রাষ্ট্রপতি যে ইসি দেবেন তা মেনে নেব: প্রধানমন্ত্রী
আগামী সংসদ নির্বাচন আয়োজনের ভার থাকবে যাদের হাতে সেই নির্বাচন কমিশনে কারা থাকবেন তা নিয়েই এখন সবচেয়ে বেশি আলোচনা রাজনৈতিক মহলে।
২০০৪ সালের ৫ জানুয়ারির ভোট বর্জন করে আসা বিএনপি বলছে, কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশন ‘সরকারের আজ্ঞাবহ’। নতুন নির্বাচন কমিশন এই ধারা থেকে বেরোতে না পারলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।
এজন্য ‘শক্তিশালী’ নির্বাচন কমিশন গঠনে প্রস্তাব দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তার ওই প্রস্তাব পৌঁছে দেওয়া হয়েছে বঙ্গভবনে, বিদেশ সফরে থাকা রাষ্ট্রপতিও বিষয়টি নিয়ে বিজয় দিবসের পর দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসার কথা জানিয়েছেন।
এ প্রেক্ষাপটে বৃহস্পতিবার সংসদের ১৩তম অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “মাননীয় রাষ্ট্রপতি উদ্যোগ নিয়েছেন। মহামান্য রাষ্ট্রপতি আলাপ আলোচনা করবেন। সকল দলের সঙ্গে আলোচনা করে তিনি যেভাবে চাইবেন সেই ভাবে নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন।
“মহামান্য রাষ্ট্রপতি কী করেন সেটা আমরা দেখব এবং সেইভাবে আমরা মেনে নেব।”
এর আগে ২০১২ সালে নির্বাচন কমিশন গঠনের আগেও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসেছিলেন রাষ্ট্রপতি। পরে সার্চ কমিটি করে কাজী রকিব নেতৃত্বাধীন এই কমিশন বেছে নিয়েছিলেন।
এখন রাষ্ট্রপতির দলগুলোর সঙ্গে বসার ঘোষণায় সন্তোষ প্রকাশ করলেও আগেরবারের মতো ‘ক্ষমতাসীনদের প্রেসক্রিপশন’ অনুযায়ী কমিশন যেন না হয় সে প্রত্যাশা জানিয়েছে বিএনপি।
কারা নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বে আসতে পারবেন আর কারা পারবেন না সে বিষয়ে প্রস্তাব রেখেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। অবসরপ্রাপ্ত মন্ত্রিপরিষদ সচিব এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে দায়িত্ব পালনকারী কোনো সরকারি কর্মকর্তাকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিয়োগে আপত্তি জানিয়েছেন তিনি।
এছাড়া কোনো সরকারি কর্তৃপক্ষ বা প্রতিরক্ষা কর্মবিভাগের চাকরি থেকে অবসর, পদত্যাগ বা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের মেয়াদ শেষ বা চুক্তি বাতিলের পর তিন বছর না পেরোলে তিনি নির্বাচন কমিশনের কোনো দায়িত্বে আসতে পারবেন না বলে খালেদার প্রস্তাব।
নির্বাচন কমিশন নিয়োগে বাছাই কমিটি গঠনের একটি রূপরেখাও দিয়েছেন বিএনপি নেত্রী।
এ বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “আজকে দেখছি বিএনপি ভোট চুরি নিয়ে কথা বলছে। নির্বাচন নিয়ে কথা বলছে। নির্বাচন কমিশন কীভাবে হবে তা নিয়ে শলা পরামর্শ করছে।”
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান প্রধান আইন প্রশাসক থাকাকালে ১৯৭৮ সালের হ্যাঁ-না ভোটের কথা মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের এদেশের অভিজ্ঞতা রয়েছে সেই ’৭৮ এর হ্যাঁ-না ভোটের।”
এরপর ১৯৭৯ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের কথা তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, “ঊনাশির সেই ভোট কারচুপি থেকে শুরু করে যতগুলি নির্বাচন দেখেছি … এমনকি মাগুরা, মেহেরপুর ও ঢাকা ১০ আসনের নির্বাচন, প্রত্যেক নির্বাচনের চেহারা আমাদের দেখা আছে।”
খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “বিএনপি যে নির্বাচন করেছিল, তাতে কয়টা দল অংশ নিয়েছিল? কত শতাংশ ভোট পড়েছিল? সমগ্র বাংলাদেশে সেনা মোতায়েন করে দিয়ে নির্বাচনের নামে প্রহসন করেছিল।
“এভাবে ভোট চুরি করেছিল বলেই খালেদা জিয়া ক্ষমতায় থাকতে পারেনি। ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন করে ৩০ মার্চ খালেদা জিয়া আন্দোলনের রুদ্ররোষে বিদায় নিতে বাধ্য হয়েছিল। সেটা এখন ভুলে গেছে। ২০০৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে তারা যে খেলা খেলেছিল। তারা সেই সময় নির্বাচনের ঘোষণা দেয়। এতে তাদের অনেককেই সেই সময় নির্বাচিত ঘোষণা দেওয়া হয়। এ ধরনের ঘটনা যারা ঘটিয়েছে তাদের মুখ থেকে অনেক পরামর্শ, উদ্যোগ এখন শোনা যায়।”
বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে আওয়ামী লীগের ভূমিকা তুলে ধরে তিনি বলেন, “নির্বাচনটা অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হোক সেটাই আমরা চাই। জনগণের ভোট ও ভাতের অধিকারের আন্দোলন তো আমরাই করেছি, যার জন্য আমাদের অনেকে জীবনও দিয়েছি।
“আজকে গণতন্ত্রের যে সুষ্ঠু ধারা সৃষ্টি হয়েছে সেটা অব্যাহত থাকুক। তাহলে এদেশের উন্নতি ত্বরান্বিত হবে।”
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচাল এবং এর বর্ষপূর্তি ঘিরে বিএনপি-জামায়াত জোটের আন্দোলনে সহিংসতায় প্রাণহানির কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “নির্বাচনে না এসে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তার জন্য মানুষ কেন খেসারত দেবে?
“মানুষকে পুড়িয়ে মেরেছে। এতগুলি মানুষের জীবন নিল এ ব্যাপারে জাতির কাছে খালেদা জিয়াকে ক্ষমতা চাইতে হবে। কেন মানুষ পুড়িয়ে মারল তার জন্য ক্ষমা চাইতেই হবে।”
নাশকতার এসব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির তাগিদ দেন প্রধানমন্ত্রী: “আমি চাই দ্রুত মামলাগুলির যেন শাস্তি হয়।”
নিজের রাজনৈতিক অবস্থান তুলে ধরতে গিয়ে শেখ হাসিনা সংসদে বলেন, “আমি কখনোই নিজের জীবনের মায়া করিনি। মানুষের জন্য কতটুকু কাজ করতে পেরেছি সেই চিন্তাটাই করেছি। এভাবে কাজ করেছি বলেই এই উন্নতি।”
দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, “যারাই দুর্নীতি করুক, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। সরকার সেই নীতিতে চলছে। আমরা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি।”