বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে তিনটি প্রকল্পের জন্য চড়া সুদে ঋণ নিচ্ছে সরকার। ঋণের পরিমাণ ৩০ কোটি ডলার; বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় দুই হাজার ৪০০ কোটি টাকা। গত বছর থেকে চালু হওয়া বিশ্বব্যাংক ঋণের নতুন কর্মসূচি- স্কেল আপ ফ্যাসিলিটির(এসইউএফ) আওতায় এই ঋণ নেয়া হচ্ছে। এতে সুদের হার হবে আড়াই শতাংশের বেশি। এই ঋণের রেয়াতি সময় হবে কম। শুধু তা-ই নয়, ঋণচুক্তি কার্যকর হওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে ‘ফ্রন্ট-এন্ড ফি’ নামে ঋণের শূন্য দশমিক ২৫ ভাগ অর্থ পরিশোধ করতে হবে। বিশ্বব্যাংকের কোনো ঋণের ক্ষেত্রে আগে এমন ঘটেনি বলে জানা গেছে।
অর্থমন্ত্রী এসইউএফ’র আওতায় তিন প্রকল্পে ঋণ নেয়ার বিষয়টি নীতিগত অনুমোদন করেছেন বলে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্রে জানা গেছে।
প্রসঙ্গত, এত দিন ধরে বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে বাংলাদেশ অতি অল্প সুদে নমনীয় ঋণ নিয়ে থাকত। এই ঋণে সুদের হার হতো শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ। এতে রেয়াতি সময় থাকত ১০ থেকে ১৫ বছর এবং পরিশোধের সময়সীমা দেয়া হতো ৩০ থেকে ৪০ বছর।
ইআরডি সূত্রে জানা গেছে, এসইউএফ কর্মসূচির আওতায় যে ঋণ নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, সেগুলো হলো ডেভেলপমেন্ট হাই পটেনশিয়াল সেক্টরস এক্সপোর্টস, বাংলাদেশ পাওয়ার সিস্টেম রিলায়্যাবিলিটি অ্যান্ড এনার্জি এফিশিয়েন্সি ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট এবং ইনভেস্টমেন্ট প্রমোশন অ্যান্ড ফাইন্যান্সিং ফ্যাসিলিটি প্রজেক্ট। প্রতিটি প্রকল্পের বিপরীতে ১০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ ঋণ নেয়া হবে।
বিগত ২০১৬ সালের ৮ মার্চ বিশ্বব্যাংকের বোর্ড সভায় আইডিএ’র (ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি) উদ্বৃত্ত তারল্য থেকে ৩ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলারের ‘স্কেল আপ ফ্যাসিলিটি’ (এসইউএফ) নামে একটি অনমনীয় ঋণ কর্মসূচি চালু করা হয়েছে। এই কর্মসূচির আওতায় আইডিএ সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকে নির্ধারিত ও নমনীয় উভয় হারে এবং আইডিএ স্বীকৃত দেশগুলোকে শুধু নির্ধারিত হারে ঋণ প্রদানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এসইউএফ কর্মসূচির প্রধান উদ্দেশ্য হলো যেসব প্রকল্প উন্নয়নে বেশি প্রভাব ফেলে এবং আইডিএ-১৭ প্রাধিকারের সাথে বেশি সঙ্গতিপূর্ণ সেসব প্রকল্পে অনমনীয় শর্তে বাড়তি অর্থায়নের ব্যবস্থা করা।
ইআরডি সূত্র জানায়, বাংলাদেশ আইডিএ স্বীকৃত দেশ হওয়ায় শুধু নির্ধারিত হারে এসইউএফ কর্মসূচি থেকে ঋণ নিতে পারবে। তবে এসডিআর ছাড়া এসডিআরভুক্ত চারটি মুদ্রায় (ডলার, পাউন্ড, ইয়েন ও ইউরো) একক মুদ্রায় ঋণ কর্মসূচির আওতায় এই ঋণ গ্রহণ করা যাবে। ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে এ ঋণের স্থির সুদের হার আইডিএ কর্র্তৃক নির্ধারিত হয়। স্থির সুদের হার প্রদেয় ঋণের ক্ষেত্রে শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ ‘ফ্রন্ট-এন্ড ফি’ এবং অনুত্তোলিত ঋণের ক্ষেত্রে কমিটমেন্ট ফি হিসেবে আরো শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ দিতে হয়। ফলে সুদের হার সর্বোচ্চ ৩ দশমিক ৫৭ শতাংশ দাঁড়ায়।
জানা গেছে, এসইউএফের আওতায় যে ৩০ কোটি ডলার ঋণ নেয়া হবে তা ইউরোতে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এর আগে বিশ্বব্যাংকের ঋণ সব সময় ডলারেই নেয়া হতো। এ বিষয়ে ইআরডি’র যুক্তি হচ্ছেÑ বর্তমানে বিশ্বব্যাংক থেকে সব নমমীয় ঋণ এসডিআরে নেয়া হলেও ব্যয় ও পরিশোধের মুদ্রা হিসেবে ডলার ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে সাম্প্রতিক সময় এসডিআর’র বিপরীতে ডলার ক্রমান্বয়ে শক্তিশালী হওয়ায় বিশ্বব্যাংকের সাহায্যপুষ্ট প্রকল্পে বাংলাদেশ কম ডলার পেয়েছে। এতে অনেক প্রকল্প ব্যয় ব্যবস্থাপনা ও বাস্তবায়নে সমস্যা হচ্ছে। শুধু তা-ই নয়, ডলারের গ্রান্ট ইলিমেন্টের পরিমাণও কম। যেখানে ডলারের অনুদানের পরিমাণ ১০ দশমিক ৪৪ শতাংশ থেকে ১১ দশমিক ৯৭ শতাংশ। সেখানে ইউরোর অনুদানের পরিমাণ হচ্ছে ২৫ শতাংশ। তাই এ ঋণ ইউরোতে গ্রহণ ও পরিশোধের ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে।
ইআরডি’র পক্ষ থেকে আরো জানানো হয়, এই ঋণ ৯ বছরের রেয়াতি সময়সহ ৩০ বছরে পরিশোধের প্রস্তাব কাজে লাগানো যেতে পারে। তবে এই অংশে গ্রান্ট এলিমেন্টের অংশ কম হলেও প্রতি কিস্তি কম হারে এবং দীর্ঘ মেয়াদে ঋণ পরিশোধের সুবিধা পাওয়া যাবে।
জানা গেছে, এই ঋণ নেয়ার প্রস্তাব ইআরডি’র পক্ষ থেকে ‘স্ট্যান্ডিং কমিটি অন নন-কনসেশনাল কমিটি’র কাছে প্রেরণ করা হয়েছে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত তা অনুমোদনও করেছেন।