সুরের মূর্ছনায় মিলন মেলা বঙ্গভবনে
শুক্রবার এ আয়োজনে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, রাজনীতিক, সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তা আর বিদেশি কূটনীতিকরা যেমন ছিলেন, তেমনি এসেছিলেন ব্যবসায়ী, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশার প্রতিনিধিরা।
বাংলাদেশের অভ্যূদয়ের বার্ষিকীতে রাষ্ট্রপ্রধানের বাসভবনের এই অনুষ্ঠান বরাবরের মতোই পরিণত হয় মিলন মেলায়।
বরেণ্য শিল্পীদের কণ্ঠে দেশাত্মবোধক ও লোকগান এবং শিশুশিল্পীদের পরিবেশনার পাশে সশস্ত্র বাহিনীর বাদক দলের মূর্ছনা এই আয়োজনের এনে দেয় স্বাতন্ত্র।
বিকাল ৪টার কিছু পরে স্ত্রী রাশিদা খানমকে সঙ্গে নিয়ে বঙ্গভবনের মাঠে অনুষ্ঠানস্থলে আসেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। তার কিছুক্ষণ আগেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গভবনে পৌঁছান। তারা অনুষ্ঠানে সবার সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।
রাষ্ট্রপতি ও তার স্ত্রী মঞ্চে আসার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় জাতীয় সংগীত। কুশল বিনিময়ের পর রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, বীরশ্রেষ্ঠদের পরিবারের সদস্যসহ আমন্ত্রিত অতিথিদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
তারা যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের শারীরিক অবস্থার খোঁজ-খবর নেন এবং তাদের সার্বিক সহায়তার আশ্বাস দেন। ভারত ও শ্রীলংকার ন্যাশনাল ক্যাডেট কোরের সদস্যদের সঙ্গেও কুশল বিনিময় করেন বাংলাদেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান।বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া ভারতের সশস্ত্র বাহিনীর ২৭ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল যোগ দেয় বঙ্গভবনের এই অনুষ্ঠানে। এ দলের নেতৃত্বে ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল জিএস সিহোতা।
বাংলাদেশের পতাকার সঙ্গে মিলিয়ে সবুজ ব্লাউজ আর লাল শাড়িতে সেজে শুভেচ্ছা বিনিময়ে এসেছিলেন ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত ওয়ানজা ক্যাম্পোস দ্য নব্রেগার। যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটের পরনেও ছিল শাড়ি। লাল, সবুজ, হলুদ সুতার কাজ করা জামদানি পরেছিলেন তিনি। আরও কয়েকটি দেশের কূটনীতিবিদরা এসেছিলেন বাংলাদেশের বিজয় উদযাপনের এ অনুষ্ঠানে।অনুষ্ঠান মাঠের ভিভিআইপি এনক্লোজারে বিজয় দিবস উপলক্ষে কেক কাটেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী।
পরে মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, বিদেশি অতিথি, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি, সংসদ সদস্য, তিন বাহিনীর প্রধানসহ সমারিক-বেসামরিক কর্মকর্তা, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও আমন্ত্রিত অতিথিদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, বাণিজ্য মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, বিমানমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, পররাষ্ট্র মন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা গওহর রিজভী ও ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
এসেছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক, অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান, শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু, প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ ও বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী আমিনুল ইসলাম।
রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে ছিলেন সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জেএসডির সভাপতি আসম আব্দুর রব, কৃষক-শ্রমিক জনতা লীগের কাদের কাদের সিদ্দিকী ও জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য জিয়াউদ্দিন বাবলু।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম, মুখ্য সচিব সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সুরাইয়া বেগম ও প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম উপস্থিত ছিলেন অনুষ্ঠানে।বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ফরাস উদ্দিন, অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, আইনজীবী আমির-উল-ইসলাম, পিএসসি চেয়ারম্যান মো. সাদিক, বিটিআরসির চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদও এসেছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য উপদেষ্টা ডেইলি অবজার্ভার সম্পাদক ইকবাল সোবহান চৌধুরীর পাশাপাশি গণমাধ্যম প্রতিনিধিরাও বঙ্গভবনের এ আয়োজনে যোগ দেন। তাদের মধ্যে ছিলেন বাসসের প্রধান সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক মো. শাহ আলমগীর, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী ও চ্যানেল আইয়ের বার্তা প্রধান শাইখ সিরাজ।
সাংস্কৃতিক অঙ্গনের প্রতিনিধিদের মধ্যে ছিলেন চলচ্চিত্র নির্মাতা কাজী হায়াৎ, অভিনেতা মিজু আহমেদ, রোকেয়া প্রাচী ও এজাজুল হক।
শিল্পী রফিকুল আলম, শাকিলা জাফর, ফাহমিদা নবী, সন্দীপন, প্রিয়াংকা বিশ্বাস ও সজীব দাস অনুষ্ঠানে গেয়ে শোনান। এছাড়া শিশু একাডেমির শিশু শিল্পীদের পরিবেশনাও অতিথিদের মুগ্ধ করে।