ফাঁসির দড়িতে মুফতি হান্নানসহ তিন


স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল জানান, বুধবার রাত ১০টায় গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশের শীর্ষ নেতা মুফতি হান্নান ও শরীফ শাহেদুল বিপুলকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়।

একই সময়ে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে তাদের আরেক সহযোগী দেলোয়ার হোসেন রিপনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় বলে জ্যেষ্ঠ জেল সুপার ছগির মিয়া জানান।

হান্নান ও তার দলের জঙ্গিরা ২০০৪ সালের ২১ মে সিলেটে হযরত শাহজালালের মাজার প্রাঙ্গণে ওই গ্রেনেড হামলা চালিয়েছিল ব্রিটিশ হাই কমিশনার আনোয়ার চৌধুরীকে হত্যার উদ্দেশ্য নিয়ে।

ওই ঘটনায় আনোয়ার চৌধুরী প্রাণে বেঁচে গেলেও দুই পুলিশ সদস্যসহ তিনজন নিহত হন। সিলেটের জেলা প্রশাসকসহ অন্তত ৪০ জন আহত হন সেদিন।

ওই হত্যাকাণ্ডের দায়ে হান্নান, বিপুল ও রিপনের মৃত্যুদণ্ডের রায় সর্বোচ্চ আদালতেও বহাল থাকে। সেই রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন নাকচ করে আপিল বিভাগ বলে, “তারা যে অপরাধ করেছে তা পূর্বপরিকল্পিত একটি অপরাধ। ব্রিটিশ কূটনীতিবিদ ও তার সফরসঙ্গীদের হত্যা করার জন্যই এ হামলা চালানো হয়েছিল। এ অভিযোগের দায় থেকে তাদের মুক্তি দেওয়া যায় না।”

রিভিউ খারিজের পর শেষ চেষ্টা হিসেবে অপরাধ স্বীকার করে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চেয়েছিলেন এই তিন জঙ্গি। তা নাকচ হয়ে গেলে নিয়ম অনুযায়ী দণ্ড কার্যকরের প্রক্রিয়া শুরু করে কারা কর্তৃপক্ষ।

অবশেষে বুধবার রাত সোয়া ১০টার দিকে কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দীন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আদালতের রায় অনুযায়ী তিন জঙ্গির মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে।”

আরেক জঙ্গি দল জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ-জেএমবির শীর্ষ নেতা শায়খ আব্দুর রহমান ও সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলাভাইসহ সাত জঙ্গির সর্বোচ্চ শাস্তি কার্যকর (http://bangla.bdnews24.com/samagrabangladesh/article1228243.bdnews) করা হয়েছিল এর আগে। এবার সেই তালিকায় যোগ হল হরকাতুল জিহাদের তিন জঙ্গির নাম।

জঙ্গির কারিগর

আদালতের এই রায় এমন এক দিনে কার্যকর হল, যখন বাংলাদেশের মানুষ বৈশাখ বরণের প্রস্তুতি নিচ্ছে। ২০০১ সালের ১৪ এপ্রিল ওই বর্ষবরণের উৎসবেই রমনা বটমূলে ছায়ানটের অনুষ্ঠানে বোমা হামলায় নিহত হন দশজন।

সেই মামলাতেও নিম্ন আদালতে মুফতি হান্নানের ফাঁসির রায় এসেছে। রায়ের বিরুদ্ধে তার করা আপিলের ওপর শুনানি প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে হাই কোর্টে।

বলা হয়, বিশ শতকের শেষ বছর যশোরে উদীচীর অনুষ্ঠানে হরকাতুল জিহাদের বোমা হামলার মধ্য দিয়েই বাংলাদেশে জঙ্গি হামলার সূচনা হয়েছিল।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টাসহ হরকাতুল জিহাদের ১৩টি নাশকতামূলক ঘটনায় শতাধিক ব্যক্তিকে হত্যার পেছনে মূল ব্যক্তি হিসেবে মুফতি হান্নানকে দায়ী করা হয়।

শেখ হাসিনার নিজের জেলা গোপালগঞ্জেই মুফতি হান্নানের বাড়ি৷ পাকিস্তানের মাদ্রাসায় পড়তে গিয়ে তার জঙ্গিবাদে হাতেখড়ি। আফগানিস্তান সীমান্তে যুদ্ধেও অংশ নিয়েছিলেন তিনি।

আর মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত তার দুই সহযোগীর মধ্যে শরীফ শাহেদুল বিপুলের বাড়ি চাঁদপুর সদরে; দেলোয়ার হোসেন রিপনের বাড়ি মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায়।

সিআইডি অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক আব্দুল কাহার আকন্দ গতবছর বিবিসিকে বলেন, “হান্নানের বিশেষত্ব হল- তিনি আফগান স্টাইলে বাংলাদেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠার তৎপরতা চালচ্ছিলেন। প্রথমে দেশি বোমা ব্যবহার করলেও পরে পাকিস্তান থেকে গ্রেনেড সংগ্রহ করেন। এছাড়া বোমা বানানো এবং আক্রমণ বিষয়েও তার সামরিক প্রশিক্ষণ আছে এবং এ নিয়ে প্রশিক্ষণও দিতেন তিনি।”

২০০৫ সালের ১ অক্টোবর ঢাকার বাড্ডা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।১৭ মামলার আসামি হান্নান ও তার সহযোগীদের মুক্ত করতে গত ৬ মার্চ টঙ্গীতে প্রিজন ভ্যানে হামলার ঘটনাও ঘটে।

ফিরে দেখা

 

# সিলেটে হযরত শাহজালালের মাজার প্রাঙ্গণে ব্রিটিশ হাই কমিশনার আনোয়ার চৌধুরীকে লক্ষ্য করে গ্রেনেড হামলায় তিনজনের মৃত্যুর ঘটনায় ২০০৪ সালের ২১ মে কোতোয়ালি থানায় অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করে পুলিশ।

# তদন্ত শেষে ২০০৭ সালের ৭ জুন হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি আবদুল হান্নান, তার ভাই মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান ওরফে মফিজ ওরফে অভি, শরীফ শাহেদুল আলম ওরফে বিপুল ও দেলোয়ার ওরফে রিপনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।

# যথাযথ ঠিকানা না থাকায় মুফতি মঈন উদ্দিন ওরফে আবু জান্দাল ওরফে মাসুম বিল্লাহ ওরফে খাজার নাম প্রথমে বাদ দেওয়া হলেও পরে তাকে যুক্ত করে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ওই বছর নভেম্বরে হয় অভিযোগ গঠন।

# ৫৬ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে ২০০৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর সিলেটের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক সামীম মো. আফজাল রায় ঘোষণা করেন। আসামিদের মধ্যে মুফতি হান্নান, বিপুল ও রিপনকে মৃত্যুদণ্ড এবং মহিবুল্লাহ ও আবু জান্দালকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

# ওই রায়ের বিরুদ্ধে আসামিপক্ষের আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের (মুত্যুদণ্ড অনুমোদনের আবেদন) শুনানি শেষে ২০১৫ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রায় দেয় বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি আমির হোসেনের হাই কোর্ট বেঞ্চ। তাতে আসামিদের আপিল খারিজ হয়ে যায়, মুফতি হান্নানসহ তিন আসামির মৃত্যুদণ্ড এবং দুইজনের যাবজ্জীবন দণ্ড বহাল থাকে।

# ওই রায়ের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করেন হান্নান ও বিপুল। আর দেলোয়ারের পক্ষে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আইনজীবী নিয়োগ করা হয়। ২০১৬ সালের ৭ ডিসেম্বর সর্বোচ্চ আদালতের চূড়ান্ত রায়েও ওই তিন আসামির সর্বোচ্চ সাজার সিদ্ধান্ত বহাল থাকে।

# আপিল বিভাগের রায় হাই কোর্ট হয়ে নিম্ন আদালতে যাওয়ার পর বিচারিক আদালত মৃত্যু পরোয়ানা জারি করে এবং তা গত ৩ ফেব্রুয়ারি কারাগারে পৌঁছায়। সেখানেই আসামিদের মৃত্যু পরোয়ানা পড়ে শোনানো হয়।

# আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত তিন আসামি রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করেন। তাদের আবেদন গত ১৯ মার্চ সর্বোচ্চ আদালতে খারিজ হয়ে যায়।

# প্রাণ বাঁচানোর শেষ চেষ্টায় সাংবিধানিক অধিকারের সুযোগ নিয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চেয়েছিলেন তিন জঙ্গি। তাদের সেই আবেদন নাকচ হয়ে গেছে বলে ৯ এপ্রিল সাংবাদিকদের জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।

শেষ সাক্ষা

প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচ হওয়ার পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে দণ্ড কার্যকরের নির্বাহী আদেশ পাঠানো হয় দুই কারাগারে। ওই চিঠি পাওয়ার পর তিন আসামির পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে শেষ দেখা করে যেতে বলে কারা কর্তৃপক্ষ।

সেই ডাকে মুফতি হান্নানের বড় ভাই, স্ত্রী ও দুই মেয়ে সকালে কাশিমপুরে গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করেন।

পরে কারাগার থেকে বেরিয়ে হান্নানের স্ত্রী জাকিয়া পারভীন রুমা বলেন, “উনি বলেছেন, তাকে মিথ্যা মামলায় জড়িত করা হয়েছে। তিনি সবার দোয়া চেয়েছেন।”

রিপনের বাবা আবু ইউসুফ, মা আজিজুন্নেসাসহ পরিবারের ২৭ জন সন্ধ্যায় কারাগারে গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করেন। বেরিয়ে এসে তারা কোনো কথা বলেননি।

তবে রিপনের বাবা আবু ইউসুফ মঙ্গলবার বলেছিলেন, “আমার ছেলে খুব ভালো। সে নির্দোষ। এলাকায়ও সে ভালো ছেলে হিসেবে পরিচিত। সে জঙ্গিদের সঙ্গে মিশিছে কি না তা আমার জানা নেই।”

বিপুলের পরিবারের সদস্যদের খবর দেওয়া হলেও তারা কারাগারে যাননি। তার বাবা হেমায়েত উল্যাহ ছেলের লাশ নিতেও রাজি নন বলে চাঁদপুর সদর উপজেলার মৈশাদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান মানিক জানান।

কড়া নিরাপত্তা

মুফতি হান্নানের পরিবারের সদস্যরা সকালে কামিশপুর কারাগার ঘুরে যাওয়ার পর বিকালের দিকে বদলে যেতে থাকে কারাগারের সামনের দৃশ্যপট।

বিকাল ৪টার পর থেকে দুই কারাগারেই নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। আশপাশের এলাকায় যানবাহন ও সাধারণের যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয়।

পুলিশ ও র‌্যাবের অবস্থানের পাশাপাশি আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের সদস্যদেরও কারাগারের সড়কে দেখা যায়।সন্ধ্যার পর দুই কারাগারে নিয়ে আসা হয় অ্যাম্বুলেন্স।

কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দীন ও অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল ইকবাল হাসান রাত ৮টার দিকে কাশিমপুর কারাগারে প্রবেশ করেন।

রাত সাড়ে ৮টার দিকে কারা কর্তৃপক্ষ মুফতি হান্নানকে তার মায়ের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলার সুযোগ দেয় বলে তার ভাই আলী উজ্জামান জানান।

অসুস্থতার কারণে তাদের মা সকালে গোপালগঞ্জ থেকে আসতে না পারায় হান্নান টেলিফোনে কথা বলার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন।

নিয়ম অনুযায়ী ফাঁসি কার্যকরের আগে আসামিদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। গাজীপুরের সিভিল সার্জন সৈয়দ মঞ্জুরুল হক রাত সাড়ে ৯টার পর কারাগারে প্রবেশ করেন।

তখনই গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এস এম আলম, অতিরিক্তে জেলা ম্যোজিস্ট্রেট রাহেনুল ইসলাম ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশিদকে কারাগারে প্রবেশ করতে দেখা যায়।

এদিকে একই সময়ে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে ঢোকেন সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য অফিসের সহকারী পরিচালক ডা. অমল রতন সাহা। তার ঠিক জেলা প্রশাসক রাহাত আনোয়ার এবং পুলিশ সুপার মো. মনিরুজ্জামান ভেতরে প্রবেশ করেন।

যেভাবে ফাঁসি

কারা কর্মকর্তারা জানান, কারাবিধিতে যেভাবে মৃত্যদণ্ড কার্যকর করতে বলা হয়েছে সে অনুযায়ীই তারা পুরো প্রক্রিয়া শেষ করেন।

মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের চূড়ান্ত প্রস্তুতিতে তিন আসামিকে গোসল করানো হয়। কাশিমপুর কারা জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা মো. হেলাল উদ্দিন কারাগারে গিয়ে মুফতি হান্নান ও বিপুল এবং সিলেটের আবু তোরাব মসজিদের ইমাম বেলাল উদ্দীন আসামি রিপনকে তওবা পড়ান।

কাশিমপুরে দুই জঙ্গির ফাঁসি কার্যকর করেন জল্লাদ রাজু। তার সঙ্গে ছিলেন শফিকুল ইসলাম ও ইকবাল হোসেন। আর সিলেটে ফাঁসি কার্যকর করেন প্রধান জল্লাদ ফারুকের নেতৃত্বে চার জন।

সহকারী জল্লাদরা প্রথমে আসামিদের দুই হাত পেছনে বেঁধে মাথায় ‘যম টুপি’ পরিয়ে দেন। জেল সুপার নির্ধারিত সময়ে তার হাতে থাকা রুমাল ফেলে দিলে প্রধান জল্লাদ লিভার টেনে ধরেন। আসামিরা ঝুঁলে পড়েন ফাঁসির কূপে।

পরে নিয়ম অনুযায়ী কর্তব্যরত চিকিৎসক দণ্ডিতদের লাশ পরীক্ষা করে হাত ও পায়ের রগ কেটে দেন। ময়নাতদন্ত শেষে কাফন পরিয়ে লাশ কফিনে করে তোলা হয় অ্যাম্বুলেন্সে।

রাত ১০টা ৪০ মিনিটে সিলেট কারাগার থেকে রিপনের কফিন নিয়ে একটি অ্যাম্বুলেন্স কুলাউড়ার পথে রওনা হয় বলে জেলসুপার ছগির মিয়া জানান।

আর কাশিমপুরেরে সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ হলে রাত ১২টার দিকে হান্নান ও বিপুলের লাশ নিয়ে দুটি অ্যাম্বুলেন্স গোপালগঞ্জ ও চাঁদপুরের উদ্দেশ্যে রওনা হয় বলে গাজীপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ জানান।

মুক্ত গণমাধ্যম চাই : সকল গণমাধ্যমে এক নীতিমালা, তথাকথিত ওয়েজ বোর্ড বাতিল, নিজস্ব বেতন বোর্ড, বিজ্ঞাপন ও ক্রোড়পত্র নীতিমালা নিয়ন্ত্রণ মুক্ত, প্রয়োজনীয় কাঁচামালের মূল্য কমানো ও মফস্বলের পত্রিকাগুলো সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করে টিকিয়ে রাখতে হবে

Archive Calendar
Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
2930