শিরোনাম
প্রচ্ছদ / অর্থনীতি / দরপতনে পুঁজিবাজারের সাড়ে তিন বছরের রেকর্ড

দরপতনে পুঁজিবাজারের সাড়ে তিন বছরের রেকর্ড

দরপতনে বিগত সাড়ে তিন বছরের রেকর্ড অতিক্রম করলো দেশের পুঁজিবাজার। আজ দিনভর ব্যাপক দরপতনের পর দেশের দুই পুঁজিবাজারই এ রেকর্ড পার করে।

প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচকটি এদিন ১১৭ দশমিক ৭৯ পয়েন্ট হারায়। চট্টগ্রাম শেয়ারবাজারের সার্বিক মূল্যসূচক হারায় ৪১৯ দশমিক ২৩ পয়েন্ট।

২০১৩ সালের জুলাই মাসের পর পুঁজিবাজারে একদিনে আর এত বড় দরপতন ঘটেনি। সর্বশেষ ওই বছরের ২৩ জুলাই ডিএসই সাধারণ সূচক ১২৫ দশমিক ১৭ পয়েন্ট হারায়।

অর্থবছরের শেষ অর্ধের মূদ্রানীতি ঘোষণার দিনই এমন পতন ঘটলো পুঁজিবাজারে।

লেনদেন শুরু হওয়ার পর থেকে টাকা বিক্রয়চাপের মুখে পড়ে এ বাজারের শেয়ারদরের এ পতন ঘটে। লেনদেন হওয়া কোম্পানি ও ফান্ডের বেশিরভাগ দর হারানোর পাশাপাশি কমেছে লেনদেনও। দিনশেষে উভয় বাজারে ৮৪ শতাংশের বেশি কোম্পানি দর হারায়।

প্রতিবারের মতো এবারও বাংলাদেশ ব্যাংক অর্থবছরের আগামী ছয়মাসের মূদ্রানীতি ঘোষণা করে। পুর্বের ছয়মাসের চেয়ে এ মূদ্রনীতিতে খুব বেশি পরিবর্তন না হলেও মূদ্রানীতি ঘোষণার সময় আলোচনায় ওঠে আসে পুঁজিবাজারের চলমান পরিস্থিতি। এ সময় ২০১০ সালের প্রসঙ্গ তুলে বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নজরদারি বাড়ার ঘোষণা দেন। বেলা ১১টায় মুদ্রানীতি ঘোষণা শুরু হলে বিভিন্ন অনলাইন মাধ্যমগুলোয় গভর্নরের এ ঘোষণা প্রকাশ পায়। সকাল সোয়া ১১টার দিকে বাজারে তৈরি হয় প্রচণ্ড বিক্রয়চাপ। একে একে দর হারাতে থাকে লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলো।

বাজার বিশ্লেষকরা মনে করেন, মূদ্রনীতিতে তেমন একটা পরিবর্তন না ঘটলেও পুঁজিবাজারের সাম্প্রতিক প্রবনতা ব্যাংকগুলোর নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ ব্যাংকের নজরে ছিল।

এর আগে ২০১০ সালে পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নিয়মনীতির তোয়াক্বা না থাকায় লাগামহীনভাবে বেড়ে যায় বাজার। এক পর্যায়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হলে চরম বিপর্যয় নেমে আসে পুঁজিবাজারে। তাই স্বভাবতই যাতে পুঁজিবাজারে এ ধরনের নতুন কোনো বিপর্যয়ের দিকে না যায় সে বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক নানাভাবে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে নজরদারি চালায়।

আজও বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নরের বক্তব্যে এ ধরনের নজরদারির উল্লেখ ছিল। কিন্তু এর মানে এ নয় যে এত দ্রুত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের বিনিয়োগসীমা পার করে ফেলেছে। কারণ প্রতিনিয়তই বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে এ নজরদারি চলছে।

তারা মনে করেন, দীর্ঘদিন ধরে টানা দরপতনের পর পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতা আনার স্বার্থে সাম্প্রতিক বাংলাদেশ ব্যাংক পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ নিয়ে বেশ কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নেয়। সাবসিডিয়ারি কোম্পানির মূলধনকে বিনিয়োগ হিসাবের বাইরে রাখা ছিল এর একটি। এতে বেশ কয়েকটি ব্যাংকের পুঁজিবাজারে নতুন করে বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি হয়। সাম্প্রতিক সময়ে পুঁজিবাজার ঊর্ধমুখি হওয়ায় এটাও ভূমিকা রাখে। তাই বাংলাদেশ ব্যাংক নজরদারি বলতে কি বোঝাচ্ছে তা না বুঝেই বাজারে আতঙ্ক তৈরি করা হচ্ছে। আজকের বাজার আচরণ তারই প্রমাণ। তারা বিনিয়োগকারিদের আতঙ্কিত না হয়ে ধৈর্যের সাথে পরিস্থিতি মোকাবেলার পরামর্শ দেন।

রোববার মূদ্রনীতি ঘোষণা হবে এ খবরে গত বৃহস্পতিবার থেকে বাজার কিছুটা শ্লথ হয়ে পড়ে। ওই দিন বাজারগুলোতে লেনদেন ও সূচক দুইই কমে যায়। আজ সকালেও এ ধারাবাহিকতা রক্ষা করে পুঁজিবাজারগুলো। লেনদেনের শুরুতেই বিক্রয়চাপের মুখে পড়ে দুই পুঁজিবাজার। ঢাকা শেয়ারবাজারে ডিএসই’র প্রধান সূচকটি চার হাজার ৬১৮ দশমিক ৬৫ পয়েন্ট থেকে লেনদেন শুরু করে সকাল ১১টায় নেমে আসে পাঁচ হাজার ৫৯৮ পয়েন্টে। এ যাত্রা সাময়িকভাবে ঘুরে দাঁড়াতে চেষ্টা করলেও সকাল সোয়া ১১টার দিকে বিক্রয়চাপ আরো তীব্র হয়ে ওঠে। বেলা ২টা পর্যন্ত এ চাপ অব্যাহত থাকলে সূচকটি নেমে আসে ১২৬ পয়েন্টের বেশি হারিয়ে ডিএসই সূচক নেমে আসে পাঁচ হাজার ৪৯২ পয়েন্টে। সে কয়েক মিনিটে হারানো সূচকের কিছুটা ফিরে পায় বাজারটি। দিনশেষে ১১৭ দশমিক ৭৯ পয়েন্ট হারিয়ে পাঁচ হাজার ৫০০ পয়েন্টে স্থির হয় ডিএসই সূচক।

আজ দুই বাজারে বেশিরভাগ খাতেই মূল্যবৃদ্ধি পাওয়া কোম্পানির সংখ্যা ছিল হাতে গোনা। বেশ কয়েকটি খাতেই শতভাগ কোম্পানি দর হারায়। এদিন সবচেয়ে বেশি দরপতনের শিকার হয় ব্যাংক, বিমা, নন ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও মিউুচয়াল ফান্ড। এ চারটি খাতে দর হারায় ৯০ শতাংশের বেশি কোম্পানি। ঢাকায় লেনদেন হওয়া ৩২৭টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ২৭৫টি দর হারায়। বিপরিতে মূল্যবৃদ্ধি ঘটে মাত্র ৪৭টির। অপরিবর্তিত ছিল পাঁচটির দর। অপরদিকে চট্টগ্রামে লেনদেন হওয়া ২৬৩টি সিকিউরিটিজের মধ্যে ৪২টির মূল্যবৃদ্ধির বিপরিতে ২১৭টি দর হারায়। অপরিবর্তিত ছিল চারটির দাম।

চরম এ দরপতনের মধ্যেও আজ দুই পুঁজিবাজারের লেনদেনে শীর্ষস্থানটি দখলে রাখে বেক্সিমকো লিঃ। ঢাকায় ৫৭ কোটি ৫৩ লাখ টাকায় কোম্পানিটির এক কোটি ৭৭ লাখ চার হাজার শেয়ার হাতবদল হয়। ৪০ কোটি টাকা লেনদেন করে দিনের দ্বিতীয় কোম্পানি ছিল এসিআই লিঃ। ডিএসসি’র লেনদেনের শীর্ষ কোম্পানির মধ্যে আরো ছিল যথাক্রমে ইসলামী ব্যাংক, আরএসআরএম স্টিলস, একমি ল্যাবরেটরিজ, লঙ্কা বাংলা ফিণ্যান্স, যমুনা অয়েল, আরএকে সিরামিকস, সাইফ পাওয়ারট্রেক ও ন্যাশনাল ব্যাংক।

পড়ে দেখুন

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা

॥ ডেস্ক রিপোর্ট ॥ অমর একুশে ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনের শহীদদের …