খাগড়াছড়িতে ৩৫ সাংবাদিকের করা জিডি তদন্তে
অগ্রগতি নেই,আতংকে কাটছে দিন
॥ খাগড়াছড়ি সংবাদদাতা ॥ খাগড়াছড়িতে নিরাপত্তা চেয়ে ৩৫ সাংবাদিকের করা সাধারণ ডায়েরি (জিডি) তদন্তে কোনো অগ্রগতি নেই। এ বিষয়ে আদালতের নির্দেশনা থাকলেও পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো তৎপরতা চোখে পড়ছে না। সাংবাদিকদের উপর হামলা করা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। অন্যদিকে, সাংবাদিকরা দিন পার করছেন আতঙ্কের মধ্য দিয়ে।
পুলিশের দায়সারা ভূমিকার কারণে সন্ত্রাসীরা ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি জাতীয় ও আঞ্চলিক দৈনিক খাগড়াছড়িতে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে পত্রিকার এজেন্টকে হুমকি দিয়ে উড়োচিঠি দিয়েছে। এ নিয়ে পত্রিকার এজেন্টও থানায় জিডি করেছেন। তবে এ ক্ষেত্রেও পুলিশের কাজে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
গত ২৩ ডিসেম্বর খাগড়াছড়িতে নিরাপত্তা চেয়ে ৩৫ সাংবাদিকের করা সাধারণ ডায়েরি (জিডি) তদন্তে নির্দেশ দেন জেলার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আবু সুফিয়ান মো. নোমান। কিন্তু নির্দেশ পাওয়ার এক সপ্তাহ পরও তদন্তের কোনো অগ্রগতি নেই বলে অভিযোগ করেছেন সাংবাদিকরা।
তবে তদন্ত কর্মকর্তা খাগড়াছড়ি সদর থানার উপ-পুলিশ পরিদর্শক (এসআই) মাঈনউদ্দিন ভূঁইয়া বলেছেন, ‘তদন্ত চলছে।’ মাঈনউদ্দিন ভূঁইয়া সদ্য পদোন্নতি পেয়েছেন। তিনি থানার সর্বকনিষ্ঠ উপ-পুলিশ পরিদর্শক এবং এটাই তার ক্যারিয়ারে প্রথম কোনো কেসের তদন্ত।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সন্ত্রাসীদের সাথে খোদ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তারেক মোহাম্মদ আব্দুল হান্নানের সখ্যতা থাকার কারণে তদন্ত সঠিক পথে এগুতে পারছে না।
তবে এ অভিযোগ মিথ্যে বলে দাবি করেছেন তারেক মোহাম্মদ আব্দুল হান্নান। তিনি বলেছেন, ‘এ অভিযোগ সত্যি নয়। আইন নিজ গতিতেই চলবে। অপরাধীদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।’
এদিকে, গত ২৭ ডিসেম্বর খাগড়াছড়িতে বেশ কয়েকটি সংবাদপত্র ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে পত্রিকার এজেন্ট রতন কুমার দে-কে উড়ো চিঠি দেওয়া হয়। রতন কুমার দে তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি জানাতে খাগড়াছড়ি পুলিশ সুপার মো. মজিদ আলীর সাথে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় পুলিশ সুপারের পরামর্শ অনুযায়ী একটি সাধরণ ডায়েরি (জিডি) করেন তিনি। কিন্তু এ জিডির তদন্তেও কোনো অগ্রগতি নেই।
রতন কুমার দে জানিয়েছেন, ঘটনার ৪ দিন পার হয়ে গেলেও কোনো পুলিশ কর্মকর্তা একবারের জন্যেও এ বিষয়ে খোঁজ নিতে আসেনি।
প্রসঙ্গত, গত ১৮ ডিসেম্বর চেঙ্গীনদীতে বালু তোলার ছবি তুলতে গেলে খাগড়াছড়ি পৌরসভার মেয়র রফিকুল আলমের অনুসারী ক্যাডার দিদারুল আলমসহ কয়েকজন দৈনিক প্রথম আলোর আলোকচিত্র সাংবাদিক নিরবকে ধরে নিয়ে যায়। পরে পৌরভবনে সচিবের কক্ষে নিরবকে নিজ হাতেই মেয়র রফিকুল আলম মারধর করেন। ওই ঘটনার প্রতিবাদে ২০ ডিসেম্বর সাংবাদিকরা মানববন্ধন কর্মসুচি পালনকালে মেয়রের অনুসারীরা বিক্ষোভ প্রদর্শন করে এবং কর্মসূচি পালনকারী সাংবাদিকদেরকে ‘ধরে ধরে জবাই’ করার হুমকি দেয়। ওইদিনই সাংবাদিকরা জিডি করেন।
গত ২৩ ডিসেম্বর খাগড়াছড়ি সদর থানায় জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে ৩৫ সাংবাদিকের করা সাধারণ ডায়রিটি (জিডি) অনিবন্ধিত (নন-জিআর) মামলা হিসেবে তালিকাভুক্ত করে তদন্তের আদেশ দিয়েছিলেন খাগড়াছড়ির সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আবু সুফিয়ার মো. নোমান।