স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) চলমান ৪০ প্রকল্পের মেয়াদ গত ডিসেম্বরে শেষ হয়েছে। শুষ্ক মওসুমের মধ্যেই এসব প্রকল্প শেষ করার ডেডলাইন বেঁধে দিয়েছিলেন প্রধান প্রকৌশলী। কিন্তু সেই সময়ের মধ্যে এসব প্রকল্প উন্নয়নের সিকিভাগও করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
সম্প্রতি নগরীর ষোলশহরের এলজিইডি ভবনে আয়োজিত এক উন্নয়ন পর্যালোচনা সভায় চট্টগ্রাম অঞ্চলের ৪০টি প্রকল্পের আওতায় উন্নয়নকাজ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে বলে জানান স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) প্রধান প্রকৌশলী শ্যামা প্রসাদ অধিকারী।
তিনি চলতি বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির শত ভাগ কাজ বাস্তবায়ন নিশ্চিতে কাজ করার নির্দেশনা দেন। তিনি বলেন, এলজিইডি সরকারি অর্থায়ন ছাড়াও ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, এলডিবি, জাইকা, সৌদি ফান্ড, ড্যাচ অর্থায়নে নগর, গ্রামীণ ও পানি স¤পদ উন্নয়নে বর্তমান অর্থবছরে প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে।
আর এ বরাদ্দের প্রায় অর্ধেকই ব্যয় করা হচ্ছে চট্টগ্রামের গ্রামীণ সড়কগুলোর উন্নয়নে। তিনি তখন চট্টগ্রাম অঞ্চলে ৪০টি প্রকল্পের আওতায় উন্নয়নকাজ গুণগতমান বজায় রেখে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ করার নির্দেশনা দিয়েছিলেন।
কিন্তু প্রকল্পের শুরুতে একটি শুষ্ক মওসুম শেষ হয়ে আবার শুষ্ক মওসুম এসে গেলেও কাজের সিকিভাগও শেষ করতে পারেনি। এ দিকে উত্তর ও দক্ষিণ চট্টগ্রামে গ্রামীণ সড়কগুলো খানাখন্দে ভরে গেলেও অনেক এলাকায় কাজ শুরুই করতে পারেনি এলজিইডি।
জানা গেছে, চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার অভ্যন্তরীণ সড়কগুলো খানাখন্দে ভরে গেছে। প্রায় সড়কে ইট, কারপেটিং উঠে গিয়ে ছোট-বড় গর্তসহ চাষের জমিতে পরিণত হয়েছে। কোনো কোনো স্থানের সড়কগুলো খালসংলগ্ন হওয়ায় খালে বিলীন হচ্ছে। এসব রাস্তা দিয়ে যানবাহনগুলো জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাত্রী পরিবহন করছে।
উপজেলার দরবেশহাট শাহপীর সড়ক, লোহাগাড়া উজিরভিটা সড়ক, পুটিবিলা এমচরহাট সড়ক, পুটিবিলা সরাইয়া সড়ক, কলাউজান কানুরামবাজার সড়ক, চরম্বা নয়াবাজার সড়ক, জঙ্গল পদুয়া সড়ক, পদুয়া ধলিবিলা সড়ক, পদুয়া আধারমানিক সড়ক, বড়হাতিয়া মনুফকিরহাট সড়ক, চুনতি ফারাঙ্গা সড়ক, আধুনগর শাহ আতাউল্লাহ সড়ক, আধুনগর হরিণা সড়ক, আমিরাবাদ বার আউলিয়া ডিগ্রি কলেজ সড়ক, আমিরাবাদ রাজঘাটা সড়কসহ বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ সড়ক যানবাহন চলাচলের স¤পূর্ণ অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
একই রকম অবস্থা চন্দনাইশ উপজেলার গ্রামীণ সড়কগুলোর। এ উপজেলার বৈলতলী ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের জামতল ফকিরহাট সড়কের বেহাল অবস্থা। সড়কটিতে ইট উঠে গিয়ে বড় বড় গর্তের কারণে যানবাহন চলাচল দূরের কথা, মানুষ হেঁটে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। শুষ্ক মওসুমে মানুষ চলাচল করতে পারলেও বর্ষাকালে এলাকাবাসীকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে।
বৈলতলী ইউনিয়নের জনবহুল এলাকার গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটি সাবেক যোগাযোগ মন্ত্রী কর্নেল অলি আহমদ জামতল থেকে ফকিরহাট পর্যন্ত প্রায় চার কিলোমিটার ইট বিছিয়ে চলাচলের উপযোগী করে তুললেও দীর্ঘ এক যুগ ধরে সংস্কার এবং সংরক্ষণের অভাবে সড়কটির ইট উঠে গিয়ে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। একই অবস্থা পটিয়া উপজেলার পটিয়ার হাবিলাস দ্বীপ ইউনিয়নের পাঁচুরিয়া থেকে কোলাগাঁও ইউনিয়নের কোলাগাঁওয়েরটেক সড়কের জনগুরুত্বপূর্ণ হওয়ার পরও সড়কটি চলাচল উপযোগী করছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
সড়কটির কারপেটিং উঠে গিয়ে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হওয়ায় শিল্প এলাকার কাভার্ড ভ্যান, কনটেইনারবাহী ট্রাক, ট্রেইলর, ভারী যানবাহন প্রতিনিয়ত আটকে পড়ছে। এ রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০টি ট্রাক (যার ওজন ৫০ টনের অধিক) আসা যাওয়া করে, যা শিকলবাহা পাওয়ার প্ল্যান্টের নতুন ডুয়েল ফুয়েল বিদ্যুৎকেন্দ্রে সিলেটের পাথর আনা-নেয়া করে। এত ছোট সড়কে ভারী ট্রাক চলাচলের ফলে সড়কটির পলেস্তরা-পাথর উঠে গিয়ে এখন এটি খালে পরিণত হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওই সড়কের হাবিলাস দ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় সম্মুখে পর পর দুইটি বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা মোতালেব সওদাগর জানান, প্রতিদিন এ সড়কটি দিয়ে স্কুল, কলেজের ছাত্রছাত্রী ছাড়াও স্থানীয় কৃষকেরা দৈন্দিন কাজের একমাত্র মাধ্যম এ জামতল সড়কটি। এ ছাড়াও মহিলা রোগীদের যাতায়াত ক্ষেত্রে সীমাহীন ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে।
এ দিকে বোয়ালখালী উপজেলার আমুচিয়া ইউনিয়নের সব কটি সড়কই চলাচলের অযোগ্য হয়ে প্রায় ২০ হাজার মানুষ দুর্ভোগে পড়েছে। দীর্ঘদিন এ সড়কগুলোয় কোনো ধরনের সংস্কারকাজ না করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা। এ এলাকার সব কটি সড়কের অবস্থা মারাতœক আকার ধারণ করেছে।
জানা যায়, উপজেলার আমুচিয়া ইউনিয়নের প্রধান বদর শাহ সড়ক, কানুনগোপাড়া পোস্ট অফিস সড়ক, খরঞ্জা পাড়া-বগাচড়া-মাস্টার বাজার সড়ক, আমুচিয়া রাবার বাগান সড়ক, ধোরলা কালীবাড়ী সড়ক, ধোরলা খান বাহাদুর শাহ সড়ক, ধোরলা-জ্যৈষ্টপুরা সড়ক, রাবার বাগান-জ্যৈষ্টপুরা সড়ক, ধোরলা সরদার পাড়া সড়ক, বগাচড়া তুলাতল-বুড়া মসজিদ সড়ক, আমুচিয়া বুড়া মসজিদ-বড়–য়া পাড়া সড়ক, কালাইয়ার হাট-হযরত মহিউদ্দিন শাহ সড়ক, ধোরলা বান্ধব পাঠাগার-সরদার পাড়া-মাস্টার বাজার সড়ক, পূর্ব আমুচিয়া-জ্যৈষ্টপুরা সড়ক ও একুশে পদক প্রাপ্ত আঞ্চলিক গানের সম্রাজ্ঞী শেফালী ঘোষের বাড়ি-মুক্তকেশী বালিকা উচ্চবিদ্যালয় সড়কে বেহাল দশা বিরাজ করছে।