শুক্রবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক মানববন্ধন কর্মসূচিতে তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী কী কী বিষয় নিয়ে ভারতে যাবেন, কথা বলবেন। আমরা তার বিষয়গুলো ভারত যাওয়ার পূর্বে জানতে চাই, জাতি জানতে চায়।
“এই জানার মধ্য দিয়ে জাতি বিবেচনা করবে- কোনটা দেশের জন্য মঙ্গলজনক, কোনটা মঙ্গলজনক নয়।”
দেশের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হয় এমন কোনো চুক্তি প্রতিবেশী দেশটির সঙ্গে না করতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানান নোমান।
“প্রধানমন্ত্রী এমন কোনো চুক্তি করবেন না, যে চুক্তির মাধ্যমে আমাদের জাতীয় স্বার্থ বিঘ্নিত হবে; এবং সারা বিশ্বের আমরা একটা কোয়েশ্চেন জাতি হিসেবে পরিগণিত হব। সেটা যাতে না হয়, সেদিকে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।”
নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ২০১৫ সালে বাংলাদেশে প্রথম সফরের পর শেখ হাসিনাকেও দ্বিপক্ষীয় সফরে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। এপ্রিলের প্রথমার্ধ্বে দেশটি সফরে যেতে পারেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর নিয়ে সংসদে কোনো আলোচনা দেখেন নি অভিযোগ করে ‘জাতীয়তাবাদী বন্ধু দল’ আয়োজিত মানববন্ধন থেকে বিষয়টির সমালোচনা করেন গত নির্বাচন বর্জন করে সংসদের বাইরে থাকা দল বিএনপির নেতা নোমান।
তিনি বলেন, “বর্তমানে একটা তথাকথিত পার্লামেন্টে আছে, একটা রাবার স্ট্যাম্প পার্লামেন্ট আছে। সেখানে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সফর নিয়ে আমরা কোনো আলোচনা দেখি নাই।”
প্রতিবেশী ভারতকে ‘বন্ধু প্রতীম’ দেশ অভিহিত করে নোমান বলেন, “ভারত আমাদের ভ্রাতৃপ্রতীম বন্ধু রাষ্ট্র। আমরা তাদের সাথে সুন্দরভাবে থাকতে চাই। সেটা সমতার ভিত্তিতে, সেটা মাথা নিচু করে নয়।
“প্রধানমন্ত্রী ভারতে যাবেন, দেশের জন্য তিনি কী নিয়ে আসবেন, তার জন্য আমরা অপেক্ষা করব। আমরা আশা করবো, তিনি বাংলাদেশের স্বার্থের স্বপক্ষে বাংলাদেশের জন্য সুফল নিয়ে আসবেন।”
জাতীয়তাবাদী বন্ধু দলের সভাপতি শরীফ মোস্তফা জামাল লিটুর সভাপতিত্বে মানববন্ধনে অন্যদের মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য তৈমুর আলম খন্দকার, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) প্রেসিডিয়াম সদস্য আহসান হাবিব লিংকন বক্তব্য রাখেন।
‘প্রতিরক্ষা চুক্তি হবে স্বাধীনতার পরিপন্থি’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরকালীন সময়ে দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা তিস্তার পানি-বন্টন চুক্তির বিনিময়ে ভারত তাদের সঙ্গে একটি প্রতিরক্ষা চুক্তি করে নেওয়ার কৌশল করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
শুক্রবার রাজধানীর নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের উদ্ধৃতি দিয়ে ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যমে ভারতের সাথে প্রতিরক্ষার চুক্তির বিষয়ে যে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে, তার প্রতি উদ্বেগের সাথে দেশবাসীর দৃষ্টি আকর্ষিত হয়েছে।
“বাংলাদেশের সাথে ভারত যে প্রতিরক্ষা চুক্তির কথা বলছে, তাতে বাংলাদেশের নাগরিকদের এখন খুবই উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। এটি বাংলাদেশের নাগরিকদের আশা-আকাঙ্খার প্রতিফফন তো নয়ই, বরং গোটা জাতিকে গভীর হতাশা ও দুঃশ্চিন্তার মধ্যে ফেলেছে।”
রিজভী বলেন, “বাংলাদেশের নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ ছাপ মারতেই এই চুক্তির জন্য ভারত চাপ প্রয়োগ করছে বলে জনমনে ব্যাপক সন্দেহ দাঁনা বেধেছে।
“সংবাদপত্রে এমনও খবর প্রকাশিত হয়েছে যে, তিস্তা চুক্তির টোপ দিয়ে বাংলাদেশ-ভারত প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর করে নেওয়ার চেষ্টা চলছে। এ ধরনের চুক্তি হলে দেশের সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়বে। শ্রীলঙ্কাও এ ধরনের চুক্তি করেছিল, যার পরিণতি হয়েছে ভয়ানক।”
ভারত প্রতিরক্ষা চুক্তি করতে চাইলেও তা বাংলাদেশের স্বার্থে করবে না বলে মনে করেন বিএনপির এই নেতা।
“যেখানে বাংলাদেশের সীমান্ত এখন সমাধানহীন সহিংসতার ছোবলে রক্তাক্ত, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত পৃথিবীর সবচেয়ে রক্তরঞ্জিত সীমান্ত, যেখানে প্রতিদিন প্রতিনিয়ত বাংলাদেশি নাগরিকদের পাখির মতো গুলি করে হত্যা করা হয়, চলছে অবিরাম নরমেধ যজ্ঞ, ভারতের সাথে আমাদের অভিন্ন নদীর পানির আধা লিটারও ন্যায্য হিস্যা আমরা পাইনি, ভারতের পানি আগ্রাসনে বাংলাদেশের ১২শ নদী এখন বিলিন হয়ে ধু ধু প্রান্তরে পরিণত হয়েছে, সেখানে ভারত বাংলাদেশের স্বার্থে প্রতিরক্ষা চুক্তি সম্পাদন করবে, এটা মোটেও বিশ্বাসযোগ্য নয়।”
রিজভী বলেন, “আমাদের রাষ্ট্রব্যবস্থা, যার ওপর দেশ ও জনগণের নিরাপত্তা ন্যস্ত, তারাই যদি এরকম চুক্তির দিকে ধাবিত হয়, তাহলে তা হবে স্বাধীন দেশের জনগণের সাথে ভয়াবহ বিশ্বাসঘাতকতা।
“এ ধরনের রাষ্ট্রবিরোধী প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষরিত হলে, জনগণ তা দেশের স্বার্থে সকল শক্তি দিয়ে প্রতিহত করবে। এদেশের জনগণ বাংলাদেশকে সিকিম বা করদমিত্র রাজ্যের স্ট্যাটাসে অবনমিত করতে দেবে না।”
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে দলের কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, সানাউল্লাহ মিয়া, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, তাইফুল ইসলাম টিপু এবং শহীদুল ইসলাম বাবুল উপস্থিত ছিলেন।