বাঙ্গালীদের আনারস বাগান ধ্বংস করে দিয়েছে সন্ত্রাসীরা
রাঙমাটির নানিয়ারচর উপজেলায় আবারো বাঙ্গালীদের আনারস বাগান ধ্বংস করে দিয়েছে সন্ত্রাসীরা। এ ঘটনায় ওই এলাকায় জনমনে অসন্তোষ ও উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। শনিবার দিবাগত রাতে উপজেলার বুড়িঘাট ইউনিয়নের দক্ষিণ পশ্চিম হাতিমারা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত শনিবার দিবাগত রাতে বুড়িঘাট ইউনিয়নের ৪ নং টিলার স্থানীয় বাসিন্দা মঈনুল হোসেনের প্রায় চার কানি জমির আনারস বাগানের ৪৫ হাজার চারা সন্ত্রাসীরা কুপিয়ে ও উপরে ফেলে সম্পূর্ণ নষ্ট করে দেয়। ঘটনাস্থলটি উপজাতীয় অধ্যুষিত এলাকা বলে স্থানীয়রা জানায়। গভীর রাতে এ ঘটনা ঘটলেও রবিবার বিকেলে এ ঘটনা জানাজানি হয়।
বুড়িঘাট ইউনিয়ন পরিষদের ৬ নং ওয়ার্ড মেম্বার মো. শফি ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘এ ঘটনা শোনার পর রবিবার বিকেলে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখতে পাই ৩০ হাজারের অধিক আনারস চারা সন্ত্রাসীরা উপরে ও কেটে ফেলেছে।’ তবে নানিয়ারচর থানার দায়িত্বে থাকা এসআই শাহজাহান এর কাছে এ ঘটনা সম্পর্কে রবিবার রাত ১০টার দিকে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি এ ধরনের কোন খবর জানেন না বলে জানান।
ক্ষতিগ্রস্ত বাগান মালিক মো. সঈনুল হোসেন জানান, তিনি গত ৬/৭ বছর আগ থেকে তার নিজস্ব পনে ৫ একর জায়গায় আনারস বাগন করে আসছেন। এ বছরও তিনি ৪ কানি জায়গায় আনারস চারা লাগিয়েছেন। গত শুক্রবার পর্যন্ত তিনি ওই জায়গায় আনারসের চারা লাগান। এর একদিন পর তিনি খবর পান তার বাগানের চারা কেটে ও উপরে ফেলা হয়েছে। ঘটনাস্থলে গিয়ে ঘটনার সত্যতা পেয়ে তিনি এ বিষয়ে জানাতে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান প্রমোদ খীসাকে বার বার ফোন করেও পাননি বলে জানান। এ জায়গা নিয়ে কারো সাথে কোন বিরোধ নেই বলেও তিনি জানান।
তিনি ধারণা করছেন এ ঘটনা উপজাতীয় সন্ত্রাসীরা ঘটিয়েছে। তিনি আরোও জানান, তার ওই জায়গায় আনারস বাগান করতে গেলে বিগত পাঁচ বছর আগে পাহাড়ি সংগঠন ইউপিডিএফ তার কাছ থেকে ১০হাজার টাকা চাঁদা নেয়। এ ঘটনায় প্রায় চার লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানান ক্ষতিগ্রস্ত মো. মঈনুল হোসেন।
উল্লেখ্য, নানিয়ারচর তথা পার্বত্য চট্টগ্রামে চাঁদা না পেয়ে উপজাতীয় সন্ত্রাসী কর্তৃক বাঙালীর আনারস বাগান কর্তনের ঘটনা ঘটেছে।
২০১৪ সালের ডিসেম্বর থেকে চলতি বছর ডিসেম্বর পর্যন্ত এই দুই বছরে পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় চার লাখ ৯৪ হাজারেরও বেশি গাছ কেটে ফেলেছে পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা। যার সবগুলোই বাঙালিদের। এর কোনটির পেছনে রয়েছে বাঙালি-উপজাতি ছেলে-মেয়ের প্রেম বা বিয়ে, কোনটিতে চাঁদা না দেয়া। গত ১৪ নভেম্বর খাগড়াছড়ির লক্ষ্মীছড়ি উপজেলার ময়ূরখিলে ৮৪টি মশলা গাছ ও ৪টি আম গাছ কেটে ফেলে উপজাতি সন্ত্রাসীরা।
১৪ নভেম্বর খাগড়াছড়ির রামগড়ে যৌথ খামারে আড়াই হাজার পেঁপে গাছ, ৬শ’ কলা, ৩০টি লিচু ও ২০টি লেবু গাছ কেটে ফেলে, ২৮ আগস্ট বান্দরবানের আলীকদমে গাজী রাবার বাগানের ৬৯৩টি রাবার গাছ কাটা হয়, ২৭ ফেব্রুয়ারি খাগড়াছড়ির সিন্দুকছড়িতে কর্ণেল বাগানে ২শ’টি ফলের গাছ, ২৫ জানুয়ারি বান্দরবানের আলীকদমে এক হাজার ৯৬৭টি রাবার গাছ ও ৭টি আম গাছ কাটা হয়।
আগের বছর ১৩ আগস্ট খাগড়াছড়ির লহ্মীছড়ির রেপাতলীতে ২০ হাজার রাবার গাছ ও ৫০টি কলা গাছ ও ১১ জানুয়ারি রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলার জামতলীতে ৩৫ হাজার আনারস গাছ কেটে ফেলে দুর্বৃত্তরা। ২০১৪ সালের ১৫ ডিসেম্বর একই উপজেলার বগাছড়িতে ৩ লাখ ফলন্ত আনারসের গাছ ও ২১ হাজার সেগুন গাছ কেটে ফেলা হয়। নির্ধারিত চাঁদা না দেওয়ায় গতবছর বান্দরবানের লামা উপজেলায় একটি রাবার বাগানের গোডাউন পুড়িয়ে দেয় জেএসএস-সন্ত লারমা গ্রুপের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। এরপরও চাঁদা না দিলে পুরো বাগান পুড়িয়ে দেয়ার হুমকী দেয়া হয়।