শহর রক্ষা বাঁধ
॥ মিল্টন বাহাদুর ॥ নির্মাণের ৫০ বছরেও কোন সংস্কার না করায় রাঙ্গামাটি ফিসারী শহর রক্ষা বাঁধটি হুমকির মুখে পড়েছে। সংস্কারের অভাবে বাঁধের অনেক অংশে ফাটল দেখে গেছে, কোথাও দেবে গেছে, আবার কোথাও বা বিলীন হয়ে যাচ্ছে নদীগর্ভে। এতে বাঁধটির অস্তিত্ব-সংকটে পড়েছে। যেকোনো সময় বাঁধে ধস নেমে ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী।
জানা গেছে, ১৯৬৪ সালে মূলত শহরের রক্ষাকল্পে এবং যোগাযোগের জন্য সড়ক সংযোগ দিতে এ বাঁধটি নির্মিত হয়। বাঁধটি একদিকে যেমন শহর রক্ষা ও সড়ক সংযোগ স্থাপন করেছে অন্যদিকে পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়িয়েছে বহুগুণ। কিন্তু নির্মাণের প্রায় ৫০ বছরে একবারও সংস্কার করা হয়নি।
এদিকে প্রতিবছর প্রবল বর্ষণে কাপ্তাই লেকে পানি অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ার কারণে আশঙ্কাজনক হারে বাঁধের পাড়ে দিন দিন মাটি সরে যাওয়ায় ভাঙ্গন বড় আকার ধারণ করছে। বাঁধের অস্থিত্ব রক্ষার্থে যেসব গাছ লাগানো হয়েছিল তাও হ্রদের পানি বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে মাটি নরম হয়ে অনেকাংশ গাছ পানিতে তলিয়ে গেছে আবার অনেকাংশ গাছ মরে গেছে।
অন্যদিকে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারি না থাকায় প্রতিদিন বিভিন্ন মালামাল লোড-আনলোডিংসহ ট্রাক, বাস, ফোর স্ট্রোক সিএনজি, মিনি ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহনের পরিবহন শ্রমিকরা গাড়ি দাঁড় করিয়ে ধোয়া-মোছার কাজও করেন বাঁধের উপর। এতে চরম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে বাঁধটি। যে কোনো মুহূর্তে বাঁধটি লেকের পানিতে তলিয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এনিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।
অভিযোগ উঠেছে, ১ কিলোমিটার দৈর্ঘের এই সড়ক সংযোগ বাঁধটি নির্মান করার পর কোন কর্তৃপক্ষ এই বাঁধটি রক্ষার্থে এগিয়ে আসেনি। সংস্কার করা হয়নি কখনো। আর এই কারণে বাঁধটি’র রক্ষার জন্য বিশাল বিশাল আকৃতির যেসব গাছগুলো লাগানো হয়েছিল তাদের বেশীর ভাগ হেলে গেছে। যদি কোন কারণে এই বাঁধ ভেঙ্গে যায় তাহলে রাঙ্গামাটি পুরাতন ঐতিহ্যবাহী রিজার্ভ বাজার ও তবলছড়ি সাথে বনরূপার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। আর পন্যবাহী গাড়ী যদি রিজার্ভ বাজার যেতে না পারে তা হলে রাঙ্গামাটির উপজেলাগুলোতে পন্য রপ্তানী বন্ধ হয়ে যাবে। বাঁধের অস্তিত্ব রক্ষার্থে দ্রুত সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া দরকার বলে তারা মনে করেন।
এ বিষয়ে রাঙ্গামাটি পৌর মেয়র মো. আকবর হোসেন চৌধুরী বলেন, রাঙ্গামাটি শহর রক্ষা ও সড়ক সংযোগ বাঁধটি সংস্কারের জন্য পৌরসভার পক্ষ থেকে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে। আগামী অর্থ বছরের মধ্যে এ বাঁধের সংস্কার কাজ শুরু করা হবে। এছাড়া ড্রেসিংয়ের অভাবে কাপ্তাই লেকের পানি অস্বাভাবিক পর্যায়ে বাড়ায় শহর রক্ষা বাঁধটি মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। তাই বাঁধের অস্তিত্ব রক্ষার্থে উন্নয়ন বোর্ড, রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদসহ পর্যটন সেক্টরে যারা আছে তারা যদি সুনজর দেয় তা হলে রাঙ্গামাটি পর্যটন ঝুলন্ত সেতুর পর এই সংযোগ বাঁধ পর্যকদের জন্য আর্কষনীয় করে গড়ে তোলা সম্ভব। এতে রাঙ্গামাটিতে আরো একটি পর্যটন স্পট হিসেবে পর্যটকদের কাছে সমাদৃত পাবে বলে তিনি মনে করেন।