হাটহাজারীর নাঙ্গলমোড়ার ওয়াহিদ ফলদ বাগানের বিপ্লবের রুপকার ও ফলদ বৃক্ষের গবেষক

শ্যামল নাথ,হাটহাজারী প্রতিনিধি: ফল মানুষের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে। একজন মানুষকে প্রতিদিন কম করে হলেও অন্তত ৮০ গ্রাম ফল খাওয়া দরকার। কিন্তু দেশের বেশীরভাগ মানুষ শরীরের প্রোটিনের চাহিদা মিঠাতে প্রতিদিন যে পরিমাণ ফল খাওয়া দরকার সে বিষয়টি জেনেও ফলের সহজ লভ্যতা ও আর্থিক কারণে পরিমিত পরিমাণ ফল খেতে পারে না। দেশের মানুষের প্রধান পেশা কৃষি কাজ। কৃষি কাজে সাধারণত ধান,গম,ভুট্টা,মৌসুমী তরিতরকারি  ও শাক সবজি চাষাবাদ কৃষকেরা করে থাকে। মানুষের প্রাত্যহিক চাহিদার মধ্যে ফলের যে  প্রয়োজনীয়তা রয়েছে দেশের কৃষিজীবিরা জেনেও অসচেতনতার অভাবে হাটহাজারীতে ফলের বাগান করতে তেমন আগ্রহ দেখা যায় না। অনেকে  মনে করে পুষ্টিকর ফলফলাদীর চাষাবাদ এখানে হবে না। উপজেলা কৃষি বিভাগ প্রতিনিয়ত কৃষকদের নানাভাবে প্রশিক্ষণ দিয়ে সচেতন করে তুলছে। বর্তমান হাটহাজারী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা শেখ আবদুল্লাহ ওয়াহেদ হাটহাজারীতে ফলের বাগান সৃষ্টির যে অপার সম্ভাবনা রয়েছে  তা প্রমাণ করার জন্য মাঠে ময়দানে ঘুড়ে বেড়াচ্ছে। তিনি কৃষকদের ফলদ বাগান সৃষ্টির ব্যাপারে আগ্রহী করে তোলার উদ্যেগ গ্রহন করেছেন। কৃষি কর্মকর্তা যখন ফলদ বাগান সৃষ্টির সম্ভাবনার কথা বলে বেড়াচ্ছে তখনই পেয়ে যান  উপজেলা নাঙ্গলমোড়া ইউনিয়নের ডা: নুরুজ্জামানের বাড়ির শিক্ষিত প্রতিশ্রুতিশীল ফলদ বৃক্ষের  বাগান সৃষ্টির রুপকার এবং বিভিন্ন দেশী বিদেশী ফলদ বৃক্ষের গবেষক মোহাম্মদ ওয়াহিদুল আলমকে। ওয়াহিদুল আলমের পিতা মরহুম আবদুল মুনাফ ও মাতা মৃত হোসনে আরা বেগম। পিতা মাতা দুইজনই কৃষক। তারা দুই ভাই চার বোন। ভাইবোনদের মধ্যে ওয়াহিদ ২য়। ২০০২ সালে  এসএসসি পরবর্তীতে এইচ এস সি পাশ করে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিষয়ে সম্মান সহ ২০১০ সালে এমএসসি পাশ করেন। এরমধ্যে কৃষক পরিবারের সন্তান হিসাবে কৃষিকাজে প্রচন্ড আগ্রহ দেখা দেয়। আগ্রহের কারণে এলাকাকে ফলের ভান্ডারে সমৃদ্ধ করে পুষ্টির চাহিদা মিঠাতে তিনি ২০০৭ সালে একটি জমিতে ১৪ টি রেড লেডি পেঁপে গাছ রোপন করেন। এ ১৪ টি গাছে ফলের আবাদ দেখে তার মনে ফলদ বাগান  সৃষ্টির ব্যাপারে প্রচন্ড আগ্রহের সৃষ্টি হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে যেহেতু উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগে তার পড়াশোনা সেহেতু উদ্ভিদের পরিচর্যা ও রোপন বিষয়ে তার অভিজ্ঞতা রয়েছে। বৃক্ষ রোপন ও পরিচর্যার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ওয়াহিদ এলাকায় ফলদ বাগান সৃষ্টির উদ্যেগ গ্রহন করেন। তার এ উদ্যেগকে স্বাগত জানান কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। এলাকায় সে নিত্য নতুন ফলের বাগান করতে লেগে যান। বর্তমানে তিনি তার পৈত্রিক দুই কানি জমিসহ মোট ৭ একর জমিতে নানা প্রজাতির ফলদ বৃক্ষের বাগান সৃষ্টি করেছে। পৈত্রিক জমি ছাড়া অন্যান্য জমি গুলো বার্ষিক খাজনার ভিত্তিতে নিয়ে বাগান করেছে বলে জানান। তার সৃজিত বাগানের মধ্যে যে গুলো বর্তমানে উৎপাদনে রয়েছে তার মধ্যে ড্রাগন ফল অন্যতম। তার বাগানে ৩ শ ড্রাগন ফলের গাছ থেকে এক বছরে ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা,আপেল কুল, বাউকুল ও থাইকুলের ৬০ টি গাছ রয়েছে। এসব গাছ থেকে উৎপাদিত ফল গত বছর তিনি ৭০ হাজার টাকা বিক্রি করেছে। তাছাড়া থাই পেয়ারার গাছ রয়েছে ৩শ টি এসব গাছ থেকে ও ইতিমধ্যে লক্ষাধীক টাকার পেয়ারা বিক্রি করেছে।  তার বাগানে উৎপাদিত ফল গুলো ফরমালিন ও কীটনাশক মুক্তি বলে ব্যবসায়ী ও ভোক্তারা ফল ক্রয়ের জন্য রীতিমত প্রতিযোগীতা করে। বাগানে উল্লেখিত ফলফলাদীর গাছ ছাড়া ও প্রায় ২৫ প্রজাতির গাছ রয়েছে। এসব গাছের মধ্যে তিনি এরাবিয়ান ডুমুর ২ টি, মোচাম্বী ৫ টি,চন্দন গাছ ১ টি,সফেদা ২০ টি, সীড লেস লেবু ২০ টি,ডরিয়ান ৮ টি,থাই জামরুল ১০ টি,ম্যাংগোষ্টি ১ টি, ক্যারেলাডর নারকেল গাছ ৫টি,বারী মাল্টা ১০০ টি, চায়না থ্রি লিচু ৩টি, আমরুপলী ২শ টি,চেরি ফল ২টি,চায়না কমলা ২ টি,কাস্মীরি কমলা ১০টি,থাইল্যান্ডের রাম ভ’টান ২টি,এবোকেডু ২টি প্রভৃতি ফলদ গাছ তিনি গবেষণার জন্য রোপন করেছে। দেশের মাটিতে এ জাতীয় ফলের আবাদ কেমন হয় তা পরিক্ষার জন্য। তার বাগানে সাথী ফসল হিসাবে মিষ্টি কুমড়া,লাউ,হাইব্রিড মরিচসহ মৌসুমী নানা তরিতরকারী ও সবজির চাষাবাদ করে কৃষি বিপ্লবের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। দেশে সাধারণত শিক্ষিত যুবকেরা কৃষি কাজ করতে চায়না। কৃষিকে সাধারণত নিচু পেশা হিসাবে অনেকেই মনে করেন। প্রকৃত অর্থে কৃষিকে যদি শিল্প হিসাবে গ্রহন করা যায় থাকলে দেশ খাদ্যের সাথে সাথে নানা প্রজাতির ফলে সমৃদ্ধ হয়ে উঠবে। হাটহাজারীর নাঙ্গলমোড়ার মোহাম্মদ ওয়াহিদুল আলম কৃষিকে শিল্প হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করে দেশের উন্নয়নের অংশীদার হতে আগ্রহী। তিনি বর্তমানে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছেন। দুইজন শ্রমিক নিয়ে তিনি তার বাগান দেখা শুনা ও পরিচার্য করেন। ওয়াহিদুল আলম একজন সফল ফলদ  বাগানের স্বপ্নদ্রষ্টা এবং কৃষি বিপ্লবের অন্যান্য রুপকার। তার নীতি আর্দশ অনুসরণ করে শিক্ষিত জনগোষ্ঠি যদি ফলদ সহ কৃষি কাজে এগিয়ে আসে তাহলে কৃষির অগ্রগতি দ্রুত এগিয়ে যাবে।

Archive Calendar
Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
2627282930