কয়েকটি সংবাদপত্রের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে
খাগড়াছড়িতে সংবাদপত্র এজেন্টকে উড়ো চিঠি
॥ খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি ॥ সাংবাদিককে মারধর ও প্রকাশ্যে সাংবাদিকদের প্রাণ নাশের হুমকির ঘটনার পর এবার খাগড়াছড়িতে কয়েকটি সংবাদপত্রের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে উড়ো চিঠি দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৭ ডিসেম্বর) ভোরে শহরের সংবাদপত্রের দোকান ‘প্রতিভা ট্রেডার্স’ খুলতেই চারটি খামের মধ্যে উড়ো চিঠি পাওয়া যায়। খাগড়াছড়ির সংবাদপত্র এজেন্ট রতন কুমার দে বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রশাসনকে অবহিত করেছেন বলে জানিয়েছেন। পত্রিকার এ ঘটনায় সাংবাদিক মহলে উদ্বেগ¦-উৎকন্ঠা আরো বেড়েছে।
খাগড়াছড়ির সংবাদপত্রের এজেন্ট রতন কুমার দে জানান, আজ ভোর রাতে তার কর্মচারী দোকার খোলার পর খামে মোড়ানো চারটি চিঠি পান। তাকে দেয়া উড়ো চিঠিতে লেখা হয়েছে যে, ‘ইদানিং প্রথম আলো, সমকাল, যুগান্তর, ইত্তেফাক, কালেরকন্ঠ ও সুপ্রভাত বাংলাদেশসহ বেশ কয়েকটি জাতীয় ও আঞ্চলিক দৈনিক পত্রিকা এলাকার সুনামধন্য জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে মিথ্যাচার করছে। জনবিরোধী এসব পত্রিকা খাগড়াছড়িতে আনা ও বিক্রি নিষিদ্ধ করা হলো। পত্র প্রাপ্তির পর যদি এসব পত্রিকা খাগড়াছড়ি আসে, তার দায়-দায়িত্ব আপনাকে নিতে হবে।’
সংবাদপত্র এজেন্ট রতন কুমার দে আরো জানান, তিনি তাৎক্ষনিক ভাবে বিষয়টি জানাতে খাগড়াছড়ি পুলিশ সুপার মো: মজিদ আলীর সাথে সাক্ষাৎ করেন। এসময় পুলিশ সুপারের পরামর্শ অনুযায়ী একটি অভিযোগপত্র দাখিল করেন। অভিযোগে কে বা কারা এমন উড়ো চিঠি দিয়েছে তা সু-নির্দিষ্ট করে উল্লেখ করা হয়নি।
খাগড়াছড়ি মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ তারেক মো: আব্দুল হান্নান জানান, একটি অভিযোগ পাওয়া গেছে। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে এ ধরণের উড়ো চিঠির ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছেন খাগড়াছড়ির পেশাজীবী সাংবাদিকরা। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও সমালোচনার ঝড় বাইছে। খাগড়াছড়ির সাংবাদিক প্রদীপ চৌধুরী তার এফবিতে লিখেছেন, খাগড়াছড়িতে বেশ কয়েকটি পত্রিকা বিক্রির উপর নিষেধজ্ঞা দিয়ে উড়োচিঠি। পার্বত্য চট্টগ্রামের স্বনামধন্য সংবাপত্র সেবী রতন কুমার দে’ এইমাত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। নিশ্চয়, সামনে টেলিভিশন বন্ধের খবরও আসতে পারে। প্রবীন সাংবাদিক ও দৈনিক ইত্তেফাকের খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি লিখেছেন, মগের মুল্লকে তুগলকি শাসন শুরু হয়েছে। প্রশাসনের লজ্জার মাথা খেয়েছে—-। জুপিটার চাকমা জুপ লিখেছেন, সম্ভবত, খাগড়াছড়ি দ্বিতীয় লক্ষ্মীপর হতে যাচ্ছে।
এর আগে খাগড়াছড়ি পৌরসভার মেয়র রফিকুল আলম কর্তৃক প্রথম আলো‘র আলোকচিত্র সাংবাদিক নীরব চৌধুরীকে পিটানোর ঘটনায় প্রতিবাদের কারণে হুমকি পাওয়া জেলার ৩৫ সাংবাদিক একযোগে সাধারণ ডায়রি করেছিলেন। নীরব চৌধুরী নিজেও জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে জিডি করেছেন।
প্রসঙ্গত, গত ১৮ ডিসেম্বর চেঙ্গীনদীতে বালু তোলার ছবি তুলতে গেলে খাগড়াছড়ি পৌরসভার মেয়র রফিকুল আলমের অনুসারী ক্যাডার দিদারুল আলমসহ কয়েকজন তাকে ধরে নিয়ে যায়। পরে পৌরভবনে সচিবের কক্ষে নীবর চৌধুরীকে নিজ হাতেই মেয়র রফিকুল আলম মারধর করেন। ওই ঘটনার প্রতিবাদে ২০ ডিসেম্বর সাংবাদিকরা মানববন্ধন কর্মসুচি পালনকালে মেয়রের অনুসারীরা বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন এবং কর্মসূচি পালনকারী সাংবাদিকদেরকে ধরে ধরে জবাই করার হুমকি দিয়েছে। ওইদিনই সাংবাদিকরা জিডি করার সিদ্ধান্ত নেন। বর্তমানে ওসব জিডি‘র ব্যাপারে তদন্ত চলছে।
খাগড়াছড়িতে সংবাদপত্র এজেন্টকে উড়ো চিঠি দেয়ার ঘটনায় বিভিন্ন মহলের নিন্দা
খাগড়াছড়িতে কয়েকটি সংবাদপত্রের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে বিশিষ্ট সংবাদপত্র ব্যবসায়ী এবং সমাজসেবী রতন কুমার দে’ কে উড়ো চিঠি দিয়ে হুমকির ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন খাগড়াছড়ির বিভিন্ন রাজনৈতিক-পেশাজীবি-সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ।
খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী, সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা বিএনপি’র সভাপতি ওয়াদুদ ভূইয়া, জেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা রণ বিক্রম ত্রিপুরা, মাটিরাঙ্গার পৌর মেয়র মো: শামসুল হক, বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা’র নির্বাহী পরিচালক মোস্তফা সোহেল, বাংলাদেশ মানবাধিকার সাংবাদিক ফোরাম (বিএমএসএফ)-এর নির্বাহী পরিচালক খায়রুজ্জামান কামাল, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর জেলা কমিটির সাধারন সম্পাদক এ্যাড. নাসির উদ্দিন আহম্মেদ, খাগড়াছড়ি প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সাংবাদিক তরুণ কুমার ভট্টাচার্য্য, খাগড়াছড়ি প্রেসক্লাব সভাপতি জীতেন বড়–য়া, সাধারন সম্পাদক আবু তাহের মুহাম্মদ, খাগড়াছড়ি সাংবাদিক ইউনিয়ন (কেইউজে)-এর সভাপতি নুরুল আযম, সাধারন সম্পাদক কানন আচার্য্য, উদীচি শিল্পী গোষ্ঠির সভাপতি দীলিপ চৌধুরী, সাধারন সম্পাদক মো: নাজিম উদ্দিন, খাগড়াছড়ি পরিবেশ সুরক্ষা আন্দোলনের সাধারন সম্পাদক মুহাম্মদ আবু দাউদ, মাটিরাঙ্গা প্রেসক্লাবের সভাপতি এমএম জাহাঙ্গীর আলম, দীঘিনালা প্রেসক্লাবের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম রাজু, মানিকছড়ি প্রেস ক্লাবের সভাপতি মো: মাইন উদ্দিন, লক্ষ্মীছড়ি প্রেসক্লাবের সভাপতি মোবারক হোসেন, উপজেলা প্রেস ক্লাব, গুইমারা এর সভাপতি এম. সাইফুর রহমান।
পৃথক পৃথক বিবৃতিতে তারা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা এবং হুমকিদাতা দুর্বৃত্তদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানান।