সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়নে জোর প্রধানমন্ত্রীর
মঙ্গলবার মিরপুর সেনানিবাসে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “আমরা পরিবর্তনশীল যুদ্ধ কৌশল ও প্রযুক্তির দিকে নিবিড়ভাবে লক্ষ্য রাখছি।
“আমরা প্রতিনিয়ত আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর সামর্থ্য পুর্নমূল্যায়ন করে যাচ্ছি এবং একবিংশ শতাব্দীর বহুমুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়নের জন্য সময়োচিত সকল পদক্ষেপ গ্রহণে সচেষ্ট আছি।”
অনুষ্ঠানে ২০১৬ সালের ন্যাশনাল ডিফেন্স কোর্স ও আমর্ড ফোর্সেস ওয়ার কোর্স পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের স্নাতক সনদ তুলে দেওয়া হয়।
প্রযুক্তিজ্ঞান সম্পন্ন বাহিনী গড়ে তোলার ওপর জোর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বায়নের যুগে মানুষের মাঝে পারস্পরিক যোগাযোগ বাড়ানো ও জীবনযাত্রা সহজ করতে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ভূমিকা রাখছে।
তবে প্রযুক্তি কখনো কখনো প্রতিকুল পরিবেশ তৈরি করায় এর সঠিক ব্যবহার নিশ্চিতে কাজ করার আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।
“আমরা জাতীয় অগ্রগতি এবং নিরাপত্তার স্বার্থে প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারকেও উৎসাহিত করছি। এই বাস্তবতাকে বিবেচনায় রেখেই আপনাদের প্রশিক্ষণসূচি প্রণীত হয়েছে।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়নে নতুন প্রযুক্তি সম্বলিত আধুনিক সরঞ্জামাদির সরবরাহ নিশ্চিত হয়েছে।
“সর্বোত্তম প্রশিক্ষণ প্রদানের তাগিদে প্রয়োজনীয় সংখ্যক অবকাঠামো তৈরি করেছি। একটি পেশাদার ও প্রশিক্ষিত সশস্ত্র বাহিনী প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আমরা অনবরত কাজ করে যাচ্ছি।”
যে কোনো দুর্যোগ ও বিপর্যয়ে নিষ্ঠা ও একাগ্রতার সঙ্গে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা জনগণের পাশে দাঁড়ায় বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অবকাঠামো নির্মাণেও এই বাহিনীর নির্ভরযোগ্যতা দেশে-বিদেশে ব্যাপক সমাদৃত।
ভৌগোলিক অবস্থান বিবেচনায় বিশ্ব রাজনীতিতে বাংলাদেশের কৌশলগত গুরুত্ব বাড়ছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আঞ্চলিক ঐক্য উন্নয়নেও বাংলাদেশ সক্রিয় ভূমিকা রাখছে।
দেশের অর্থনীতির ক্রমাগত বিকাশ ও উন্নয়ন নিশ্চিতকরণে সফলতার পাশাপাশি কিছু কিছু চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান বলে উল্লেখ করেন তিনি।
“আমি বিশ্বাস করি সদ্যসমাপ্ত প্রশিক্ষণে অর্জিত জ্ঞান দিয়ে আপনারা সে চ্যালেঞ্জসমূহ মোকাবিলা এবং দেশের সার্বিক উন্নয়নে সরকারকে যথাযথ সহায়তা করতে পারবেন।”
দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোর মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক স্থাপনে ও নিরাপত্তাজনিত সমস্যা নিরসনে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।
জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদকে বিশ্বের জন্য ‘উদ্বেগজনক সমস্যা’ আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, “এই ধরণের সভ্যতাবিনাশী প্রবণতার কারণ ও অর্থের উৎস- সবকিছু খুঁজে বের করতে হবে। এর প্রতিকারের উপায়ও নিরূপন করা জরুরি।
“কোনো ধরণের জঙ্গি-সন্ত্রাস বাংলার মাটিতে হতে দেব না। আমাদের সরকার জঙ্গি নির্মূল ও সন্ত্রাসবাদ দমনে প্রয়োজনীয় সব রকম ব্যবস্থা নিয়েছে,” যোগ করেন তিনি।
জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও প্রশিক্ষিত ও প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশের মাটিকে অতীতের ন্যায় সন্ত্রাস বা বিছিন্নতাবাদী তৎপরতার জন্য আর কখনো কেউ ব্যবহার করতে পারবে না। মুক্তিযোদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক শান্তিপূর্ণ দেশ হিসাবে আমাদের মর্যাদা বিশ্বে অক্ষুণ্ন থাকবে।”
১৯৯৬ সালের আগে জ্যেষ্ঠ ও মধ্যম সারির কর্মকর্তাদের উচ্চ মানের প্রশিক্ষণের নিজস্ব কোনো প্রতিষ্ঠান না থাকার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী এসময় উপস্থিত সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশ্যে তার সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা বলেন।
“আপনাদের উচ্চ শিক্ষার কথা বিবেচনা করে আমাদের সরকারের ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদকালে আমরা এনডিসি প্রতিষ্ঠা করেছি। যা বর্তমানে একটি আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান হিসাবে পরিচিতি লাভ করেছে।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এনডিসির ক্যাপস্টোন কোর্সের মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালনা ও নীতিনির্ধারক পর্যায়ের ব্যক্তিরা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং রাষ্ট্র পরিচালনার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ওপর সম্যক জ্ঞান লাভ করতে পারছেন। সামরিক-বেসামরিক সম্পর্ক উন্নয়নে এনডিসি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
“যে উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য নিয়ে আমরা ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছিলাম, প্রতিষ্ঠানটি আজ তার সেই অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছে। আমরা চেয়েছিলাম এমন একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান যা দেশ ও বিদেশের উচ্চ পদবির বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তাদের মাঝে যথাযথ জ্ঞানশৈলী চর্চার সুযোগ সৃষ্টি করবে।”
এখান থেকে ডিগ্রিধারীরা পরবর্তীতে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী প্রধান ও পুলিশ প্রধানের মতো রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত হয়েছেন বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
এ বছর ন্যাশনাল ডিফেন্স কোর্স শেষ করেছেন ৭৮ জন, যার মধ্যে সেনাবাহিনী থেকে ২৯ বিগ্রেডিয়ার জেনারেল, নৌ বাহিনী থেকে চার কমোডর ও এক ক্যাপ্টেন, বিমান বাহিনী থেকে পাঁচ গ্রুপ ক্যাপ্টেন, জনপ্রশাসন থেকে চার অতিরিক্ত সচিব, ছয় যুগ্ম সচিব, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এক মহাপরিচালক ও পুলিশের দুই ডিআইজি রয়েছেন।
এছাড়া ব্রুনাই, মিশর, পাকিস্তান, ওমান, ভারত, মালয়েশিয়া, নাইজেরিয়া, শ্রীলংকা, সৌদি আরব, মিয়ানমার, নেপাল, তানজানিয়ার সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর ২৬ জন এবছর ন্যাশনাল ডিফেন্স কোর্স শেষ করেছেন।
যারা আর্মড ফোর্সেস ওয়ার কোর্স শেষ করেছেন, তাদের মধ্যে রয়েছেন ২৫ লেফটেন্যান্ট কর্নেল, নৌ বাহিনীর এক ক্যাপ্টেন ও চার কমোডর এবং বিমান বাহিনীর দুই গ্রুপ ক্যাপ্টেন ও তিন উইং কমান্ডার।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজের কমান্ড্যান্ট লেফটেন্যান্ট জেনারেল চৌধুরী হাসান সারওয়ারদী।
বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচটি ইমাম, তারিক আহমেদ সিদ্দিক ও ইকবাল সোবহান চৌধুরী, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মুহাম্মদ ফারুক খান এবং তিন বাহিনীর প্রধানসহ ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তারা এসময় উপস্থিত ছিলেন।