পোলিও টিকা দেওয়ার নামে জোর করে রোহিঙ্গা শিশুদের দেহে এক ধরনের প্রাণঘাতী ইনজেকশন প্রয়োগ করেছে মিয়ানমারের স্বাস্থ্যকর্মীরা। এর প্রভাবে এসব শিশু জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ছে। এমনকি মারাও যাচ্ছে এদের অনেকে। মিয়ানমার থেকে আসা ওই রোহিঙ্গা শিশুদের মাধ্যমে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় বসবাসরত জনগোষ্ঠীর মধ্যেও রোগ সংক্রমণ হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সম্প্রতি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর অমানবিক নির্যাতন, হত্যা, নারীদের ধর্ষণ করে সেনাবাহিনী ও পুলিশ। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন এমনকি জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনেও এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। নিষ্পাপ শিশুরাও রেহাই পায়নি নির্যাতন-নিপীড়ন থেকে।
জানা গেছে, পোলিও টিকা দেওয়ার নামে জোর করে রোহিঙ্গা শিশুদের দেহে এক ধরনের ইনজেকশন প্রয়োগ করছে দেশটির স্বাস্থ্যকর্মীরা। যার প্রভাবে সংশ্লিষ্ট শিশুরা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ছে। এমনকি মারাও যাচ্ছে অনেকে। বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী রাখাইন রাজ্যের মংডুর গ্রামগুলোয় বসবাসরত রোহিঙ্গা পরিবারগুলোর শিশুদের ওপর এ ধরনের নির্যাতন চালানো হয়। সম্প্রতি বাংলাদেশের প্রভাবশালী একটি গোয়েন্দা সংস্থা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এ ব্যাপারে গোপন প্রতিবেদন দাখিল করেছে।
প্রতিবেদনে ওই ইনজেকশনের বায়োলজিক্যাল ইনগ্রেডিয়েন্টসের সঠিকতা ও কার্যকারিতা নিরূপণে বিষয়টি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে জানাতে সুপারিশ করা হয়েছে ওই গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে। এ ছাড়া সীমান্তে কর্মরত বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ- বিজিবিসহ অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সংস্পর্শে যাওয়ার ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দেওয়ার অনুরোধও জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গাদের ওপর এ ধরনের ইনজেকশন প্রয়োগ উভয় দেশের সীমান্ত এলাকায় বসবাসরত জনগোষ্ঠীর মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। যেসব রোহিঙ্গা শিশুর দেহে এ ধরনের ইনজেকশন প্রয়োগ করা হয়েছে, তাদের মাধ্যমে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় বসবাসরত জনগোষ্ঠীর মধ্যেও রোগ সংক্রমণ হতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা গতকাল বুধবার আমাদের সময়কে বলেন, রোহিঙ্গা শিশুদের ওপর ইনজেকশন প্রয়োগের বিষয়টি নিয়ে গোয়েন্দা সংস্থা যেসব সুপারিশ করেছে, সে ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
নিউইয়র্কভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইচআরডব্লিউ) কিছুদিন আগে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছরের ৯ অক্টোবর থেকে মধ্য ডিসেম্বর পর্যন্ত রাখাইনের মংডু জেলার ৯টি গ্রামে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও বর্ডার গার্ড পুলিশের সদস্যরা হত্যা, ধর্ষণ, গণধর্ষণ, আগ্রাসীভাবে দেহ তল্লাশিসহ হামলা-নিপীড়ন চালিয়েছে। বন্দুকের নলের মুখে ধর্ষণের ঘটনাও ঘটেছে।