চকরিয়ায় বখাটের ছুরিকাঘাতে আহত মাদ্রাসা ছাত্রীর বাবাকে মামলা না করতে হুমকী

 

সাফি-উল হাকিম ও এম মনছুর আলম, চকোরিয়া :: চকরিয়ায় বখাটের ছুরিকাঘাতে মাদ্রাসা ছাত্রী হুরে জন্নাত বিলকিছের আহত হওয়ার ঘটনার তিন দিন পরও থানায় কোনো   মামলা হয়নি ।  উল্টো বখাটে মিনহাজের বাবা আবুল কাশেম  আহত ছাত্রীর বাবা মোক্তারকে মামলা না করার জন্য হুমকি দিয়ে যাচ্ছে।

স্থানীয় লোকজন জানান,ঘটনার পরই ছুরিকাঘাতকারী বখাটে মিনহাজকে স্থানীয়রা আটক করে ইউপি কার্যালয়ে হস্তান্তর করেন। কিন্তু রহস্যজনক কারণে মিনহাজকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। ছাড়া পেয়ে ওই বখাটেসহ তার পরিবারের লোকজন বিলকিসের পরিবারকে বাড়াবাড়ি না করতে হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তার পিতা মোক্তার হোসেন। এমনকি শুক্রবার (৬ জানুয়ারি)  বখাটে মিনহাজের বাবা আবুল কাশেম কক্সবাজার সদর হাসপাতালে এসে মীমাংসার নামে সাদা কাগজে আহত ছাত্রীর বাবা থেকে  জোর করে স্বাক্ষর নিতে চায়। এসময় স্বাক্ষর না করায় তাকে দেখে নেয়ার হুমকি দেন বখাটের বাবা আবুল কাশেম।

স্থানীয় লোকজন জানান, স¤প্রতি দেশের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা সিলেটের খদিজার ঘটনার অবিকল বিলকিসের এই ঘটনা। খদিজা আলোচনায় আসলেও বিলকিস আসেনি। কারণ তারা গরীব মানুষ। এ ধরণের বর্বরোচিত হামলার ঘটনা নিয়ে এলাকার লোকজনের মাঝে এলাকায় চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। তারা বখাটে মিনহাজকে গ্রেফতার করে কঠোর শাস্তি দেয়ার দাবি জানান।

জানা যায়,  দীঘদিন ধরে কোণাখালী সেনঘোনা এলাকার মোকতার আহমদের মেয়ে ও কোনাখালী হেদায়তুল উলুম দাখিল মাদ্রাসার নবম শ্রেণীর ছাত্রী হুরে জন্নাত বিলকি কে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে আসছিলো বখাটে মিনহাজ উদ্দিন।  ৫ ডিসেম্বর সকালে মাদ্রাসায় যাওয়ার পথে এসময় ওৎপোতে  থাকা মিনহাজ  ঐ মাদ্রাস ছাত্রীকে উপর্যপুরি ছুরিকাঘাত করে ।

বখাটে মিনহাজ কোণাখালী খাতুরবাপের পাড়া ৩ নং ওয়ার্ডের আবুল কাশেমের পুত্র ও মেহেরনামা উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী বলে জানা গেছে।

চিকিৎসকেরা জানান, ছুরির আঘাতে বিলকিসের দু’হাতের পাঁচটি রগ কেটে কেটে। ছুরিকাঘাতে প্রচুর রক্তক্ষরণও হয়েছে তার। সে কারণে দু’দিনের চিকিৎসায়ও মেয়েটি ৮০ শতাংশ অসচেতন রয়েছেন। তাকে জরুরি ভিত্তিতে উন্নত অস্ত্রোপচার দরকার।

বিলকিসের বাবা মুদি দোকানী মোক্তার আহামদ কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার একমাত্র মেয়ে এবং বড়ই আদরের। তাকে যে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে মনে হচ্ছে তা আমার বুকে বিদ্ধ হয়ে আছে।’ কি দোষ ছিল আমার মেয়ের এভাবে তাকে রক্তাক্ত করা হলো।

বিলকিসের এককাধিক সহপাঠির সাথে কথা বলে জানা যায়, লেখাপাড়া  বিলকিস খুব মনোযোগী ছিলো। তাকে আমরা সবসময় অনুসরণ করতাম। শিÿকরাও তার উদাহরণ দিয়ে লেখাপড়ায় মনোযোগী হতে বলতো। তাকে ক্লাসে না দেখে মন খারাপ হয়। আমরা যখন ক্লাসে  আমাদের  বিলকিস তখন হাসপাতালে মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে।

একমাত্র মেয়ে হিসাবে তাকে নিয়ে মা-বাবার একটা স্বপ্ন ছিলো। স্বপ্ন ছিলো তাদের মেয়েটি শিক্ষিত হয়ে তাদের ঘরে ‘আলো’ জ্বালাবে। বর্তমানে ৩ দিন ধরে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের বেডে অসচেতন অবস্থায় পড়ে আছে বিলকিস। চিকিৎসকেরা নানা চেষ্টা-তদবির করে যাচ্ছেন মেয়েটিকে সারিয়ে তুলতে।

মোক্তার বলেন বলেন, ‘আমি সামান্য মুদি দোকানী। অতি কষ্টে সন্তানদের লালন-পালন করছি। বিলকিসকে অস্ত্রোপচার করতে হবে চট্টগ্রাম মেডিকেলে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে চিকিৎসকেরা। কক্সবাজারের প্রাইভেট হাসপাতালে দেখেছি। তারা দু’লাখ টাকা চেয়েছে। কিন্তু আমি এতো টাকা পাবো কোথায়?’

বিলকিসের বাবার অভিযোগ রয়েছে, বখাটে মিনহাজের পরিবার ঘটনাটি দামাচাপা দিতে মোটা অংকের মাধ্যমে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও ওই ওয়ার্ডের মেম্বারকে ম্যানেজ করেছে।

চকোরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মককর্তা মো:জহিরুল ইসলাম সিটিজি নিউজকে বলেন, আমি শুনেছি রোববার (৮ জানুয়ারি) আহত ছাত্রীর বাবা মোক্তার থানায় আসছে মামলা করার জন্য। সে অভিযোগ করলে অবশ্যই মামলা নেওয়া হবে।

তিন দিন পরও কেন মামলা নেওয়া হয়নি এ পসঙ্গে বলেন, বিষয়টি স্থানীয় চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যদেও মাধ্যমে সমাধন করার কথা শুনেছিলাম।

সাদা কাগজে আহত ছাত্রীর বাবা মোক্তারের স্বাক্ষর  নেওয়া বিষয়টি তিনি অবগত নন বলে জানান ওসি জহির।

Archive Calendar
Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031