॥ মোহাম্মদ আবু তৈয়ব, খাগড়াছড়ি ॥ খাগড়াছড়ি জেলার মানিকছড়ির রাবার বাগানস্থ ‘সাহারা এগ্রো ফার্মের’ লীজ নেওয়া ও ক্রয়কৃত ১’শ ৮৭ একর ভূমির সৃজিত বাগানের কিছু অংশে অর্ধশতাধিক মূল্যবান গাছ কেটে দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনার জন্য বাগান কর্তৃপক্ষ ভূমি বিক্রেতাসহ দুর্বৃত্তদের দায়ী করে মানিকছড়ি থানায় অভিযোগ দিয়েছেন।
এদিকে, সাহারা এগ্রো ফার্মস ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মানিকছড়ি উপজেলার ২১৪ নং ডলু মৌজাস্থ সাবেক ‘রাবার বাগানের লীজ ২০০৭ সালে সরকার কর্তৃক বাতিল হয়। পরে বাতিল লীজের ১২৫একর টিলা ভূমি নতুন করে লীজ পেতে সরকার নিকট আবেদন করেন সাহারা এগ্রো ফার্মের মালিক পক্ষ।
তাঁদের আবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, মোহাম্মদ মহি উদ্দীন ভূইঁয়া,পিতা- ফজলুল করিম ভূইঁয়া, ৫১ নং হোল্ডিং এ ২৫ একর, মো. রশীদ আলী, পিতা- মুফতী সৈয়দ আলী, ৩৫ নং হোল্ডিং এ ২৫ একর, এস.এম. গোলাম মোস্তফা, পিতা- আবদুর রশিদ, ৩৬ নং হোল্ডিং এ ২৫ একর, আবদুল মন্নান, পিতা-বজলুর রহমান, ৩৮ নং হোল্ডিং এ ২৫ একর এবং আবদুস ছালাম মজুমদার, পিতা-আবদুল কাদের মজুমদার, ৫২ নং হোল্ডিং ২৫ একরসহ মোট ১২৫ একর ভূমি লীজ পাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ঠ দপ্তরে আবেদন করেন। যাহা বর্তমানে লীজের প্রক্রিয়াধীন। এছাড়া উক্ত ভূমির পার্শ্বে খাস ও রেকর্ডীয় ৬২ একর ভূমি বিভিন্ন ব্যক্তিদের নিকট থেকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি’র মাধ্যমে আঞ্চলিক দলিল মূলে ক্রয় করে মোট ১৮৭ একর ভূমিতে ঘেরা(কাটা তারের বেড়া) দিয়ে তাতে যথারীতি বাগ-বাগান সৃজন, মাছের লেক খনন ও গবাদি পশুপালন শুরু করেছেন বাগান মালিক পক্ষ।
অপরদিকে গত ১ মার্চ জনৈক মো. এয়াকুব আলী লোকজন (লেবার) নিয়ে প্রভাব খাটিয়ে সাহারা এগ্রো ফার্মের(ঘেরা দেওয়া)ভূমিতে জোরপূর্বক ঢুকে অর্ধশতাধিক মূল্যবান গাছ কেটে ফেলে। এ ঘটনায় উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্ঠি হয়। পরে বাগান সহকারী ম্যানাজার মো. মোস্তফা বাদী হয়ে মানিকছড়ি থানায় ৬ জনের নাম উল্লেখসহ আরো ১০/১২ জন অজ্ঞাত নামা ব্যক্তির বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
এদিকে সারাহা এগ্রো ফার্মের ম্যানাজার মো. জাবেদ অভিযোগ করে বলেন, সাবেক রাবার বাগানের লীজকৃত ভূমি সরকার কর্তৃক বাতিল হওয়ার পর সাহার এগ্রো ফার্মের মালিক পক্ষ সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মো. আবুল কালাম(মধ্যস্থতাকারী) এর মাধ্যমে সকল ভূমি লীজ ও ক্রয় প্রক্রিয়া শুরু করেন। এ নিয়ে ওই সাবেক জনপ্রতিনিধি’র সাথে মালিক পক্ষের একটি চুক্তিনামা হয়েছে।
চুক্তিনামা অনুযায়ী মধ্যস্থতাকারী এখনো ভূমির সকল রেকর্ডপত্র মালিক পক্ষকে বুঝিয়ে না দেয়ায় কিছু টাকা বকেয়া রয়েছে। তবে চুক্তিনামার শর্ত লংঘন হয়নি। কিন্তু মধ্যস্থতাকারীর নিকট ভূমি বিক্রেতারা টাকা পাবে এমন যুক্তি দেখিয়ে অবৈধভাবে বিক্রিত ভূমিতে প্রবেশ এবং প্রভাবখাটিয়ে মূল্যবান গাছ-গাছালি কেটে নেয়া সর্ম্পণ বেআইনি এবং সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের শামিল।
এ বিয়য়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত মো. এয়াকুব আলী গাছ কাটার ঘটনা স্বীকার করে জানিয়েছেন, এটি আমার স্ত্রী সালমা আক্তারের নামে রেকর্ডীয় ৪ একর টিলা ভূমি রয়েছে। আমি উক্ত ভূমিতে আমার হাতে সৃজিত গাছ বিক্রির জন্য আমি একটি জোত পারমিট অনুমোদন করেছি। যার কারণে আমি লোকজন নিয়ে গাছ কেটেছি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মো. আবুল কালাম (মধ্যস্থতাকারী) জানান, সাহারা এগ্রো ফার্ম কর্তৃপক্ষের নিটক এখনো ভূমির অনেক টাকা বকেয়া রয়েছে। ফলে লোকজন (বিক্রেতারা) বকেয়া টাকার জন্য ঝামেলা সৃষ্ঠি করছে। মালিকপক্ষকে বকেয়া টাকা পরিশোধের জন্য বার বার বলছি, কিন্তু তারা বিষয়টি আমলে নিচ্ছে না।
এ বিষয়ে মানিকছড়ি থানার এস.আই মো. হেলাল উদ্দীন ঘটনার সত্যতা স্বীকার বলেছেন, এভাবে বৃক্ষ নিধন করা ঠিক হয়নি। বিষয়টি স্থানীয়ভাবে সমাধানের চেষ্ঠা চলছে।