বাড়িতে ঢুকে গুলি চালিয়ে এমপি লিটনকে হত্যা
শনিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে সর্বানন্দ ইউনিয়নের শাহাবাজ এলাকায় নিজের বাড়িতে হামলার শিকার লিটনকে সঙ্গে সঙ্গে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলেও তাকে বাঁচানো যায়নি।
কারা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, সে বিষয়ে কোনো ধারণা দিতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। হামলাকারীদের ধরতে অভিযান শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
লিটনের দল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা হত্যাকাণ্ডের জন্য জামায়াতে ইসলামীকে সন্দেহ করছেন। তবে এই দলটির কোনো প্রতিক্রিয়া তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া যায়নি।
২০০৫ সালে হবিগঞ্জে আওয়ামী লীগের শাহ এএমএস কিবরিয়াকে হত্যার এক দশক পর কোনো সংসদ সদস্য হত্যাকাণ্ডের শিকার হলেন।
৪৮ বছর বয়সী লিটন এবারই প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার (মেরিন) ছিলেন; আনন্দ গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালকও ছিলেন তিনি।এক শিশুকে গুলি করে দেশজুড়ে সমালোচিত হওয়ার এক বছরের মধ্যে নিজেই গুলিতে প্রাণ হারালেন লিটন। শিশু শাহাদাত হোসেন সৌরভকে গুলি করার মামলায় গত বছর গ্রেপ্তার হয়ে কিছুদিন কারাগারে থেকে জামিনে ছাড়া পান তিনি।
সুন্দরগঞ্জ থানার ওসি আতিউর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, সুন্দরগঞ্জ উপজেলার শাহাবাজ এলাকায় নিজের বাড়িতে গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর সংসদ সদস্য লিটনকে সঙ্গে সঙ্গে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. বিমল চন্দ্র রায় সাংবাদিকদের জানান, এমপি লিটনকে বাঁচানোর চেষ্টায় সফল হননি তারা।
লিটনের বুকের বাম দিকে দুটো এবং বাম হাতে একটি গুলি লেগেছিল বলে এই চিকিৎসক জানান।
এই সংসদ সদস্যের স্ত্রী সৈয়দা খুরশিদ জাহান স্মৃতি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মাগরিবের নামাজের পরপর মোটর সাইকেলে অজ্ঞাতপরিচয় তিন যুবক বাড়িতে ঢুকে গুলি করে পালিয়ে যায়।”
বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের শাহাবাজ এলাকার এই বাড়িতেই গুলি করা হয় এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনকে
সাংসদের কর্মচারী জুয়েল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সন্ধ্যায় মোটর সাইকেলে পাঁচ যুবক স্যারের কাছে আসেন। এদের মধ্যে তিনজন ঘরে ঢুকে স্যারের সঙ্গে কথা বলতে না বলতেই এলোপাতাড়ি গুলি করে চলে যায়।”
লিটনের লাশ রংপুর মেডিকেল কলেজ মর্গে রয়েছে। রোববার ময়নাতদন্তের পর পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হবে বলে হাসপাতালের উপ-পরিচালক অজয় কুমার রায় জানিয়েছেন।লিটনের শ্যালক সৈয়দ বদিউল কারেমীন বাদল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “লাশ কোথায় নেওয়া হবে, সে বিষয়ে আগামীকাল (রোববার) সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
হামলার পরপরই লিটন সমর্থকরা বামনডাঙ্গা-নলডাঙ্গা সড়ক ও বালার ছিড়াসহ বিভিন্ন স্থানে অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে। বন্ধ হয়ে যায় সব উপজেলার সব হাট-বাজার।
রাত পৌনে ৮টার দিকে উপজেলা সদরের কলেজ রোডে এক জামায়াতকর্মীর বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়।বামনডাঙ্গা এলাকায় জামায়াতের শক্তিশালী অবস্থান রয়েছে। ২০১৩ সালে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর যুদ্ধাপরাধের রায়ের পর দলটির কর্মীরা পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা চালায়, তাতে তিন পুলিশ সদস্যসহ ছয়জন নিহত হয়েছিলেন।
এমপি লিটনকে হত্যার পর স্থানীয়দের অবরোধ ও বিক্ষোভে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে বলে গাইবান্ধার পুলিশ সুপার মো. আশরাফুল ইসলাম জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, “ঘটনার পর পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে, জড়িতদের গ্রেপ্তারের অভিযান শুরু হয়েছে।”
এদিকে গাইবান্ধা-১ আসনের সংসদ সদস্য লিটনের মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়েছেন তার দল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল আলম হানিফ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এই হত্যাকাণ্ড দুঃজনক, কাপুরুষোচিত। এর নিন্দা জানাই।
“আশা করি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রকৃত হত্যাকারীদের খুঁজে বের করবে এবং কেন এটা ঘটিয়েছে তা উদ্ধার করবে।”
হত্যার জন্য কাদের সন্দেহ করা হচ্ছে জানতে চাইলে হানিফ বলেন, “তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কিছুই বলব না। তবে প্রাথমিকভাবে যুদ্ধাপরাধী জামাত-শিবিরকে সন্দেহ করা হচ্ছে। কারণ উনি যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন।”
এদিকে গাইবান্ধা-১ আসনের সংসদ সদস্য লিটনের মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
গাইবান্ধা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু বকর সিদ্দিক জানান, রোববার কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক ও সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হকের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল সুন্দরগঞ্জ আসছেন।
খুনিদের ধরার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
দলের সংসদ সদস্য লিটন হত্যাকাণ্ডে শোক প্রকাশ করে খুনিদের গ্রেপ্তারের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি এক বিবৃতিতে বলেন, দেশ যখন উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে তখন একটি মহল দেশে অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করে স্বার্থ হাসিলের অপচেষ্টা চালাচ্ছে, হত্যা ও সন্ত্রাসের পথ বেছে নিয়েছে, যা কোনোভাবেই বরদাশত করা হবে না।
“তাদের হত্যার রাজনীতির পথ ধরেই তারা নির্বাচিত সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনকে হত্যা করেছে। এছাড়া আজ খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এবং স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক জেড এ মাহমুদকে হত্যার জন্য গুলি করা হয়েছে, গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হলে একজন পথচারী নিহত হন।”
প্রধানমন্ত্রী অবিলম্বে খুনিদের খুঁজে বের করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়ার পাশাপাশি স্থানীয় জনগণকে ধৈর্য ধরারও আহ্বান জানান।