নয়াপাড়া শরনার্থী ক্যাম্পের আনসার ব্যারাক থেকে লুট হওয়া ১১টির মধ্যে ৫টিসহ ১০টি অস্ত্র উদ্ধার ॥ আটক-৩
॥ নাইক্ষ্যংছড়ি ও কক্সবাজার প্রতিনিধি ॥ র্যাবের মহা পরিচালক বেনজির আহম্মদ বলেছেন দেশের মাটিতে কোন সন্ত্রাসীদেরকে ঘাটি করতে দেয়া হবে না। বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ যাতে নিরাপদে শান্তিতে ও স্বস্তিতে থাকতে পারে প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশে র্যাবসহ অন্যান্য আইন শৃংখলাবাহিনী কাজ করছে। তিনি মঙ্গলবার দুপুরে বান্দবানের নাইক্ষ্যংছড়ির গভীর বনাঞ্চলে অস্ত্র উদ্ধার অভিযান শেষে প্রেস ব্রিফিংকালে এ কথা বলেন। তিনি আরও বলেন টেকনাফের আনসার ক্যাম্পে হামলা চালিয়ে অস্ত্র লুটের ঘটনায় জড়িতদের অধিকাংশই রোহিঙ্গা। জড়িতদের মধ্য থেকে এ পর্যন্ত ৮জনকে আটক করা হয়েছে। আর লুটকৃত অস্ত্রের মধ্য থেকে ৫টি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। অবশিষ্ট ৬টি অস্ত্রও উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত রেখেছে বলেও দাবি করেছেন র্যাব মহা পরিচালক।
মঙ্গলবার দুপুরে নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমঘুম ইউনিয়নের তুমব্রু পুরান পাড়া এলাকার গহীন অরণ্যে র্যাবের অভিযানে আনসার ক্যাম্প থেকে লুট হওয়া ৫টি ও দেশীয় তৈরী আরও ৫টি অস্ত্রসহ মোট ১০টি অস্ত্র উদ্ধার শেষে র্যাব মহা পরিচালক ঘটনাস্থলেই সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন। গত সোমবার রাত ৯টা থেকে মঙ্গল বার সকাল পর্যন্ত টানা অভিযান শেষে প্রেস ব্রিফিংএ র্যাবের মহা পরিচালক আরো বলেন, টেকনাফের আনসার ক্যাম্প থেকে লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধারে সবাই হাল ছেড়ে দিলেও দীর্ঘ ৮ মাস পর লুট হয়ে যাওয়া অস্ত্র থেকে ৫টি অস্ত্র উদ্ধার করেছে র্যাব।
উল্লেখ্য ২০১৬ সালের ১২মে টেকনাফ উপজেলার নয়াপাড়ায় রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে আনসার বাহিনীর শালবন ব্যারাকেগভীর রাতে দুর্বৃত্তরা হামলা চালিয়েছিল। এতে আনসারের এক কমান্ডার নিহত হন। দুর্বৃত্তরা ব্যারাক থেকে ১১টি অস্ত্র ও ৬৪০ রাউন্ড গুলি লুট করে নিয়ে যায়। ঘটনার পর পরই ২০১৬ সালের জুন মাসে রফিক ডাকাতসহ ৫জনকে আটক করা হয়েছিল। তবে কোন অস্ত্র উদ্ধার সম্ভব হয়নি দীর্ঘ ৭মাসেও। দীর্ঘ ৭মাস পর গতকাল রাতে ২জনকে আটক করে র্যাব। তাদের স্বীকারোক্তি মতে নাইক্ষ্যংছড়ির গহীন অরণ্যে অভিযান চালিয়ে আরো ১জনকে আটক করে এবং লুট হওয়া ৫টি অস্ত্র ও ৫টি দেশীয় তৈরি অস্ত্র উদ্ধার করতে সক্ষম হয় র্যাব। আনসার ক্যাম্প থেকে লুট হওয়া অস্ত্র ও গুলির মধ্যে ৫টি অস্ত্র উদ্ধারের পাশাপাশি ১৮৯ রাউন্ড গুলিও উদ্ধার করেছে র্যাব। এছাড়া ৫টি দেশীয় বন্দুকসহ ২৬ রাউন্ড দেশীয় বন্দুকের গুলিও উদ্ধার করেছে র্যাব। আনসার ক্যাম্প থেকে লুটকৃত বাকি অস্ত্রগুলো উদ্ধার করতে অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানান র্যাবের মহা পরিচালক। প্রেসব্রিফিং এ বাংলাদেশ আনসারের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মিজানুর রহমান খান বলেন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সোমবার ৯ জানুয়ারী রাতে (৯টার দিকে) উখিয়ার কুতুপালং এলাকায় অভিযান চালায় র্যাব। টেকনাফের আনসার ক্যাম্পের অস্ত্র লুটের ঘটনার অন্যতম ২ হোতা খাইরুল আমিন (বড়) ও মাস্টার আবুল কালাম আজাদকে আটক করা হয়। তাদের কাছে ১ টি পিস্তল, ১ টি ওয়ান সুটার গান এবং গুলি পাওয়া গেছে। পরে তাদের দেয়া তথ্যমতে আনসার ক্যাম্প থেকে লুট হওয়া আরো অস্ত্র উদ্ধার করতে রাত ১১টা থেকে আটককৃতদের নিয়ে নাইক্ষ্যংছড়ির বিভিন্ন পাহাড়ে অভিযান চালায় র্যাব। অস্ত্র উদ্ধারের জন্য র্যাবকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মিজানুর রহমান খান।
র্যাব জানিয়েছে, আটককৃতরা অস্ত্রগুলো লুট করে ঘুমঘুম ইউনিয়নের তুমব্রু পুরান পাড়া এলাকার গহীন অরণ্যে পাহাড়ের খাদে গর্ত করে পুতে লুকিয়ে রেখেছিল। এসব তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান অব্যাহত রাখবে র্যাব।
উল্লেখ্য, গত বছরের ১৩মে টেকনাফের নয়াপাড়া রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার ব্যারাকে সশস্ত্র হামলা চালায় একদল দুর্বৃত্ত। এ সময় হামলাকারীদের গুলিতে নিহত হন ব্যারাকের দায়িত্বরত আনসার কমান্ডার। হামলাকারীরা লুট করে নিয়ে যায় ১১টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ৬৭০ রাউন্ড গুলি। এ ঘটনায় অভিযান চালিয়ে অস্ত্রসহ এ পর্যন্ত তিনজনকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।