সন্ত্রাসীদের পক্ষ নেয়া পুলিশ কর্মকর্তাদের অপসারণ চেয়ে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজি) বরাবরে স্মারকলিপি
চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে হামলাকারী সন্ত্রাসীদের পক্ষ নেয়া পুলিশ কর্মকর্তাদের অপসারণ চেয়ে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজি) বরাবরে স্মারকলিপি দেয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন ও চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব যৌথভাবে বিভাগীয় কমিশনারের মাধ্যমে এই স্মারকলিপি দিয়েছে।
শনিবার (১০ ডিসেম্বর) দুপুরে দেয়া এই স্মারকলিপিতে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার ধারা পরিবর্তন করে দ্রুত বিচার আইন সংযোজনের দাবি জানিয়েছে সংগঠন দুটি।
এর আগে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত এক সমাবেশে সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) দেবদাস ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসীদের পক্ষ নেয়ার অভিযোগ এনেছেন সাংবাদিক নেতারা। তারা অবিলম্বে সিএমপি থেকে দেবদাস ভট্টাচার্যকে অপসারণের দাবি জানান।
গত মঙ্গলবার (৬ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় ঐক্যবদ্ধ সনাতন সমাজের ব্যানারে মানববন্ধন থেকে কিছু উচ্ছৃঙ্খল যুবক প্রেসক্লাবে হামলা, ভাংচুর এবং সাংবাদিকদের লাঞ্ছিত করে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে চার যুবককে আটক করে। এই ঘটনায় ৭ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের পক্ষে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ এবং আক্রান্ত সাংবাদিকদের পক্ষে বাংলানিউজের বিশেষ প্রতিনিধি রমেন দাশগুপ্ত বাদি হয়ে কোতয়ালি থানায় পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেন। সাংবাদিক নেতাদের অভিযোগ, চৌধুরী ফরিদের মামলাটি পুলিশ দ্রুত বিচার আইনে গ্রহণ করলেও পরে বাদিকে না জানিয়ে সেই আইনের পরিবর্তে দুর্বল ধারা সংযোজন করা হয়। ৭ ডিসেম্বর ভারপ্রাপ্ত পুলিশ কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী দেবদাস ভট্টাচার্যের নির্দেশে কোতয়ালি থানার ওসি বাদির অজান্তে মামলার ধারা পরিবর্তন করেন আসামিদের সুকৌশলে ছাড় পাইয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যে। এর প্রতিবাদে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব ও সিইউজে আয়োজিত যৌথ সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি রিয়াজ হায়দার চৌধুরী বলেন, আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে অবিলম্বে সন্ত্রাসীদের পক্ষাবলম্বনকারী ভারপ্রাপ্ত পুলিশ কমিশনারের অপসারণ দাবি করছি। ঘটনার এতদিন পরও একজন হামলাকারীকে কেন গ্রেফতার করা গেল না সেই প্রশ্ন রাখছি পুলিশের কাছে। আমরা প্রধানমন্ত্রীকে বলতে চাই, এই দুষ্কৃতিমনস্ক পুলিশ দিয়ে সন্ত্রাসী-জঙ্গিমুক্ত বাংলাদেশ গঠন সম্ভব নয়।
‘সরকারের ভেতরেও যেমন মৌলবাদি শক্তি লুকিয়ে আছে এবং মাঝে মাঝে মাথাচাড়া দেয়, তেমনি পুলিশ প্রশাসনের ভেতরেও প্রতিক্রিয়াশীল, দেশবিরোধী শক্তির এজেন্ট বসে আছে। তারা সাংবাদিকসহ জনগণের নিরাপত্তার নামে যখন ছিনিমিনি খেলে তখন আমাদের রাজপথে নামতে হয়। ’
বিএফইউজে’র সহ সভাপতি শহীদ উল আলম পুলিশ কর্মকর্তা দেবদাস ভট্টাচার্যকে উদ্দেশ্য করে বলেন, পুলিশ জনগণের বন্ধু এই কথা কি আপনি জানেন না ? রাতের আঁধারে গোপনে নির্দেশ দিয়ে মামলার ধারা পাল্টে ফেলার সাহস আপনি কোথায় পেয়েছেন ? সন্ত্রাসীরা কার বলে প্রেসক্লাবে হামলা করার সাহস পায় ? গ্রেফতারের পর থানায় নিয়ে সন্ত্রাসীদের হাজতে না ভরে জামাই আদরে কেন রাখা হয়েছিল ?
‘দেবদাস বাবু, আপনি চট্টগ্রামের সাংবাদিকদের খতিয়ান জানেন না। এই প্রেসক্লাবের সাংবাদিকরা স্বৈরাচার পতনের আন্দোলনে শামিল হয়েছিল। সন্ত্রাস-মৌলবাদের বিরুদ্ধে এই প্রেসক্লাবের সাংবাদিকরা বারবার আন্দোলন গড়ে তুলেছে। আপনি সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে নাকি সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন সেটা আমরা বুঝতে পারছি না। ’
তিনি বলেন, দেবদাস ভট্টাচার্য জনগণের সঙ্গে নেই। তিনি আছেন মদ আর ইয়াবা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে। তিনি প্রতি মাসে মদ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা মাসোহারা পান। সেজন্য বারবার বদলির পরও তিনি চট্টগ্রাম ছেড়ে যান না। চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সভাপতি কলিম সরওয়ার বলেন, আমরা শুনেছি চট্টগ্রামের পুলিশ কমিশনার যিনি সেদিন ভারপ্রাপ্ত পুলিশ কমিশনারের দায়িত্বে ছিলেন তার নির্দেশে দ্রুত বিচার আইনের পরিবর্তে সাধারণ আইনে মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। পুলিশের সঙ্গে তো সাংবাদিকদের কোন সংঘাত নেই। তাহলে কেন পুলিশ সাংবাদিকদের সঙ্গে এই প্রতারণা আর প্রহসন করল। এই চট্টগ্রামে যারা মদ বিক্রি করে তারা পুলিশ প্রশাসনকে বড় অংকের টাকা দেয়। সেই মদ বিক্রেতার অনুসারীরা যখন প্রেসক্লাবে হামলা চালায় তখন পুলিশ তাদের পক্ষ নেয়। ‘পুলিশের এই প্রতারণা আমরা ধরে ফেলেছি। আমাদের আর পেছনে যাবার সুযোগ নেই। এই কর্মসূচি আমাদের শেষ কর্মসূচি নয়। দোষী পুলিশ কর্মকর্তাদের চট্টগ্রাম থেকে অপসারণ না করা পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব। ’ বলেন কলিম সরওয়ার।
চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী বলেন, পুলিশ কৌশলে সাংবাদিকদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। তারা সাংবাদিকদের সঙ্গে বাটপারি করেছে। পুলিশের এই ঔর্দ্ধত্য কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না। আমরা সন্ত্রাসীদের পাশাপাশি পুলিশের বিরুদ্ধেও মাঠে নেমেছি। আমরা পুলিশের ঔর্দ্ধত্যের শেষ কোথায় সেটা দেখতে চাই।
চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মহসিন চৌধুরী বলেন, সন্ত্রাসীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জন্য আমরা সিএমপি ঘেরাও করব, প্রয়োজনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘেরাও করব। এরপর প্রয়োজনে আমরা প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত যাব। যেসব সন্ত্রাসী উগ্রবাদি কর্মকান্ড করেছে এবং যেসব পুলিশ তাদের পক্ষ নিয়েছে কাউকে রেহাই দেয়া হবে না।
সমাবশে আরও বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের (সিইউজে) সাবেক সভাপতি মোস্তাক আহমেদ, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি আলী আব্বাস, বর্তমান সহ সভাপতি সালাহউদ্দিন রেজা ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ, সিইউজের সহ সভাপতি নিরুপম দাশগুপ্ত, বিএফইউজের নির্বাহী সদস্য আসিফ সিরাজ, চট্টগ্রাম ফটোজার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ মাহমুদ, সিইউজের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাসান ফেরদৌস, সিইউজের অর্থ সম্পাদক উজ্জ্বল ধর। এছাড়া একুশে টেলিভিশনের আবাসিক সম্পাদক রফিকুল বাহার আক্রান্ত সাংবাদিকদের পক্ষে বক্তব্য দেন। সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদ, চট্টগ্রামের সভাপতি ডা.এ কিউ এম সিরাজুল ইসলাম। সমাবেশ সঞ্চালনা করেন সিইউজের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক স্বরুপ ভট্টাচার্য। সমাবেশের পর সাংবাদিক নেতাদের একটি প্রতিনিধি দল গিয়ে চট্টগ্রামের ভারপ্রাপ্ত বিভাগীয় কমিশনার শংকর রঞ্জন সাহার হাতে পৃথক তিনটি স্মারকলিপি তুলে দেন। তিনি রোববারের মধ্যে স্মারকলিপিগুলো সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দেন। এসময় চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি রিয়াজ হায়দার চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সভাপতি কলিম সরওয়ার ও সাধারণ সম্পাদক মহসিন চৌধুরী, বিএফইউজের যুগ্ম মহাসচিব তপন চক্রবর্তী, সিইউজের সাবেক সভাপতি মোস্তাক আহমেদ ও বর্তমান সহ সভাপতি নিরুপম দাশগুপ্ত ও অর্থ সম্পাদক উজ্জ্বল কান্তি ধর এবং চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ ও জিটিভির ব্যুরো প্রধান অনিন্দ্য টিটো উপস্থিত ছিলেন।