আলেক্ষ্যং ও পানঁতলা মৌজা সীমান্তে সেনাবাহিনীর নাম
ভাঙ্গিয়ে বোল্ডার পাথর উক্তোলনে বশর ড্রাইভার
॥ মংবোওয়াংচিং মারমা (অনুপম), রোয়াংছড়ি আলেক্ষ্যং থেকে ফিরে ॥ বান্দরবানে রোয়াংছড়িতে সেনাবাহিনীর নাম ভাঙ্গিয়ে আলেক্ষ্যং ও পানঁতলা মৌজা সীমান্তে ডলু ঝিড়ি ও সাকলাই ঝিড়ির স্থানে বড় বড় হেমার, খন্ডা, জ্বালানি কাঠের আগুনে ছেগ, মাটি খুড়ে ও বারুদ বিস্ফোরসহ নানা উপায়ে অবৈধ পন্থায় অবাধে ৫০ লক্ষ ঘনফুট বোল্ডার পাথর উক্তোলন করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ ও পাচার করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট প্রশাসন, আইনশৃংখলা বাহিনী ও বন বিভাগের কর্তারা নির্বিকার হয়ে আছে।
এতে পরিবেশ অধিদপ্তর, স্থানীয় প্রশাসন ও বন বিভাগের কোন অনুমোদন না থাকায় সরকার হারাচ্ছে কোটি টাকা রাজস্ব। প্রাকৃতিক পরিবেশ ভারসাম্য ও ঝিড়ির নাব্যতা হারিয়ে জনদূর্ভো চরম আকারে ধারণ করছে। ডলু, সাকলাই ঝিড়িতে উপজাতীয় জনগোষ্ঠি অর্ধশতাধিক বসবাসকারীদের পানীয় জল ব্যবহার, স্থানীয় হাট বাজার, স্কুল কলেজের যাওয়ার রাস্তাকে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে বোল্ডার পাথর পরিবহন করার যাতায়াতে চরম ভোগান্তিতে এলাকাবাসী।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলায় হাফেজ ঘোনার বাসিন্দা জেলা জাতীয় শ্রমিক লীগে সাধারণ সম্পাদক বশর কোম্পানী ওরফে (বশর ড্রাইভার) সেনাবাহিনীর নাম ভঙ্গিয়ে, সরকার দলীয় নেতাদের ছত্রছায়া রোয়াংছড়ি তাড়াছা ইউপি আলেক্ষ্যং মৌজা ও গ্যালেংগা ইউপি পাঁনতলা মৌজা সীমান্তে গভীর অরন্যে ডলু ঝিড়ি ও সাকলাই ঝিড়ি স্থানে ৫/৬ কি:মি: ঝিড়ি দখল করে শতাধিক শ্রমিক দিয়ে বড় বড় হেমার, খন্ডা, জালানি কাঠের আগুনে ছেগ, মাটি খুড়ে ও বারুদ বিস্ফোরসহ নানা উপায়ে বিশাল বিশাল বোল্ডার পাথর ভাঁঙ্গা উক্তোলন ও সরবরাহ করে যাচ্ছে নির্বিঘেœ। নীবর বিছিন্ন এলাকায় স্থানীয় প্রশাসন, আইনশৃংখলা, বনবিভাগের কর্মকর্তাদের মাসোহারা বিনিময়ে নিশ্চুপ রয়েছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
রোববার সরেজমিনে আকুতিস্থলে পাথর ভাঙ্গাঁ পরিবহন শ্রমিক ১০জনে গ্রুপ প্রধান রহম্মদ উল্লা, জহিউর ইসলাম জানান, কক্সবাজার জেলা চকরিয়া থেকে ১০০জনে গ্রুপ গত নভেম্বর থেকে স্বজনদের ছেড়ে মাটি খুঁড়ে বারুদ বিষ্ফোরক ও আগুনে ছেকের মাধ্যমে পাথর উক্তোলন করছি ,পাহাড়ীরা আমাদের মারতে আসে কিন্তু জনবল বেশী ও মৌজা হেডম্যানের নিজস্ব লোক থাকায় আমাদের স্থানীয়রা কিছু করার সম্ভব হয়নি। প্রশ্ন করা হলে
বান্দরবানের হাফেজ ঘোনার বাসিন্দা বশর কোম্পানীর নির্দেশক্রমে কাজ করছি। বোল্ডার পাথর উক্তোলনের প্রশাসনে অনুমোদিত পারমিট রাজস্ব প্রদানে রসিদ ফটোকপি প্রমান স্বরুপ খুজেছি কিন্তু প্রয়োজন পড়বে না বলে বললেন বশর কোম্পানী।
ডলু পাড়া বাসিন্দা চনুমং মারমা জানান, গত অক্টোবর থেকে মৌজা হেডম্যান ও বশর কোম্পানী গংদের শতাধিক শ্রমিক বোল্ডার পাথর উত্তোলণ করে স্তূপ জমানো। ফলে সাকলাই ঝরনা পানি উৎসের প্রবাহ শুকিয়ে। পানি অভাবে ডলুঝিরির দু‘টি উপজাতীয় মহল্লা ৮০টি পরিবার ভবিষ্যতে অন্যত্র স্থানান্তর উপক্রম হয়েছে ও আশঙ্কা করেন। প্রবীন রাজনৈতিকবিদ শৈসিংঅং মারমা ও চনুমং মারমা ভাষ্য মতে, বর্তমানে বোল্ডারের পাথর স্তুপগুলো পরিমাণে ৫০ লক্ষ ঘনফুটের বেশি জামানো হয়েছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ ও পরিবহনে আমাদের অনেকটাই ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।
মুঠো ফোনে যোগাযোগে মোহাম্মদ বশর কোম্পানী (বশর ড্রাইভার) বলেন, আমি পাথর উক্তোলন করিনা এবং এ বিষয়ে আমি জানি না তবে স্বীকার করে বলেন, আলেক্ষ্যং মৌজা হেডম্যান পুমুই হেডম্যান প্রকাশ (ব্রিগেডিয়ার) বিএনপি নেতা নিকট ক্রয় করে সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে আমার নামীয় লাইসেন্সে ২টি ট্রাক বান্দরবান ট-১১০০০৪, কুমিল্লা ট-৫৩১৫ দুইটি ট্রাক ঔ স্থানে পাথর সরবরাহ কাজে নিয়োজিত রয়েছে। পাথর গুলি রুমা বগালেক সড়ক নির্মাণ কাজে সেনাবাহিনীকে সরবরাহ করি। প্রশ্ন করা হলে বশর বলেন, সেনাবাহিনীদের পাথর উক্তোলন, সরবরাহের অনুমতি প্রয়োজন হয়না নিজেরা প্রশাসন বলে জানান তিনি।আলেক্ষ্যং মৌজা হেডম্যান, বিএনপি নেতা পুমুই হেডম্যান (প্রকাশ ব্রিগেডিয়ার) তার মুঠো ফোন ০১৭৭২৫৭২৯৪৭ বার বার যোগাযোগ করা হলে সংযোগ না পাওয়ার বক্তব্য নেয়ার সম্ভব হয়নি।
ডলুঝিরি পাড়াবাসিন্দা সুইসিঅং ও সাবেক ইউপি মেম্বার থুইসাচিং জানান, আমাদের পানীয় জল ব্যবহার, স্থানীয় হাট বাজার, স্কুল কলেজের যাওয়ার রাস্তাকে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে বোল্ডার পাথর পরিবহন করার জনযাতায়াতে চরম ভোগান্তিতে বসবাস করছি। বিশ্ব বিদ্যালয়ের ছাত্র অংচিসা বলেন, বারুদ বিষ্ফোরক দিয়ে পাথর উত্তোলন প্রশাসনিভাবে বন্ধ করা না গেলে ভবিষ্যতে আমাদেরকে চিড়িয়াখানা দেখতে পাবেন। যোগাযোগে রোয়াংছড়ি থানা অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ ওমর আলী বলেন, পাথর উক্তোলনে বিষয়ে জানি কিন্তু থানা সদর থেকে অনেক দূর দূর্গম পথ পেরিয়ে আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়।
যোগাযোগে রোয়াংছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোহাম্মদ দাউদ হোসেন চৌধুরী বলেন, ঔ অঞ্চলে স্থানীয়রা প্রশাসনকে অভিযোগ করেছে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। পাথর উত্তোলনে প্রশাসানকভাবে পারমিট অনুমোদন করেননি। সরকার লক্ষ লক্ষ টাকা রাজস্ব হাড়াচ্ছে সত্য। মোবাইল কোট করার পরিকল্পনা রয়েছে।