॥ চট্টগ্রাম ব্যুারো ॥ পার্বত্য চট্টগ্রামের রাজনৈতিক সংগঠন জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) সামরিক শাখার থার্ড ইন কমান্ড ধনবিকাশ চাকমা (৬০) ওরফে উ মংকে তার দুই সহযোগীসহ আটক করেছে র্যাব। তাদের কাছ থেকে প্রায় ১২ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। রোববার (১৯ মার্চ) ভোরে তাদের চট্টগ্রামের হাটহাজারী থেকে আটক করা হয়েছে।
সূত্রে জানা গেছে, র্যাব-৭ এর ডিএডি মো. শহীদুল্লাহর নেতৃত্বে একটি টিম রবিবার বিকেলে চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানা এলাকায় ডিউটিরত থাকাকালে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে, বান্দরবান থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম জন সংহতি সমিতির সশস্ত্র শাখার একটি দল খুন, গুম, অপহরণ ও চাঁদাবাজির বিপুল পরিমাণ টাকাসহ মাইক্রোবাসে করে চট্টগ্রামের দিকে আসছে।
এ খবরের ভিত্তিতে ডিএডি মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে হাটহাজারী থানাধীন বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন নিউ শাহজাহান হোটেলের সামনে চেকপোস্ট বসিয়ে গাড়ি তল্লাশী শুরু করে।এই তল্লাশীকালে বিকাল সাড়ে চারটার দিকে চট্টগ্রামের দিক থেকে একটি কালো রঙের মাইক্রোবাস আসতে থাকলে তারা থামানোর সঙ্কেত দেয়। এতে মাইক্রোবাসটি চেকপোস্টের সামনে থামে এবং গাড়ির দরজা খুলে তিন/চারজন যাত্রীবেশী জেএসএস সন্ত্রাসীরা বেরিয়ে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করে।
এসময় র্যাব সদস্যরা তাদের চ্যালেঞ্জ করে আটক করতে সক্ষম হয়। আটককৃতরা হলো, ধনবিকাশ চাকমা, পিতা- মৃত বীরেন্দ্র চাকমা, মাতা- মায়াবী চাকমা, বাড়ি- পানখাইয়া পাড়া, খাগড়াছড়ি; প্রেম রঞ্জন চাকমা(৩২), পিতা- সুন্দর মণি চাকমা, বাড়ি- পূনর্বাসন পাড়া, বান্দরবান সদর এবং রুবেল বাবু তঞ্চঙ্গা, পিতা- রাজ্য মোহন তঞ্চঙ্গা, বাড়ি- বিলাইছড়ি রাঙামাটি।’
সূত্রমতে, আটককালে ধনবিকাশ চাকমার হাতে রক্ষিত কালো রঙের একটি ব্যাগ ও সকলের পোশাকের বিভিন্ন পকেট তল্লাশী করে ১ হাজার টাকা, ৫০০ টাকা ও ১০০ টাকার বেশ কয়েকটি বান্ডিল উদ্ধার করা হয়। এসব বান্ডিলে প্রায় ১২ লক্ষ টাকা পাওয়া যায়।
গ্রেফতারকৃতরা র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে নিজেদের পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সামরিক শাখার সদস্য বলে স্বীকার করে এবং আটককৃত টাকা বান্দরবান থেকে জনসংহতি সমিতির নামে খুন, অপহরণ, গুমের ভয় দেখিয়ে চাঁদাবাজির মাধ্যমে আয় করা বলে র্যাবের কাছে দেয়া স্বীকারোক্তিতে জানিয়েছে।
গ্রেফতারকৃত তিন জনের নামে র্যাব বাদী হয়ে পেনাল কোড আইনের ৩৮৬ ও মানি লন্ডারিং আইনে হাটহাজারী থানায় মামলা দায়ের করেছে।
র্যাবের চট্টগ্রাম জোনের অধিনায়ক লে.কর্ণেল মিফতা উদ্দিন আহমেদ বলেন, ধনবিকাশের নেতৃত্বে জনসংহতি সমিতির একটা গ্রুপ চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে যুক্ত। সর্বশেষ তারা আওয়ামী লীগের এক নেতাকে অপহরণ করেছে। ধনবিকাশ বান্দরবানের পাহাড়ে সব ধরনের অপরাধে নেতৃত্ব দেয়। ধনবিকাশের দুই সহযোগী হলেন, প্রেমরঞ্জন চাকমা ও রুবেল তঞ্চঙ্গ্যা। চাঁদাবাজির প্রায় ১২ লাখ টাকা নিয়ে তারা বান্দরবান থেকে চট্টগ্রাম নগরীতে আসছিল বলে জানিয়েছেন মিফতা।
এদিকে ধনবিকাশ চাকমার গ্রেফতারে বান্দরবান জেলাবাসীর মধ্যে আনন্দ স্বস্তির ভাব পরিলক্ষিত হয়েছে। এ ঘটনায় জেলার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার মধ্যে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। তার বিরুদ্ধে বান্দরবান জেলার বিভিন্ন থানায় বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে বলে তারা জানিয়েছে।
স্থানীয় গোয়েন্দা সূত্রের খবর, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সামরিক শাখার প্রধানের নাম লক্ষী প্রসাদ ওরফে রাজা, দ্বিতীয়জনের নাম অসীম বাবু, তৃতীয় জনের নাম ধনবিকাশ চাকমা এবং চুতর্থ শীর্ষ নেতার নাম সত্যবীর দেওয়ান, তিনি জেএসএসর বিচারক হিসাবে পরিচিত। কার বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেয়া হবে জেএসএসে তিনি তা নির্ধারণ করেন। ইতোপূর্বে অস্ত্র মামলায় তার ১৭ বছরের জেল হয়েছিল। কিন্তু ২ বছর জেল খাটার পর বেরিয়ে ভারতে পালিয়ে যায়।
প্রথম দুইজন এবং চতুর্থজন ভারতের ত্রিপুরায় অবস্থান করে বাংলাদেশে অপারেশন পরিচালনা করে। সে হিসাবে ধনবিকাশ চাকমা জেএসএসের বাংলাদেশে অবস্থানকারী শীর্ষ নেতা। তার নেতৃত্বে বান্দরবানে জেএসএসের চারটা সামরিক শাখা পরিচালিত হয়। এর একটি প্রধানের নাম কাজল, দ্বিতীয়টির প্রধানের নাম বিধান, তৃতীয় শাখার প্রধানের নাম মৈত্রী, চতুর্থটির প্রধানের নাম এস মং।
ধনবিকাশ চাকমা বান্দরবানে উ মং ওরফে ক্ষেত্র বাবু, ওরফে বড়বাবু নামেও পরিচিত। তিনি তার চারটি সশস্ত্র শাখা ব্যবহার করে বান্দরবানে জেএসএসের সকল সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, অপহরণ, খুন, গুম, টেন্ডারবাজি নিয়ন্ত্রণ করতেন। কোথায় বা কোন কাজে কতটাকা চাঁদা নিতে হবে, কার বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নিতে হবে তাও তিনি নির্ধারণ করে দিতেন। বিভিন্ন ব্যক্তি মালিকানাধীন ও সরকারী বাগানের চাঁদা এবং চাঁদা না দিলে সে সকল বাগান দখল নিয়ে বিক্রি করে দিতেন তিনি।
বান্দরবানের আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আদালতের মাধ্যমে তার নামে দায়ের করা মামলায় বান্দরবানে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করার পরিকল্পনা করেছে বলে জানিয়েছে।
ধনবিকাশ চাকমার ব্যাপারে জানতে বান্দরবান জেলা জেএসএসের কয়েকজন শীর্ষ নেতার মোবাইলে ফোন করা হলেও তাদের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।