রাজ্যপালের সিদ্ধান্তহীনতায় তামিলনাড়ুর শাসক দল এআইএডিএমকেতে ক্ষমতা দখলের দড়ি টানাটানি চলছেই। মুখ্যমন্ত্রিত্বের দাবিদার শশীকলা নটরাজন গতকাল সোমবার নতুন করে রাজ্যপাল সি বিদ্যাসাগর রাওকে অনুরোধ করেছেন, অবিলম্বে তাঁকে সরকার গঠনের সুযোগ দেওয়া হোক। কারণ, সংখ্যাগরিষ্ঠ বিধায়কের সমর্থন তাঁরই দিকে।
রাজ্যের অ্যাটর্নি জেনারেল গতকাল রাজ্যপালকে পরামর্শ দিয়েছেন, বিবদমান দুই পক্ষকেই গরিষ্ঠতার প্রমাণ রাখার সুযোগ দেওয়া হোক। সুপারিশ মেনে রাজ্যপাল কবে সেই দিন ধার্য করবেন, তা গতকাল পর্যন্ত জানানো হয়নি।
তামিলনাড়ুর পুলিশ গতকাল মাদ্রাজ হাইকোর্টকে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, চেন্নাইয়ের অদূরে এক রিসোর্টে ১১৯ জন বিধায়ককে জোর করে আটকে রাখার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ কেউ করেননি। আদালতের কাছে জবরদস্তি করে আটকে রাখার অভিযোগ করা হয়েছিল। হাইকোর্ট তা খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছিলেন পুলিশকে।
রাজ্যপাল কেন শশীকলাকে সরকার গঠনের আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন না, তার কারণ এখনো অজানা। শশীকলার দাবি, তাঁর পক্ষে ১২৮ জন বিধায়কের সমর্থন রয়েছে। এর সমর্থনে তিনি বিধায়কদের চিঠিও জমা দিয়েছেন। শশীকলার চ্যালেঞ্জার সাবেক মুখ্যমন্ত্রী পনিরসেলভামও রাজ্যপালকে পাল্টা চিঠি দিয়ে বলেছেন, তাঁকে ভয় দেখিয়ে জোর করে পদত্যাগপত্র লিখিয়ে নিলেও সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থন তাঁরই দিকে রয়েছে। তাঁকে সেই গরিষ্ঠতা প্রমাণের সুযোগ দেওয়া হোক।
রাজ্যপালের সিদ্ধান্ত না নেওয়ার একটি সম্ভাব্য কারণ সুপ্রিম কোর্ট। মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন জয়ললিতা, তাঁর ঘনিষ্ঠ বান্ধবী শশীকলা ও তাঁর পরিবারের অন্য সদস্যদের বিরুদ্ধে জানা আয়-বহির্ভূত সম্পত্তির মামলার রায় সুপ্রিম কোর্টের চলতি সপ্তাহের মধ্যেই দেওয়ার কথা। দোষী সাব্যস্ত হলে এবং দুই বছরের বেশি কারাদণ্ড হলে শশীকলা ভোটে দাঁড়ানোর অধিকার হারাবেন। রাজ্যপাল সম্ভবত সেই রায়েরই অপেক্ষা করছেন।
শশীকলা এই বিলম্বের পেছনে রাজনৈতিক কারণ দেখতে পাচ্ছেন। সে জন্য তিনি প্রতিদিনই রাজ্যপালের ওপর চাপ সৃষ্টি করছেন। একই সঙ্গে ধরে রাখার চেষ্টা চালাচ্ছেন সমর্থনকারী বিধায়কদের। রবি ও সোমবার তিনি রিসোর্টে গিয়ে বিধায়কদের সঙ্গে কথা বলেন। প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতার কথা বলতে গিয়ে তিনি কেঁদে ফেলেন। শশীকলা বলেন, ‘আম্মার শেষ কথা ছিল, কেউ আমাদের দল ভেঙে দিতে পারবে না।’ সেই চেষ্টা চলছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘এই দল আমাদের সম্পদ। আম্মা এই সম্পদ দিয়ে গেছেন। এটা আমরা রক্ষা করব।’ দলের মনোবল অটুট রাখতে শশীকলা বলেন, জয়ললিতার ছবি সাক্ষী রেখে তাঁরা সরকার গঠনের শপথ নেবেন। এই শপথ তাঁরা আম্মার সমাধিতে গিয়েও নেবেন।
তামিলনাড়ু বিধানসভার মোট সদস্য ২৩৪। ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে এআইএডিএমকে জেতে ১৩৪ আসনে। পনিরসেলভাম ও তাঁর অনুগামীরা চাইছেন শশীকলার পক্ষে সমর্থন, যাতে কিছুতেই ১১৮ ছুঁতে না পারে। এখনো পনিরসেলভামের দিকে বেশি বিধায়কের সমর্থন নেই। কিন্তু তিনি দাবি করছেন, নির্ভয়ে ভোট দিতে পারলে সমর্থন তাঁর দিকেই ঢলবে। কারণ, জয়ললিতা যতবার বিপদে পড়েছেন, ততবারই তাঁকে অস্থায়ী মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে বেছে নিয়েছেন।