পার্বত্যাঞ্চলের শান্তি চুক্তির ১৯ বছর পূুর্তিতে প্রশাসন, রাজনৈতিক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সামাজিক বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে ২ ডিসেম্বর এক শোভাযাত্রা ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। শোভাযাত্রাটি জেলা পরিষদ থেকে শুরু হয়ে শহরের বিভিন্ন সড়ক পদক্ষিন শেষে টাউন হলে গিয়ে শেষ হয়। শোভাযাত্রায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খাগড়াছড়ি সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি।
জেলা পরিষদের প্রাঙ্গনে শোভাযাত্রা শুরুর আগে সকলেই সমবেত হয়ে বক্তারা বলেন, পাহাড়ে শান্তি সম্প্রীতি ও উন্নয়ন শান্তি চুক্তির ফসল। বর্তমান সরকার শান্তি চুক্তি করে অস্থিতিশীল পার্বত্যাঞ্চলকে শান্তি সম্প্রীতিতে রূপ দিয়েছে। ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর বর্তমান সরকারের সঙ্গে শান্তি চুক্তিতে আবদ্ধ হয় জনসংহতি সমিতির শান্তিবাহিনীর সদস্যরা। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী তিন পার্বত্য জেলায় প্রায় দুই হাজার শান্তি বাহিনীর সদস্য অস্ত্র সমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে। সরকার তৎকালীন সময়ে অস্ত্র সমর্পণকৃত শান্তিবাহিনীর সদস্যদের আর্থিক সহযোগিতা এবং যোগ্যতা অনুযায়ী সরকারি বিভিন্ন বিভাগে চাকরি দেন।
শোভাযাত্রাটিতে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ানম্যান কংজরী চৌধুরী, বিগ্রেডিয়ার জেনারেল স,ম মাহবুবুল আলম (এসজিপি পিএসসি), অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এটিএম কাউছার সহ বিভিন্ন দফতরের প্রশাসনিক কর্মকর্তাদ্বয় শোভাযাত্রায় নেতৃত্ব দেন।
এদিকে পার্বত্য চট্টগ্রাম সমঅধিকার আন্দোলনের (পার্বত্য অঞ্চলের বাঙালিদের একটি সংগঠন) খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সভাপতি এ্যাডভোকেট আব্দুল মালেক মিন্টু পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তিকে অসাংবিধানিক ও বৈষম্যমূলক আখ্যায়িত করে বলেন, এ চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশের সংবিধানকে অস্বীকার করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, ‘শুধু তাই নয়, এ অঞ্চলে যুগ যুগ ধরে বসবাসকারী একটি বিশাল জনগোষ্ঠী বাঙালিদের অধিকার হরণ করা হয়েছে। সম্প্রতি অবৈধ চুক্তির ফসল ভূমি বিরোধ নিস্পত্তি কমিশন আইন সংশোধন করে সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামকে বিচ্ছিন্ন করার পথ সুগম করেছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতির সমিতির (এমএন লারমা) সভাপতি সুধাসিন্দু খীসা বলেন, চুক্তি বাস্তবায়নে এখনো অনেক বিষয় রয়ে গেছে। ভূমি কমিশন যদি যথাযথভাবে কাজ করে এবং কাজ করার জন্য যদি আন্তরিক হন তাহলে পার্বত্য চট্টগ্রামে দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা সমস্যার কিছুটা হলেও পরিষ্কার হবে। সরকারের বিভিন্ন ভূমিকায় পাহাড়ে অবিশ্বাসের জন্ম দিয়েছে।
এদিকে বর্ণাঢ্য র্যালী, আনন্দ শোভাযাত্রাসহ নানা আয়োজনের মধ্যদিয়ে গুইমারায় পালিত হলো ঐতিহাসিক পার্বত্য শান্তি চুক্তির ১৯তম বর্ষপূর্তী। দিবসটি পালন উপলক্ষ্যে জেলা জুড়ে নানা কর্মসুচীর আয়োজন করা হয়। সকালে জেলার গুইমারাতে সনাবাহিনীর ২৪ আর্টিলারী ব্রিগেড়, গুইমারা রিজিয়নের উদ্যোগে বেলুন ও শান্তি পায়রা উড়িয়ে বর্ষপূর্তীর শুভ উদ্ভোধন করেন গুইমারা রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেড়িয়ার জেনারেল মোঃ কামরুজ্জামান।
পরে গুইমারা কলেজ মাঠ থেকে একটি বর্ণাঢ্য র্যালী বের হয়ে উপজেলার প্রধান প্রধান সড়ক ঘুরে আর্মি ষ্টেডিয়ামে গিয়ে শষ হয়। র্যালীতে খাগড়াছড়ি দক্ষিনাঞ্চল তথা রামগড়, মাটিরাঙ্গা, লক্ষ্মিছড়ি ও মানিকছড়ি উপজেলার কয়েক হাজার পাহাড়ী-বাঙ্গালী অংশগ্রহন নেন। পরে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এতে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী, বিজিবি’র গুইমারা সেক্টর কমান্ডার কর্ণেল জাহিদ সুলতান, মাটিরাঙ্গা জোন কমান্ডার লেঃ কর্ণেল জিল্লুর রহমান, সিন্দুকছড়ি জোন অধিনায়ক গোলাম ফজলে রাব্বি, মানিকছড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ¤্রাগ্য মারমা, লক্ষ্মিছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান সুপার জ্যাতি চাকমা প্রমুখ।
বক্তারা আলোচনায় শান্তি চুক্তির বিভিন্ন দিক তুলে ধরে বলেন, আওয়ামীলীগ সরকারের আমলেই পার্বত্য চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে, এ সরকারই তা বাস্তবায়ন করবে। বিকালে ঢাকা চট্টগ্রাম থেকে আগত শিল্পীদের মন মাতানো গানে উৎসব মুখর হয়ে উঠে পুরো আর্মি ষ্টেডিয়াম।