প্রস্তুত থাকবে বাংলাদেশ: প্রধানমন্ত্রী

প্রস্তুত থাকবে বাংলাদেশ: প্রধানমন্ত্রী

রোববার চট্টগ্রামে নৌ ঘাঁটি ঈশা খাঁয় তিনি বাংলাদেশের প্রথম দুটি সাবমেরিন ‘বানৌজা নবযাত্রা’ ও ‘বানৌজা জয়যাত্রা’র কমিশনিং ফরমান হস্তান্তর করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা সকলের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখে জনগণের উন্নয়ন করতে চাই।  তবে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে আমাদের যা যা প্রয়োজন, আমরা সংগ্রহ করব।

“আমরা কারও সাথে কখনো যুদ্ধে লিপ্ত হতে চাই না। যদি কেউ আমাদের আক্রমণ করে, আমরা যেন তার সমুচিত জবাব দিতে পারি, সেই প্রস্তুতি আমাদের সব সময় থাকবে।… এজন্য যা যা করণীয় আমরা করে যাচ্ছি।”

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে একটি সত্যিকারের ‘ত্রিমাত্রিক বাহিনীতে’ রূপান্তরের যে প্রতিশ্রুতি তিনি দিয়েছিলাম, সাবমেরিন অন্তর্ভুক্তির মধ্য দিয়ে তা পূরণ হল।

“আমাদের সকলের দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন-ত্রিমাত্রিক নৌবাহিনী গঠনের অংশ হিসেবে দুটি সাবমেরিন বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে সংযোজন করতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত,” বলেন তিনি।

চীনে তৈরি ০৩৫ জি টাইপ অ্যাটাক সাবমেরিক বানৌজা ‘নবযাত্রা’ও বানৌজা ‘জয়যাত্রা’ দৈর্ঘ্যে ৭৬ মিটার, প্রস্থে ৭ দশমিক ৬ মিটার। টর্পেডো ও মাইনে সজ্জিত সাবমেরিন দুটির সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৭ নটিক্যাল মাইল এবং ডিসপ্লেসমেন্ট এক হাজার ৬০৯ টন।

নৌবাহিনীর এ দুটি যুদ্ধযান শত্রু জাহাজ ও সাবমেরিনের গতিবিধি পর্যবেক্ষণসহ যুদ্ধকালীন দায়িত্ব পালনে সক্ষম বলে অনুষ্ঠানে জানানো হয়।

বিশ্বের ‘গুটিকয় দেশ’ সাবমেরিন পরিচালনা করে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সেই তালিকায় আজ থেকে বাংলাদেশের নাম স্থান পেয়েছে। জাতি হিসেবে এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত সম্মান ও মর্যাদার বিষয়।”

বাংলাদেশ নৌবাহিনী জাতিসংঘের জন্য আন্তর্জাতিক জলসীমায় টহল দিয়ে বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় ‘অনন্য নজির স্থাপন করছে’ বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।

চীনের দালিয়ান প্রদেশের লিয়াওনান শিপইয়ার্ডে গত বছরের ১৪ নভেম্বর এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল নিজামউদ্দিন আহমেদের কাছে সাবমেরিন দুটি হস্তান্তর করেন চীনের রিয়ার অ্যাডমিরাল লিউ জি ঝু।

বাংলাদেশ ও চীনের নৌবাহিনীর কর্মকর্তা ও নাবিকদের যৌথ তত্ত্বাবধানে প্রশিক্ষণ ও ‘সি ট্রায়াল’ শেষে গত ২২ ডিসেম্বর সাবমেরিন দুটি চট্টগ্রামে আসে।

সাবমেরিন দুটির আধুনিকায়ন, ক্রুদের প্রশিক্ষণ ও কারিগরি সহযোগিতার জন্য চীন সরকার এবং দেশটির নৌবাহিনী ও জনগণকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।

সেই সঙ্গে বাংলাদেশের প্রথম সাবমেরিন দুটির ক্রুদের অভিনন্দন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এটি একটি ‘বিরল সৌভাগ্য ও সম্মানের’ বিষয়।

“সাবমেরিন পরিচালনার ঝুঁকি আছে। তেমনি অত্যন্ত গর্বেরও বটে। আপনাদের প্রশিক্ষণ ও উদ্যোগে কাজে লাগিয়ে যখন কাজ করবেন তখন এই কঠিন কাজটিও আপনাদের জন্য সহজ হয়ে যাবে।”

ক্রুদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, “আপনারা নবীন ক্রু। আপনাদের লক্ষ্য হবে সমুদ্রে সফলভাবে সাবমেরিন চালনার অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে প্রকৃত অপারেশনের জন্য প্রস্তুত হওয়া।”

নবগঠিত এই সাবমেরিন আর্মকে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ শাখা হিসেবে গড়ে তোলার জন্য যে নীতিমালা, অবকাঠামো ও ইক্যুইপমেন্ট দরকার তা তৈরির ক্ষেত্রেও ক্রুদের অবদান রাখার তাগিদ দেন সরকারপ্রধান।

তিনি বলেন, “দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হয়ে অসীম সাহসের সাথে সাবমেরিন চালনার চ্যালেঞ্জকে মোকাবিলা করতে হবে।”

একাত্তরে চট্টগ্রামে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর সরবরাহ লাইন পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া অপারেশন জ্যাকপটের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “স্বাধীনতা যুদ্ধে অপারেশন জ্যাকপট পরিচালনার কেন্দ্রে ছিলেন দেশপ্রেমী এবং অকুতোভয় একদল প্রশিক্ষিত সাবমেরিনার।”

সাবমেরিনের সকল মিশনের সাফল্য কামনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বাঙালি জাতির ইতিহাস বীরের ইতিহাস। কাজেই আমি নিশ্চিত, আপনাদের দেশপ্রেম, মেধা ও পরিশ্রম দিয়ে এই সাবমেরিন দুটির সর্বোত্তম ব্যবহার আপনারা নিশ্চিত করবেন।”

আন্তর্জাতিক আদালতের মামলার রায়ে মিয়ানমারের কাছ থেকে ১ লাখ ১১ হাজার ৬৩১ বর্গকিলোমিটার সমুদ্র এলাকা এবং ভারতের কাছ থেকে ১৯ হাজার ৪৬৭ বর্গকিলোমিটার সমুদ্র এলাকার ওপর কর্তৃত্ব অর্জনের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সমুদ্রসীমার সম্পদ কাজে লাগিয়ে যেন আমরা আর্থসামাজিক উন্নয়ন করতে পারি। আমরা এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে নৌ-বাহিনীকে ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলেছি।”

নৌবাহিনীর উন্নয়নে আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া পদক্ষেপগুলোর কথাও প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, সম্প্রতি চীন থেকে সংগ্রহ করা অত্যাধুনিক করভেট নৌবাহিনীর শক্তি বৃদ্ধি করেছে। পাশাপাশি যুদ্ধ জাহাজ নির্মাণে নিজস্ব সামর্থ বৃদ্ধি করা হচ্ছে। খুলনা শিপইয়ার্ডে প্রথমবারের মত এলপিসি তৈরির কাজ চলছে।

বাংলাদেশ নৌবাহিনী পরিচালিত চট্টগ্রাম ড্রাইডকে ফ্রিগেট নির্মাণ প্রকল্পের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে যুদ্ধজাহাজ নির্মাণে বাংলাদেশ ‘অনেকটা স্বয়ংসম্পূর্ণতা’ অর্জন করবে। সমুদ্রে বিভিন্ন ‘অপ্রথাগত হুমকি’ মোকাবিলার জন্য নৌবাহিনীর স্পেশাল ফোর্সও গঠন করা হয়েছে।

ত্রিমাত্রিক নৌবাহিনী গঠনের লক্ষ্যে বর্তমান সরকারের সময়ে হেলিকপ্টার ও মেরিটাইম পেট্রোল এয়ারক্রাফ্ট নিয়ে গঠিত হয় নেভাল এভিয়েশন।এর বহরে শিগগিরই আরও মেরিটাইম পেট্রোল এয়ারক্রাফট ও আধুনিক সমর সরঞ্জাম সম্বলিত হেলিকপ্টার যুক্ত করা হবে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

নৌবহর বৃদ্ধির পাশাপাশি নৌবাহিনীর নিজস্ব বিমান ও সাবমেরিন ঘাঁটিসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর উন্নয়নে সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, এর ধারাবাহিকতায় পটুয়াখালীর রাবনাবাদ এলাকায় ‘বানৌজা শেরে বাংলা’ নামে নৌবাহিনীর সর্ববৃহৎ নৌঘাঁটির ভিত্তি স্থাপন করা হয়েছে।

এছাড়া নৌবাহিনীর কর্মকর্তা ও নাবিকদের আবাসন এবং প্রশিক্ষণ সুবিধা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনা নৌ-অঞ্চলে বহুতল ভবন নির্মাণ প্রকল্পের কথাও প্রধানমন্ত্রী বলেন।

সাবমেরিন সংযোজনের সঙ্গে সঙ্গে এর নিরাপত্তা, রক্ষণাবেক্ষণ ও প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে শেখ হাসিনা বলেন, “সাবমেরিনের জন্য পৃথক ঘাঁটি নির্মাণসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির কার্যক্রম চলমান রয়েছে।”

প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে সাবমেরিন দুটির অধিনায়কদের হাতে কমিশনিং ফরমান তুলে দেন এবং নৌবাহিনীর রীতি অনুযায়ী আনুষ্ঠানিকভাবে নামফলক উন্মোচন করেন।

মন্ত্রিসভার সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, সেনা ও বিমান বাহিনী প্রধান, সংসদ সদস্য, ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা ও কূটনীতিকরা উপস্থিত ছিলেন এ অনুষ্ঠানে।

Archive Calendar
Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031