মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যা যারা ভুলে যায়, এদেশ তাদের নয়: প্রধানমন্ত্রী


জাতীয় সংসদে শনিবারের অধিবেশনে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চকে ‘গণহত্যা দিবস’ ঘোষণার ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “এই হত্যাকাণ্ড যারা ভুলে যায়, তাদের বাংলাদেশে থাকার কোনো অধিকার নাই; তাদের না থাকাই ভালো।

“আর, যারা যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে দহরম মহরম করে, তাদের পাকিস্তানে চলে যাওয়াই ভালো। এই বাংলাদেশে তারা থাকলে, এদেশের মানুষের ভাগ্য সবসময় দুর্ভাগ্যে পরিণত হবে।”

২৩ বছরের শোষণ থেকে বাঙালির মুক্তির আন্দোলনের শ্বাসরোধ করতে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে এ দেশের নিরস্ত্র মানুষের ওপর ঝাপিয়ে পড়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামের সেই অভিযানে কালরাতের প্রথম প্রহরে ঢাকায় চালানো হয় গণহত্যা।

তার পর দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ৩০ লাখ বাঙালির জীবন ও অগণিত নারীর সম্ভ্রমের বিনিময়ে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যে গণহত্যা বাংলাদেশে হয়েছে এটার জন্য পাকিস্তানি সামরিক শাসকেরা যতটা দায়ী, আমাদের দেশের আল বদর, আল শামস, রাজাকার যারা এই পাকিস্তানিদের দালালি করেছিল তারাও ততটা দায়ী।

“পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তো পাকিস্তন থেকে এসেছিলো। তাদের এদেশের কোনো পথঘাট চেনার কথা নয়। তাদের পথঘাট চিনিয়েছে আলবদর, রাজাকার, আল-শামসম আর জামাত-শিবির। এরাই ছিলো পাকিস্তানিদের বড় দোসর।”

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ থেকে ২৭ মার্চের দুঃসহ দিনগুলোর স্মৃতিচারণ করে বঙ্গবন্ধু কন্যা তার পিতাকে ধরে নিয়ে যাওয়া এবং মা ও ছোট দুই ভাই থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, “২৭ তারিখ (২৭ মার্চ কিছুক্ষণের জন্য সান্ধ্য আইন তুলে নেওয়া হয়) যখন বের হয়েছি.. রাস্তায় রাস্তায় গুলিবিদ্ধ বা ট্যাংকের চাকায় পিষ্ঠ হওয়া মানুষ। গণহত্যা কী, তাতো নিজের চোখে দেখেছি।”

বস্তিতে আগুন লাগিয়ে দিয়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গুলি করে জনগণকে হত্যা করার কথাও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।

ওই অন্তঃসত্ত্বা হয়ে হাসপাতালে যাওয়ার স্মৃতিচারণ করে শেখ হাসিনা বলেন, “হাসপাতালে ওষুধ নাই, চিকিৎসক নাই, নার্স নাই। চারদিকে হাত-পা কাটা মানুষ।

“গণহত্যার প্রমাণ লাগে না। সারা বিশ্বের সকল পত্রিকায় এসেছে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কীভাবে গণহত্যা করেছে। আমি নিজের চোখেও সেই বিভীষিকা দেখেছি। বাংলাদেশের এমন কোনো গ্রাম নেই, যেখানে গণহত্যার চিহ্ন নেই।”

সম্প্রতি পাকিস্তানের করাচি থেকে প্রকাশিত ‘ক্রিয়েশন অব বাংলাদেশ, মিথস এক্সপ্লোডেড’ নামে একটি বইয়ের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, “আজকে দেখছি, আজো পাকিস্তানিদের জ্ঞান ফেরেনি। মিথ্যে গবেষণা প্রচার করছে। এখনো তারা মিথ্যাচার করে যাচ্ছে।

“আমাদের দেশের কিছু দালাল রয়েছে। নিজেরই লজ্জা হয় এই লোকটাকে আমি অবসরে যাওয়ার সময় মেজর জেনারেল পদে প্রমোশন দেই। যে জেড এ খান.. সে তার বইয়ে লেখে বাংলাদেশের স্বাধীনতা নাকি ভারতের ‘র’ (গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং) ষড়যন্ত্রে এসেছে।”

পাকিস্তানি নাগরিক জুনায়েদ আহমেদের লেখা ওই বইয়ের ভূমিকা লিখেছেন বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর সাবেক মেজর জেনারেল জেড এ খান। তিনি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ছিলেন। এক-এগারোর পরবর্তী সময়ে সংস্কারপন্থী হিসেবে পরিচিতি পান।

যারা এখনো পাকিস্তানিদের পদলেহন করে, তাদের ‘কুলাঙ্গার’ আখ্যায়িত শেখ হাসিনা বলেন, “যতই লাথি খাক তারপরও তারা তাদের পদলেহন করবে। তারপরও তাদের পা চাটবে। এ ধরণের মানসিকতর রয়েছে বলেই আমাদের দেশের মানুষ কষ্ট পায়।

মুক্ত গণমাধ্যম চাই : সকল গণমাধ্যমে এক নীতিমালা, তথাকথিত ওয়েজ বোর্ড বাতিল, নিজস্ব বেতন বোর্ড, বিজ্ঞাপন ও ক্রোড়পত্র নীতিমালা নিয়ন্ত্রণ মুক্ত, প্রয়োজনীয় কাঁচামালের মূল্য কমানো ও মফস্বলের পত্রিকাগুলো সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করে টিকিয়ে রাখতে হবে

Archive Calendar
Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031