রাঙ্গামাটিঃ-রাঙ্গামাটি জেনারেল হাসপাতাল ভবনের তৃতীয় তলায় সম্প্রসারিত ভবন নির্মিত হচ্ছে নকশা ও প্রকল্প অনুমোদন ছাড়াই। আর এতে করে অপরিকল্পিতভারে ভবন নির্মানের ফলে অতিরিক্ত চাপে ভারসাম্য হারিয়ে হাসপাতালটির বিভিন্ন অংশে ফাটলের সৃষ্টি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। জানা গেছে, ১৯৮৩ সালে ৫০ শয্যা দিয়ে নতুন ভবন চালু করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৮৪ সালে ১০০ শয্যায় উন্নীত হওয়ার পর রাঙ্গামাটি জেনারেল হাসাপাতালের দ্বিতল ভবনকে ২০০৫ সালে ঝুকিঁপূর্ন ভবন হিসাবে চিহ্নিত করে রাঙ্গামাটি পৌরসভা। ভবন ঝুকিপূর্ন হওয়া সত্বেও রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদ গত বছরের মাঝামাঝি হাসপাতাল সম্প্রসারণ করতে ভবনের তৃতীয় তলায় অপরিকল্পিতভারে ভবন নির্মান কাজ হাতে নেয়। এ ভবন আংশিক নিমার্নের পর অতিরিক্ত চাপে ভারসাম্য হারিয়ে হাসপাতাল ভবনের বিমে ও আস্তরে ফাটল সৃষ্টি হতে থাকে। এতে রোগীদের মধ্যে আতংক দেখা দিলে রবিবার (২৯ জানুয়ারী) সকালে শিশু ও মহিলা ওয়ার্ড থেকে রোগীদের অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে আসে। এ ব্যাপারে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের নির্বাহী প্রকৌশলী কাজী আবদুস সামাদ বলেন, পুরনো ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত হওয়ায় এর তৃতীয় তলা নির্মাণের জন্য কোনো কাজ হাতে নেয়া হয়নি। কিন্তু এরপরও সম্পূর্ণ অপরিকল্পিতভাবে তৃতীয় তলায় সম্প্রসারিত ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। মূলত: এটি নির্মিত হচ্ছে সিভিল সার্জনের তত্ত্বাবধানে। এজন্য উন্মুক্ত টেন্ডারও আহবান করা হয়নি। এতে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের কোনো রকম অনুমোদন ও সম্পৃক্ততা নেই। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের তৃতীয় তলায় সম্প্রসারিত ভবনটির নির্মাণ কাজ চলছে। তখন উপস্থিত ছিলেন, সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার টিটু। এসময় এব্যাপারে তিনি বলেন, তাকে কাজ বন্ধ রাখতে বলা হয়নি। তাই নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। তবে এ নিয়ে ঝুঁকির কারণ নেই। তিনি কাজটি নিয়েছেন আরেক ঠিকাদার অমলেন্দু চাকমার নামে। কাজটির জন্য মোট ৩০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়ার কথা। তবে শুরু করতে হয়েছে ৩ লাখ টাকায়। কাজ শেষে চূড়ান্ত বিল দাখিল করতে বলা হয়েছে। এটি রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের বিশেষ বরাদ্দের টাকায় হাতে নেয়া হয় বলে জানান তিনি। এদিকে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের নির্বাহী প্রকৌশলী কাজী আবদুস সামাদ বলেন, দ্বিতলবিশিষ্ট হাসপাতাল ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত হওয়ায় অনেক আগেই এটি পরিত্যক্ত হিসেবে বিবেচিত। তাই ঝুঁকিপূর্ণ অযোগ্য ভবনের উপর পরবর্তী তলা বা সম্প্রসারিত ভবন নির্মাণের বিষয়টি প্রশ্নই আসে না। কাজটি যে জেলা পরিষদ হতে নেয়া হয়েছে বলে বলা হচ্ছে তা সঠিক নয়। জেলা পরিষদ এর কোনো নকশা তৈরি ও প্রকল্প হাতে নেয়নি। তাই এর কোনো নকশা নেই। নেই প্রকল্পের অনুমোদন। অতএব তৃতীয় তলায় সম্প্রসারিত ভবন নির্মাণ নিয়ে জেলা পরিষদ কিছুই জানে না। তিনি বলেন, মূলত তৃতীয় তলা ভবনটি সিভিল সার্জনের তত্ত্বাবধানে নিজেরাই করছে তারা। তাছাড়া ছাদ ঢালাইয়ের সময় আমাকে যেতে বলায় আমি বলেছি, এটা ঝুঁকিপূর্ণ পুরানো ভবন। এটি অনেকটা পরিত্যক্ত। কাজেই এর উপর কোনোতেই ছাদ ঢালাই করা যাবে না। সিভিল সার্জনকে বলেছি, আপনি মারাত্মক ভুল করতে যাচ্ছেন, এটা করা মোটেও ঠিক হবে না। তিনি আরও বলেন, তার আগে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ হাসপাতালের তৃতীয় তলায় সম্প্রসারিত ভবন নির্মাণে নক্শা তৈরি ও প্রকল্প অনুমোদন চেয়েছিল। কিন্তু আমি তাতে আপত্তি দিয়েছি। পরে সম্ভবত হাসপাতালের নানা সরঞ্জামাদি রাখার কথা বলে হাসপাতাল ভবনের দ্বিতীয় তলার উপর একটি টিনশেড ঘর নির্মাণের জন্য কিছু টাকা চেয়ারম্যানের বিশেষ বরাদ্দ হতে ছাড় করা হয়েছিল। কিন্তু সেইসব তথ্য গোপন করে সিভিল সার্জন ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিজেরাই ঝুঁকিপূর্ণ পুরনো ভবনের উপর তৃতীয় তলায় সম্প্রসারিত পাকা ভবন নির্মাণ করছে- যা সম্পূর্ণ অপরিকল্পিত ও অবৈধ। এব্যাপারে রাঙ্গামাটির সিভিল সার্জন ডা. স্নেহ কান্তি চাকমা বলেন, কাজটি জেলা পরিষদের অর্থায়নে হচ্ছে। এর বিস্তারিত জানেন জেলা পরিষদ। বর্তমানে অনাকাক্ষিত দুর্ঘটনা থেকে রক্ষার জন্য এবং সম্প্রসারিত ভবনটির জরুরি কিছু সংস্কার কাজের প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের রোগীদের অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়েছে। রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সহকারী প্রকৌশলী উজ্জ্বল চাকমা বলেন, ওই হাসপাতাল ভবনটির যে অবস্থা তাতে পরবর্তী তলা নির্মাণের কোনো পরিস্থিতি নেই। বরং পুরনো ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটি ভেঙে হাসপাতালটি নতুন করে নির্মাণ করা জরুরি হয়ে পড়েছে। এদিকে হাসপাতালে শিশু ও মহিলা ওয়ার্ড থেকে পুরুষ ওর্য়াডে রোগী স্থানান্তর করায় গাদাগাদিতে রোগীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। নতুন রোগী আসলে হাসপাতালের মেঝেতে রেখে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হচ্ছে। আর রোগীদের সাথে আসা দর্শনাথীরা তাদের আত্মীয়-স্বজনদের সাথে দেখা করতে হিমশীম খাচ্ছে বলে জানা গেছে।