প্রাথমিক সমাপনী শিশুদের আত্মবিশ্বাস দেবে: প্রধানমন্ত্রী
প্রাথমিক স্তর অষ্টম শ্রেণিতে উন্নীত হওয়ায় পঞ্চম ও অষ্টমে দুটি আলাদা সমাপনী পরীক্ষার আয়োজন নিয়ে এ বছর নানা নাটকীয়তার পর সরকারপ্রধানের এই বক্তব্য এল।
বৃহস্পতিবার গণভবনে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি), জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) এবং প্রাথমিক সমাপনী ও ইবতেদায়ী পরীক্ষার ফলাফলের অনুলিপি গ্রহণ করে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অভিনন্দন জানান প্রধানমন্ত্রী।
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষার ফলের অনুলিপি প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন। এরপর নয় শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানরা তাদের নিজ নিজ বোর্ডের ফলাফলের অনুলিপি প্রধানমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করেন।
এর আগে প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি সমাপনীর ফলাফলের অনুলিপি প্রধানমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার।
বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী প্রাথমিক পর্যায়কে শিক্ষার ভিত্তি হিসেবে বর্ণনা করেন।
এ সমাপনী পরীক্ষা শিক্ষার্থীদের মধ্যে এক ধরনের আস্থার সৃষ্টি করে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “(শিক্ষার্থীরা) সার্টিফিকেট পাচ্ছে। মনে করবে, কিছু করলাম, তাই সার্টিফিকেট পেলাম। এতে আত্মবিশ্বাস জন্মাবে।”
মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তে ২০০৯ সালে পঞ্চম শ্রেণিতে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার প্রচলন হয়। পরের বছর মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের জন্য চালু হয় ইবতেদায়ি সমাপনী পরীক্ষা। একই বছর অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদাভাবে আয়োজন করা হয় জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা।
আগে পঞ্চম শ্রেণিতে আলাদা করে বৃত্তি পরীক্ষা নেওয়া হলেও প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি সমাপনী চালুর পর ওই পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের মধ্য থেকেই বৃত্তি দেওয়া হচ্ছে।
জাতীয় শিক্ষানীতির আলোকে প্রাথমিক শিক্ষাকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত উন্নীত করে গত ১৮ মে তা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে ন্যস্ত করে সরকার।
এরপর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবার পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষা উঠিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত মন্ত্রিসভায় তা আটকে যায়। শেষ পর্যন্ত বছর শেষে আগের মত দুই পরীক্ষাই হয়।
এবার প্রাথমিকে ৯৮.৫১ শতাংশ এবং ইবতেদায়ীতে ৯৫.৮৫ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে। আর জেএসসি-জেডিসিতে পাসের হার ৯৩.০৬ শতাংশ।
এবার প্রাথমিক সমাপনীতে ছাত্রদের তুলনায় ছাত্রীরা ভালো ফল করেছে। ছাত্রদের পাশের হার ৯৮ দশমিক ৪৪, সেখানে ছাত্রীদের পাশের হার ৯৮ দশমিক ৪৫।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ছেলেদের সংখ্যা কেন কমে আসছে, এটা দেখতে হবে। কারণ আমরা জেন্ডার ইকোয়ালিটিতে বিশ্বাস করি।”
পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে যখন বৃত্তি পরীক্ষা হতো, তখন কিছু শিক্ষার্থীর প্রতি বিশেষ নজর দেওয়া হতো জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এতে করে বাকিদের প্রতি শিক্ষকদের মনোযোগ দেওয়া সম্ভব হতো না।”
“৩০/৪০ জনের মধ্যে যারা মেধাবী তারাই সুযোগ পাবে, বাকিরা বঞ্চিত হবে; এটা কেন? সবাই পরীক্ষা দেবে। তার মধ্যে থেকে যারা মেধাবী তারাই বৃত্তি পাবে,” যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।
সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে শিক্ষক ও অভিভাবকসহ সবাইকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।
“সবাইকে আমার একটা অনুরোধ থাকবে…সন্ত্রাস আর জঙ্গীবাদের স্থান বাংলাদেশে হবে না। যারা শিক্ষার সাথে জড়িত, তাদের ছোট ছোট শিশুদের মাথায় ঢোকাতে হবে যে, আমরা শান্তি চাই বা শান্তি ছাড়া উন্নতি সম্ভব না।
“অভিভাবক, শিক্ষক, কর্মস্থলে যারা আছে, মসজিদের ইমাম বা প্রত্যেক ধর্মের কাছে আমার অনুরোধ থাকবে… আমরা শান্তি চাই, উন্নতি চাই, প্রত্যেকের জীবন সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে চাই, সকলের জীবনের নিরাপত্তা চাই।”