ঋণ দেওয়ার পর প্রকল্প বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে বাংলাদেশ সরকারকে কঠোর হুঁশিয়ারি দেয় বিশ্বব্যাংক। অথচ সংস্থাটির কর্মকর্তারাই সেই স্বচ্ছতার ধার ধারেন না। বিদেশি সংস্থার কর্মী হিসেবে শুল্কমুক্ত সুবিধায় কেনা বিলাসবহুল গাড়ি ব্যবহারের পর সেগুলো আর নিয়ম অনুযায়ী ফেরত নিচ্ছেন না তাঁরা। কাজের মেয়াদ শেষে দেশে ফেরার আগে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে সেই গাড়ি বিক্রিও করে দিয়েছেন অনেকে। বাংলাদেশে কর্মরত ২৬টি বিদেশি সংস্থার অন্তত ৪০০ কর্মকর্তা শুল্কমুক্ত সুবিধার গাড়ি নিয়ে এমন অনিয়মের সঙ্গে জড়িত। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কর্মকর্তা বিশ্বব্যাংকের। সংস্থাটির ব্যবহার করা কমপক্ষে ৫৩টি গাড়ি নিয়ে দুর্নীতি হয়েছে।
এ অবস্থায় শুল্কমুক্ত সুবিধার অপব্যবহারের অভিযোগে বিশ্বব্যাংক ঢাকা কার্যালয়ের ১৬টি বিলাসবহুল গাড়ি ও পাস বই তলব করেছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। এ জন্য গতকাল বুধবার সাত দিনের সময় বেঁধে দিয়ে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। গাড়িগুলো শুল্কমুক্ত সুবিধায় যাঁদের নামে কেনা হয়েছিল তাঁরা সেগুলো শুল্ককর ফাঁকি দিয়ে বিক্রি করে দিয়েছেন। এরই মধ্যে বাংলাদেশ ছেড়ে গেছেন তাঁরা। নিয়ম থাকলেও গাড়ির কোনো তথ্য তাঁরা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) জানাননি। শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের কর্মকর্তারা গত রাতে কালের কণ্ঠকে জানান, শুল্কমুুক্ত সুবিধা ব্যবহার করে গাড়ি দুর্নীতির এই অভিযোগে প্রচলিত আইনে বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংক মিশনের প্রধানকে দায়ী করার সুযোগ রয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিশ্বব্যাংকসহ এ দেশে কর্মরত ২৬টি বড় সংস্থার কমপক্ষে ৪০০ বিদেশি কর্মকর্তার জন্য বিভিন্ন সময় ৪০০টি বিলাসবহুল গাড়ি শুল্কমুক্ত সুবিধায় কেনা হয়েছিল। পরে সেগুলো নিয়ম ভেঙে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) কর্মকর্তা, দালাল, গাড়ি ব্যবসায়ী চক্র এ দুর্নীতিতে জড়িত। শুল্ক ফাঁকি দিতে তারা ভুয়া নিবন্ধনের জন্য জাল কাগজপত্র তৈরি করে দেয়। এমন একটি বিলাসবহুল গাড়ির ভুয়া নিবন্ধন করে দিতে চক্রটি ১৭ লাখ টাকা নিয়েছে। এই দুর্নীতির তদন্তে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ২৬টি বিদেশি সংস্থার মধ্যে বিশ্বব্যাংকের কর্মকর্তাদের নামে আনা গাড়ির ক্ষেত্রেই দুর্নীতির হার সবচেয়ে বেশি বলে জানিয়েছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর, দুদকসহ বিভিন্ন সূত্র।
পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলেছিল বিশ্বব্যাংক। এই অভিযোগে ২০১২ সালে ঋণচুক্তি বাতিল করেছিল সংস্থাটি। কানাডার আদালতে এ নিয়ে মামলাও হয়েছিল। গত শুক্রবার কানাডার আদালত রায়ে বলেছেন, ওই অভিযোগের কোনো ভিত্তিই নেই। পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুললেও নিজেদের কর্মকর্তাদের গাড়ি দুর্নীতির বিষয়ে বরাবরই নীরব ভূমিকা পালন করেছে বিশ্বব্যাংক।
গতকাল শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের নোটিশ পাঠানো হয়েছে বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টরের কাছে। নোটিশে ১৬টি গাড়ির নম্বর, ব্র্যান্ডসহ বিস্তারিত তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, গাড়িগুলো কোথায় ও কী অবস্থায় আছে তা আগামী সাত দিনের মধ্যে শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগকে জানাতে হবে। এ সময়ের মধ্যে তা না জানালে দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নোটিশ পাওয়ার বিষয়ে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর কিমিআও ফান এক বিবৃতিতে বলেন, ‘ঢাকা ত্যাগের পরও গাড়ির পাস বই জমা দেওয়া হয়নি—বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের এমন ৩৫ বিদেশি কর্মীর পাস বই পরে ফেরত দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে কর্মীদের নাম উল্লেখ করা ৯টি পাস বইয়ের কথা বিশ্বব্যাংকের কাছে কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের পাঠানো আজকের চিঠিতে রয়েছে। আমরা অন্য পাস বইগুলোও যাচাই করছি এবং সেগুলোর অবস্থান খুঁজে বের করছি। বাকি পাস বইগুলো নবায়ন বা সমর্পণের জন্য এনবিআরের কাছে ছয় মাস সময় চেয়েছে বিশ্বব্যাংক। যেকোনো ধরনের ঝামেলা মেটাতে এনবিআরের সঙ্গে খুবই ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে বিশ্বব্যাংক। ’
জানা যায়, এ দেশে কর্মরত বিদেশি কর্মীরা শুল্কমুক্ত সুবিধায় কেনা গাড়ি ব্যবহার করতে পারেন। বেশির ভাগ বিদেশি কর্মী উচ্চ মূল্যের গাড়ি কেনেন। তাঁদের গাড়ির নাম্বার প্লেট থাকে হলুদ রঙের। এসব গাড়ি ব্যবহারের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের মিশন হেডের সুপারিশ থাকতে হয় এবং প্রতিটি গাড়ির বিপরীতে বিশেষ পাস বই দিয়ে থাকে এনবিআর। তবে এ ক্ষেত্রে কিছু শর্ত দেওয়া হয়। এর মধ্যে রয়েছে নির্ধারিত মেয়াদের কাজ শেষে বাংলাদেশ থেকে চলে যাওয়ার সময় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা গাড়িটি সঙ্গে নিয়ে যেতে পারবেন কিংবা বিক্রি করতে পারবেন। তবে যিনি কিনবেন, তাঁকে পুরো শুল্ক-কর পরিশোধ করতে হবে। বাংলাদেশ ছাড়ার আগে ওই কর্মকর্তাদের গাড়ি হস্তান্তরের প্রক্রিয়া ও পাস বইয়ের তথ্য কাস্টমসের নিবন্ধন খাতায় লিপিবদ্ধ করে যেতে হয়। ওই কর্মকর্তারা যে সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন, দেশ ছাড়ার আগে সেই সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের কাছে গাড়ি ফেরতও দিয়ে যেতে পারেন। নিলামের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট সংস্থা এসব গাড়ি বিক্রি করবে। নিলামের ক্রেতাকেও পুরো শুল্ক-কর পরিশোধ করতে হবে।
শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মইনুল খান কালের কণ্ঠকে বলেন, শুল্কমুক্ত সুবিধায় কেনা গাড়ি নিয়ে অনিয়ম হয়েছে। শুল্ক-কর পরিশোধ করা হয়নি। বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে তথ্য পাওয়ার পর গাড়িগুলো উদ্ধারে অভিযান চালানো হবে। শুল্ক হিসেবে বাংলাদেশ সরকারের পাওনা পরিশোধের জন্য বিশ্বব্যাংকের মিশনের প্রধানকে অনুরোধও করা হবে। এ ক্ষেত্রে সংস্থাটির প্রধান দায় এড়াতে পারেন না।
বিশ্বব্যাংকের ওই ১৬ গাড়ির ক্ষেত্রে কী পরিমাণ শুল্ক ফাঁকি দেওয়া হয়েছে—জানতে চাইলে ড. মইনুল খান বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে আমরা জানতে পেরেছি, গাড়িগুলো যথাযথ নিয়মে ডিসপোজাল না করেই ওই ১৬ কর্মকর্তা দেশত্যাগ করেছেন। গাড়িগুলো তৃতীয় কারো কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে নিয়ম না মেনেই। একেকটি গাড়ি একেক মডেলের, সেগুলোর জন্য শুল্কের অঙ্কও হবে আলাদা। সব মিলিয়ে কয়েক কোটি টাকার শুল্ক ফাঁকি দেওয়া হয়ে থাকতে পারে। এ টাকা আদায়যোগ্য। আর কেউ যদি আইন অমান্য করে গাড়িগুলো তৃতীয়পক্ষের কাছে বিক্রি করে থাকেন এবং সেই অর্থ যদি তিনি দেশের বাইরে নিয়ে গিয়ে থাকেন, সে ক্ষেত্রে তার বিরুদ্ধে শুল্ক আইন ও মানি লন্ডারিং আইনে মামলা হতে পারে। ’
১৬ গাড়ি ব্যবহার করেছেন যাঁরা : ২০০৩ সালের প্রিভিলেজড পারসনস (কাস্টমস প্রসিডিউর) রুলসের আওতায় বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশি সংস্থাগুলোর কর্মকর্তারা শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়ি আমদানি করতে পারেন। ওই সুবিধায় ২০০৬, ২০০৭ ও ২০০৯ সালে বিশ্বব্যাংক তাদের কর্মকর্তাদের নামে ১৬টি গাড়ি এনেছিল। গাড়িগুলো কেনা হয়েছিল বিশ্বব্যাংকের অন্তর্ভুক্ত সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি) ও বিশ্বব্যাংকের কর্মকর্তা শকুন্তলা আক্ষ্মীমান, ক্যাথি নোয়েল খু, বিনয় স্বরূপ, ওউসমানি সেকল, হোসে এডগার্দো লোডেসক্যামডোজ, মিরভা তুলিয়া, মি. দাইদ, গ্রিনা ইগরসিনা, মৃদুলা সিংহ, প্রমিতা দাশগুপ্ত, তাহসীন সাঈদ খান, মাইয়ুনি ইসোগাইন, তানিয়া মানা ডি মিত্রাজেংকো, সারেন ওজের, ফ্যাবিও পিতালিউগা ও হেলেন জয় ক্রেইগ। কাজ শেষে এরই মধ্যে তাঁরা বাংলাদেশ ছেড়ে গেছেন বলে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের কাছে তথ্য রয়েছে।
২৬ বিদেশি সংস্থার ৪০০ কর্মকর্তার অপকর্ম, শীর্ষে বিশ্বব্যাংক : বিশ্বব্যাংক, জাইকা, এডিবি, ইউএসআইডি, ডিএফআইডি, ইউনিসেফ, ইউএনডিপিসহ ২৬টি বিদেশি উন্নয়ন সংস্থার বিভিন্ন পর্যায়ের কমপক্ষে ৪০০ কর্মকর্তার ব্যবহারের জন্য শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়ি এনে আর ফেরত দেওয়া হয়নি। বিদেশি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের এই ৪০০ গাড়ির মধ্যে বেশির ভাগ ভুয়া নিবন্ধনের মাধ্যমে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি গাড়ি বিশ্বব্যাংকের কর্মকর্তাদের। সেগুলো নিয়মবহির্ভূতভাবে বিক্রি করা হয়েছে। এতে বিপুল রাজস্ব হারিয়েছে সরকার।
শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়ি এনে পরে আর ফেরত না দেওয়া অন্য সংস্থার মধ্যে আছে আইএলও, আইএফসি, ডাব্লিউএফপি, ড্যানিডা, কেয়ার, সিরডাপ ও এশিয়া ফাউন্ডেশন।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, গত দেড় দশকের মধ্যে গাড়িগুলোর এমন অপব্যবহার হয়েছে। এসব সংস্থার প্রধান ও মুখ্য কর্মকর্তারা এ কাজ করেছেন। এর মধ্যে ইউনিসেফের ২৩ জন, ডিএফআইডির ১৮ জন, বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থার ১৭ জন এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ১২ জন কর্মকর্তা আছেন।
২০১২ সালে বিশ্বব্যাংকের ক্রিস্টিনা কাইমস বাংলাদেশে ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টরের দায়িত্ব পালনকালে শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়ি কিনে ব্যবহার করেন। সেই গাড়ির আর খোঁজ মিলছে না। বিশ্বব্যাংক কর্মকর্তা সঞ্চয় কাঠুরিয়া ২০১৪ সালে ফিরে যাওয়ার আগে এনবিআরে তথ্য দিয়ে যাননি। তাঁর গাড়িরও খোঁজ নেই।
ইউএনডিপির সাবেক কান্ট্রি ডিরেক্টর স্টিফেন প্রিসনার ২০০৮ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে অবস্থান করেন। তাঁর জন্য কেনা হয়েছিল মিতসুবিশি পাজেরো। যাওয়ার আগে মো. হাসিব নামে এক ব্যক্তির কাছে গাড়িটি বিক্রি করেন তিনি। গত ২৮ নভেম্বর গাড়িটি আটক করে শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তর।
ভুয়া নিবন্ধনে বিআরটিএ কর্মকর্তাদের ঘুষ ১৭ লাখ টাকা : শুল্ক ফাঁকি দিয়ে বিদেশ থেকে কারনেট সুবিধায় বিলাসী গাড়ি এনে বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে। তাতে জড়িত রয়েছেন প্রবাসী, কূটনীতিক, পর্যটক, বিআরটিএ কর্মকর্তা, গাড়ি ব্যবসায়ী ও এনবিআরের এক শ্রেণির কর্মকর্তা। সিলেটের বিভিন্ন সীমান্তপথে, চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর দিয়ে এসব গাড়ি ঢোকানো হচ্ছে। এসব গাড়ির বিরুদ্ধে তদন্তে নেমেছে দুদক। এনবিআরের শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরও অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে।
দুদকের তদন্তে দেখা যাচ্ছে, এসব গাড়ি ভুয়া নিবন্ধনের জন্য ভুয়া নথিপত্র তৈরি করা হচ্ছে। প্রমাণ পেয়ে দুদক মামলা করছে। দুদকের তদন্তদল বিআরটিএর বিভিন্ন কার্যালয়েও তদন্ত করছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনাসহ বিআরটিএর বিভিন্ন কার্যালয়ের কমপক্ষে ২২ জন কর্মকর্তা ভুয়া নিবন্ধনের সঙ্গে জড়িত। প্রায় পৌনে দুই কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগে গত ৯ ফেব্রুয়ারি সিলেট বিআরটিএর সহকারী পরিচালক এনায়েত হোসেন মন্টু ও দুই প্রবাসীসহ সাতজনের বিরুদ্ধে দুদক প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক ফরিদুর রহমান বাদী হয়ে সিলেট কোতোয়ালি থানায় মামলা করেছেন। এনায়েত হোসেন মামলার পর থেকেই পলাতক। ব্যবসায়ী মুরশেদ আলম বেলালকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আসামি রূপা মিয়া ও পংকি মিয়া যুক্তরাজ্যে চলে গেছেন। বিএনপির রাজনীতি করলেও প্রবাসীদের গাড়ি এভাবে বিক্রি করে বাণিজ্য চালাতে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছিলেন পংকি। তাঁর নেতৃত্বাধীন সিন্ডিকেটে কমপক্ষে ৯টি বিলাসবহুল গাড়ি রয়েছে।
দুদকের মামলার নথিপত্র ও বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, রূপা মিয়া যুক্তরাজ্যের লন্ডনের গেল স্ট্রিটের বাসিন্দা। এ দেশে বাড়ি সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার তিলক গ্রামে। তাঁর পাসপোর্ট নম্বর ১০৮৭৯৩২০৩। ২০০৭ সালের ১৪ মার্চ তিনি কারনেট সুবিধায় যুক্তরাজ্য থেকে একটি লেক্সাস জিপ দেশে আনেন। তবে জিপটি তিনি আর ফিরিয়ে নেননি। ২০১০ সালের ১৮ অক্টোবর চট্টগ্রাম বন্দর থেকে জিপটি খালাস হয়। আমদানি শুল্ক ফাঁকির উদ্দেশ্যে রূপা মিয়া সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পংকি খানের কাছে সেটি হস্তান্তর করেন। বিশ্বনাথের আল হেরা শপিং সিটির পার্কিংয়ে গাড়িটি রেখে সুনামগঞ্জের হাজীপাড়ার ব্যবসায়ী মুরশেদ আলম বেলালের কাছে ২৯ লাখ টাকায় বিক্রি করেন পংকি। ২০ লাখ টাকা ব্যাংকের মাধ্যমে এবং ৯ লাখ টাকা নগদে পরিশোধ করেন বেলাল। সিলেট বিআরটিএর দালাল রোমান রায়হানের মাধ্যমে গাড়িটি জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে নিবন্ধন করতে ১৭ লাখ টাকা খরচ করেন বেলাল। ১০ লাখ টাকা ব্যাংকের মাধ্যমে এবং বাকি অর্থ নগদে পরিশোধ করেন তিনি। নিবন্ধনের জন্য জাল কাগজপত্র তৈরিতে সহযোগিতা করেন সিলেট বিআরটিএর সহকারী পরিচালক এনায়েত হোসেন মন্টু, পরিদর্শক কেশব কুমার দাস ও উচ্চমান সহকারী আব্দুর রব। গত বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি বিআরটিএ সিলেট কার্যালয়ের মাধ্যমে গাড়ির নিবন্ধন হয়। শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর গত বছরের ২৬ জুন হাজীপাড়া থেকে গাড়িটি আটক করেছিল। এরপর দুদকের প্রধান কার্যালয়ের একটি দল গত মাসে বিআরটিএর সিলেট কার্যালয়ে গিয়ে নিবন্ধনের নথিপত্র জব্দ করে। জালিয়াতির প্রমাণ পেয়ে রূপা মিয়া, পংকি খান, মুরশেদ আলম বেলাল, রোমান রায়হান, বরিশালের মুলাদীর চরনাজিরপুরের এনায়েত হোসেন মন্টু, পটুয়াখালীর বাউফলের আব্দুর রব ও আশুগঞ্জের কেশব কুমার দাসকে আসামি করে মামলা করে। ভুয়া নিবন্ধনের কারণে সরকারের এক কোটি ৭৪ লাখ ৯৯ হাজার ১৬৭ টাকা ৬৮ পয়সা রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া হয়েছে বলে মামলায় অভিযোগ আনা হয়েছে।