সমাবেশের জন্য ‘বিকল্প স্থান’ চাইবে বিএনপি
শুক্রবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “আমরা অবশ্যই বিকল্প জায়গা চাইব। আশা করছি সেখানে আমরা সমাবেশ করার অনুমতি পাব।”
‘বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ এর অংশ হিসেবে বিএনপি কোন বিকল্প স্থানে সমাবেশের অনুমতি চাইবে তা জানাননি দলের মুখপাত্র।
প্রথমে ৭ নভেম্বর ও পরে ৮ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার অনুমতি চেয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের কাছে আবেদন করেছিল বিএনপি। কিন্তু পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সোহওরায়ার্দীতে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হবে না।
ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান শুক্রবার সকালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “একই স্থানে একাধিক রাজনৈতিক দল সমাবেশ ডাকায় নিরাপত্তাজনিত কারণে কাউকে ৭ ও ৮ নভেম্বর সমাবেশ করতে দেওয়া হবে না।”
বিএনপি ছাড়া আর কোন দল ওই দুই দিন সমাবেশের অনুমতি চেয়েছে, সে প্রশ্নের কোনো উত্তর পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছে মেলেনি।
পুলিশের এই সিদ্ধান্তের সমালোচনায় মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘তাদের স্বরূপ আবার উন্মোচিত হয়েছে। একটা একদলীয় সরকার ব্যবস্থা যে তারা প্রবর্তন করতে চাচ্ছে, তারই প্রতিফলন আমরা এখানে দেখতে পারছি। অজুহাত দেখিয়ে অতীতেও তারা (সরকার) সমাবেশ বন্ধ করেছে, এবারও করল।”
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ দিন ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর জিয়াউর রহমানের উত্থান ঘটে, যার হাত দিয়ে পরে প্রতিষ্ঠা পায় বিএনপি।
১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর রাজনৈতিক পালাবদলের এক পর্যায়ে সেনানিবাসে বন্দি তৎকালীন সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল জিয়া ৭ নভেম্বর মুক্ত হন। পরে তিনি রাষ্ট্রক্ষমতা নেন, তার তত্ত্বাবধানে গঠিত হয় বিএনপি।
এই দিনটি বিএনপি ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি’ দিবস হিসেবে পালন করে আসছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ পালন দিনটি করে ‘মুক্তিযোদ্ধা সৈনিক হত্যা দিবস’ হিসেবে। আর তাদের এখনকার রাজনৈতিক মিত্র জাসদ দিনটি ‘সিপাহি জনতার অভ্যুত্থান দিবস’ হিসেবে পালন করে।
জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের নবগঠিত কমিটির সভাপতি শফিউল বারী বাবু ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদের ভূইয়া জুয়েলকে নিয়ে বিএনপি মহাসচিব শুক্রবার দুপুরে শেরেবাংলা নগরে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। সে সময়ই তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে সমাবেশের স্থান নিয়ে কথা বলেন।
গত ২৭ অক্টোবর বাবু ও জুয়েলের নেতৃত্বে স্বেচ্ছাসেবক দলের আংশিক কমিটি বিএনপির অনুমোদন পায়।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, নবগঠিত কমিটির সিনিয়র সহসভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, সহসভাপতি গোলাম সারোয়ার. যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, সাদরাজ্জামান, সাংগঠনিক সম্পাদক ইয়াসীন আলী শ্রদ্ধা নিবেদনের উপস্থিত ছিলেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হিন্দু সম্প্রদায়ের মন্দির ও বাড়ি–ঘরে হামলার ঘটনা প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করতে পরিকল্পিতভাবে ওই ঘটনা ঘটানো হয়েছে।
“একটি মহল, যারা বাংলাদেশে সমস্যা তৈরি করতে চায়; জনগণের যে মূল দাবি– গণতন্ত্রের দাবি– তা থেকে দৃষ্টি সরিয়ে দিতে চায়, তারা এ ধরনের হীন কার্যকলাপে জড়িত।”
নাসিরনগরের ঘটনায় প্রশাসনের গাফিলতি ছিল বলেও বিএনপি মহাসচিব অভিযোগ করেন।
“যে ব্যবস্থা নেওয়া উচিৎ ছিল, তারা নেয়নি। দেখা গেছে, একটি বিশেষ মহল সব সময় এ ধরনের ঘটনায় প্ররোচিত হয়।”
দেশে ‘গণতন্ত্র না থাকার কারণেই’ বার বার এমন ঘটনা ঘটছে মন্তব্য করে ফখরুল বলেন, “সরকার যেহেতু একদলীয় শাসনব্যবস্থার দিকে এগিয়ে চলেছে এবং জনগণের অধিকার কেড়ে নিচ্ছে. সেক্ষেত্রে এ ধরনের অবস্থা স্বাভাবিক।
“আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি তীব্রভাবে নিচের দিকে নেমেছে। মানুষের সমস্যা সমাধান না করে তারা (সরকার) রাজনৈতিকভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করছে। যার ফলে আমরা দেখতে পাচ্ছি এ ধরনের ঘটনাগুলো ঘটছে।”