রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনা করে ‘আশাবাদী’ বিএনপি
রোববার সন্ধ্যায় বঙ্গভবন থেকে বেরিয়ে নয়া পল্টনে দলীয় কার্যালয়ে ফিরে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বৈঠকে খুশি হয়েছি, আশাবাদী হয়ে উঠেছি।”
দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করে সংসদ থেকে ছিটকে পড়া বিএনপি বারবার সংলাপের আহ্বান জানিয়ে এলেও তাতে সাড়া মেলেনি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের।
এর মধ্যে গত মাসে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন এবং পরবর্তী নির্বাচন নিয়ে ১৩ দফা প্রস্তাব তুলে ধরেন খালেদা জিয়া।
এই প্রস্তাব নিয়ে বিএনপি রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে আলোচনা চাইলেও সময় পাননি। এর মধ্যে নতুন ইসি গঠনে রাজনৈতিক দলগুলোকে সংলাপে ডাকেন রাষ্ট্রপ্রধান, যাতে প্রথম দল হিসেবে ডাক পড়ে বিএনপির।
দলের ১০ জন নেতাকে সঙ্গে নিয়ে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে এক ঘণ্টা ধরে বৈঠক করেন খালেদা জিয়া। বঙ্গভবন থেকে বেরিয়ে আসার সময় তাদের চোখেমুখে ছিল প্রফুল্ল ভাব। নতুন ইসি গঠনে রাষ্ট্রপতি যে সার্চ কমিটি গঠন করবেন, সে বিষয়ে বিএনপি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দিয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানান ফখরুল।
বিএনপি সাবেক একজন প্রধান বিচারপতিকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের বাছাই কমিটি গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে, যারা নতুন নির্বাচন কমিশনারদের নাম প্রস্তাব করবেন। তাদের মধ্য থেকে সিইসি ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দেবেন রাষ্ট্রপতি।
সার্চ বা বাছাই কমিটিতে কোনো ব্যক্তির নাম প্রস্তাব করা হয়েছে কি না- প্রশ্ন করা হলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আমরা বলেছিই তো বাছাই কমিটির ব্যাপারে আমাদের দলের চেয়ারপারসন সুনির্দিষ্টভাবে তার মতামত মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে দিয়েছেন।”
বিএনপির চাওয়া, বাছাই কমিটির সদস্যদের সবাই ‘দল নিরপেক্ষ’ হবেন, বিতর্ক থাকলে চলবে না, অবসরের পর সরকারের লাভজনক পদে দায়িত্ব পালন করেছেন এমন ব্যক্তিদেরও নেওয়া যাবে না।
বিএনপির প্রস্তাব শক্তিশালী একটি নির্বাচন কমিশন ও সার্চ কমিটি গঠনের সহায়ক হবে বলে মন্তব্য করেছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ।
ফখরুল বলেন, “মহামান্য রাষ্ট্রপতি একজন আপাদমস্তক রাজনৈতিক নেতা, তিনি দীর্ঘকাল ধরে বাংলাদেশের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত রয়েছে এবং সর্বজন শ্রদ্ধেয় একজন মানুষ।
“আমরা এটা জোর দিয়ে বলতে চাই, রাষ্ট্রপতির সাথে আলোচনার প্রেক্ষিতে আমরা আশাবাদী হয়েছি যে, এই সঙ্কট নিরসনে রাষ্ট্রের অভিভাবক হিসেবে যথাযথ ভূমিকা পালন করবেন (তিনি)।”
বিএনপিবিহীন নির্বাচন এবং ‘প্রহসনের’ সেই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সরকার গঠনের ফলে বাংলাদেশে এখন রাজনৈতিক সঙ্কট চলছে বলে বিএনপির দাবি; তবে তা মানতে নারাজ আওয়ামী লীগ।
সংবিধান থেকে মুছে যাওয়া নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে আসা বিএনপির সঙ্গে রাষ্ট্রপতির এই সংলাপে কোনো ফল আসবে বলেও মনে করছে না আওয়ামী লীগ।
ক্ষমতাসীন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের রোববারই সাংবাদিকদের বলেন, “সালিশ মানি, তালগাছটা আমার এই যদি বিএনপির নীতি হয়, তাহলে আজকের সংলাপ সফল হবে না।”
বিএনপি আশা করছে, রাষ্ট্রপতির উদ্যোগ ‘সঙ্কট’ নিরসনে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
ফখরুল বলেন, “আমরা আশা করি, বর্তমান রাজনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণের জন্য রাষ্ট্রপতির এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে একটা ফলপ্রসূ ভূমিকা পালন করবে এবং এই আলোচনার প্রক্রিয়াটা অব্যাহত থাকবে।”
আলোচনায় সময় দেওয়ার জন্য রাষ্ট্রপতিকে ধন্যবাদ জানিয়ে খালেদা জিয়া বঙ্গভবনে দিয়ে আসা তার প্রস্তাবের সঙ্গে বলেছেন, “আমি আশা করি আমাদের প্রস্তাবগুলো যৌক্তিক ও গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হবে।
“আশা করি ভবিষ্যতে এ বিষয়ে অধিকতর আলোচনার জন্য আপনি (রাষ্ট্রপতি) আমাদের আবারও আমন্ত্রণ জানাবেন।”
ফখরুল বলেন, রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ‘অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে ও উষ্ণ আমেজে’ আলোচনা হয়েছে। রাষ্ট্রপতি তার স্বভাবসুলভ আন্তরিকতা দিয়ে খালেদা জিয়া ও বিএনপি নেতাদের স্বাগত জানিয়েছেন।তিনি বলেন, ইসি নিয়োগে এখনও কোনো আইন না হওয়ায় এখন রাষ্ট্রপতির কাছেও বিকল্প কোনো পথ নেই। “সেজন্য রাজনৈতিক দলের মতৈক্যের ভিত্তিতেই নির্বাচন কমিশন গঠন করার উদ্যোগ মহামান্য রাষ্ট্রপতির নেওয়া প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি এবং দেশনেত্রী মনে করেন বলে তা উত্থাপন করেছেন।
“তিনি (রাষ্ট্রপতি) এই অভিমতও প্রকাশ করেন যে, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে আলোচনা ও সংলাপের কোনো বিকল্প নেই। এই সমস্যার সমাধানগুলো আলোচনার মাধ্যমে হতে হবে বলে রাষ্ট্রপতি মনে করেন।”
বিএনপির প্রস্তাব রাষ্ট্রপতি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েনে জানিয়ে ফখরুল বলেন, “রাষ্ট্রপতি প্রথমেই উল্লেখ করেছেন যে যেহেতু আপনারাই একমাত্র আমাকে এই বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন, সেজন্যই আপনাদেরকে আমি প্রথম আমন্ত্রণ জানিয়েছি, আপনাদের মতামতকে প্রাথমিকভাবে বিবেচনার করার জন্য আমি নিয়েছি।
“মহামান্য রাষ্ট্রপতি মনে করেন যে, সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য, নিরপেক্ষ, সাহসী ও যোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠন করা জাতির জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। সেজন্য সকল রাজনৈতিক দলের সমর্থন তিনি আশা করেন এবং এ বিষয়ে সকলে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে- এটাও রাষ্ট্রপতি আশা করেন।”
রাষ্ট্রপতি অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে ইসি নিয়োগের পদ্ধতি ঠিক করে ফের রাজনৈতিক দলগুলোকে বৈঠকে ডাকবেন বলে আশা করছে বিএনপি।
“আমরা আশা করছি, আগামী মাসের মধ্যে তিনি এই পুরো প্রক্রিয়াটা শেষ করবেন। তিনি (রাষ্ট্রপতি) আশা করেছেন যে, আগামী মাসে মধ্যে এটা শেষ করতে চান।”
সংলাপে ফখরুল ছাড়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, জমিরউদ্দিন সরকার, আবদুল মঈন খান, মাহবুবুর রহমান, রফিকুল ইসলাম মিয়া, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী অংশ নেন।