হাটহাজারী প্রতিনিধি: দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে কার্প জাতীয় মা-মাছ ডিম ছেড়েছে। গত শুক্রবার (২১ এপ্রিল) সন্ধ্যায় নমুনা ডিম ছাড়ার পর রাত আনুমানিক সাড়ে দশটার দিকে ডিম আহরণকারীরা ডিম সংগ্রহ শুরু করে। গতকাল শনিবার (২২এপ্রিল) সকাল থেকে ১১টা পর্যন্ত মৃগেল, কালবাউশ, কাতাল, রুই জাতের মাছের ডিম সংগ্রহ করা হয়। নদী দূষন সহ অনুকুল পরিবেশের অভাবে গত বছর ডিম ছাড়েনি মা মাছ। এক বছর অপেক্ষার পর হালদা নদীতে মা মাছ ডিম দেওয়ার ফলে ডিম আহরণকে কেন্দ্র করে ডিম সংগ্রাহকদের মুখে ফুটে উঠেছে আশার আলো। হালদা নদীতে এবার প্রায় ১০৫টি নৌকা নিয়ে ডিম আহরণ কারীরা ডিম সংগ্রহ করে। ডিম আহরণের পরিমাণ আণুমানিক ১ হাজার ৬৮০কেজি । তবে এর মধ্য থেকে মাত্র ২৮ কেজি রেনু পাওয়া যাবে বলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রানিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক হালদা বিশেষজ্ঞ ড. মঞ্জুরুল কিবরিয়া জানান।
ডিম আহরণকারীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, রাতে হালদা নদীর হাটহাজারী উপজেলার নাপিতের ঘোনা আজিমের ঘাট এলাকায় প্রথমে মা মাছ আংশিক ডিম দেওয়ার খবর পান এক ডিম সংগ্রহকারী। এরপর খলিফার ঘোনা রামদাসহাট থেকে মদুনাঘাট পর্যন্ত এলাকায় কার্প জাতীয় মা মাছ ডিম ছেড়েছে। গত কয়েকদিন পাহাড়ি এলাকায় বৃষ্টিপাত ও নদীতে পাহাড়ি ঢলের কারণে মা মাছ ডিম ছাড়ার পরিবেশ তৈরি হলে ও মা মাছ ডিম ছাড়ে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক হালদা বিশেষজ্ঞ ড.মঞ্জরুল কিবরিয়া এই প্রতিবেদকে বলেন গত বছর প্রায় দুই শ নৌকা ডিম সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছিল দিনের পর দিন। বিভিন্ন সংস্থা সহ মহাজন থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে ডিম সংগ্রহের অপেক্ষায় থাকলেও সেই বার ডিম না পেয়ে অনেকে হতাশ হয়ে ডিম ধরা পেশা ছেড়ে দিয়েছে। গত বার নমুনা ডিম ছাড়লেও দখল দুষনের কারনে হালদায় মাছ মাছ ডিম দেয়নি। সেজন্য এবার মাত্র ১০৫ টি নৌকা ডিম সংগ্রহ করে। তিনি বলেন, হালদা নদীতে মা মাছ ডিম কম দেওয়ার কারণ হল হালদা নদীতে রাবার ড্যাম নির্মান সহ এশিয়ান পেপার মিলের বর্জ্য নদীতে গিয়ে প্রতিনিয়ত পানির সাথে মিশে পানি দুষিত করছে। এছাড়া আবহাওয়াও শীতল নয় এবং পাহাড়ি ঢলও প্রবল নয়। ফলে ডিমও পাওয়া গেছে কম।
গড়দুয়ারা নয়াহাট এলাকার ডিম সংগ্রহকারী কামাল সওদাগর ও মার্দাশা এলাকার শফি ও জামশেদ বলেন রাতে ভাটার সময় ডিম ছেড়েছে মা-মাছ। ভাটার ¯্রােতের সাথে সাথে মা-মাছ ডিম দিতে মদুনাঘাট এলাকায় চলে আসে। তারা বলেন, এবার মা-মাছ রাতের বেলায় ডিম দেওয়ায় ডিম সংগ্রহ করতে পারেনি অনেক ডিম আহরণকারীরা।
হালদা নদীর হাটহাজারী ও রাউজান উপজেলার ২০ কিলোমিটার অংশে মা মাছ শিকারীদের ঠেকাতে মৎস অধিদপ্তর পাহারা বসিয়েছে বলে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মমিনুল হক জানান। এছাড়া হাটহাজারী উপজেলার গড়দুয়ারা ও মদুনাঘাট এলাকায় সরকারী হ্যাচারী প্রস্তুত রেখেছে মৎস অধিদপ্তর। যাতে ডিম আহরণকারীরা হ্যাচারীতে সহজে ডিম ফুটাতে পারে ।