ঘূর্ণিঝড় মোরায় মহাবিপদ সংকেত

এর মধ্যে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে ১০ নম্বর এবং পায়রা ও মোংলা বন্দরকে ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

ঘণ্টায় ৮৯ থেকে ১১৭ কিলোমিটার শক্তির ঝড়ো হাওয়া নিয়ে এ ঘূর্ণিঝড় মঙ্গলবার সকাল ৬টা নাগাদ কক্সবাজারের কুতুবিদয়া, চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ ও হাতিয়া হয়ে উপকূল রেখা অতিক্রম করতে পারে বলে আবহাওয়া অধিদপ্তরেরর পরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন।

“বিকাল থেকেই ঘূর্ণিঝড়টি শক্তিশালী হচ্ছিল। উপকূলের কাছাকাছি এসে ‘মোরা’র শক্তি বেড়ে যাওয়ায় মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।”

কক্সবাজার, পটুয়াখালী, বাগেরহাটসহ উপকূলীয় বিভিন্ন জেলায় সোমবার সকাল থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। বিকালে কক্সবাজারে নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিকের চেয়ে ৪ থেকে ৫ ফুট বেশি উচ্চতার জোয়ারে প্লাবিত হওয়ায় লোকালয়ে ঢুকে পড়ার খবর পাওয়া গেছে।

উপকূলীয় ১৯ জেলায় মাইকিং করে নিচু এলাকার বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে নিরাপদ আশ্রয়ে। মেডিকেল টিম গঠনের পাশাপাশি বিভিন্ন বাহিনীর সদস্য ও ৫০ হাজার স্বেচ্ছাসেবীকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে জরুরি উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতার জন্য।

দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে বিকাল থেকে সারা দেশে সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ রেখেছে বিআইডব্লিউটিএ। চট্টগ্রাম বন্দরের পণ্য ওঠানামার কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে সকাল থেকেই।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব গোলাম মোস্তফা বলেছেন, সম্ভাব্য দুর্যোগ মোকাবিলায় সব প্রস্তুতিই তারা নিয়েছেন।

ঝড়ের কারণে আতঙ্কিত না হয়ে সতর্ক থেকে প্রস্তুতি নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন আবহাওয়াবিদ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।

# উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর এবং অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।

# ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর ক্ষেত্রে নম্বর মহাবিপদ সংকেত প্রযোজ্য হবে।

যা আছে পূর্বাভাসে

আবহাওয়ার সর্বশেষ বুলেটিনে বলা হয়েছে, সোমবার রাত ৯টায় চট্টগ্রাম থেকে ৩৬০ কিলোমিটার দক্ষিণে, কক্সবাজার থেকে ২৮০ কিলোমিটার দক্ষিণে, মোংলা থেকে ৪৩০ কিলেমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্ব এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৫০ দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্বে অবস্থান করছিল মোরা।

ওই সময় ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬২ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৮৯ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়োহাওয়ার আকারে ঘণ্টায় ১১৭ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছিল।

ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কাছে সাগর খুবই উত্তাল থাকায় বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা, ট্রলার এবং সমুদ্রগামী জাহাজকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলেছে আবহাওয়া অফিস।

আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড় মোরার প্রভাবে উপকূলীয় জেলাগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৪ থেকে ৫ ফুট বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।

ঘূর্ণিঝড় উপকূল অতিক্রমের সময় দমকা বা ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে থাকতে পারে অতি ভারি বর্ষণ।

অধ্যাপক এ কে এম সাইফুল ইসলামের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত বুয়েটের ইন্সটিটিউট অব ওয়াটার অ্যান্ড ফ্লাড ম্যানেজমেন্ট (আইডব্লিউএফএম)-এর পর্যবেক্ষণে  বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে মঙ্গলবার সকাল থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় কক্সবাজার ও আশপাশের এলাকায় ১২৮ মিলিমিটার থেকে ২৫৬ মিলিমিটার পর্যন্ত  বৃষ্টি হতে পারে।

ইনস্টিটিউটের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো মোহন কুমার দাস বলেন, “সাগরে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু কার্যকর রয়েছে। সেই সঙ্গে ভারি জলীয় বাষ্প নিয়ে ঘূর্ণিঝড়টি উপকূল অতিক্রম করার সময় অতি ভারি বর্ষণ হতে পারে।”

৬৫ থেকে ১১৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতকে তাকে ‘ভারি বর্ষণ’, ১১৫ থেকে ২০৫ মিলিমিটার পর্যন্ত ‘অতি ভারি বর্ষণ’ এবং ২০৫ মিলিমিটারের বেশি হলে তাকে ‘চরম ভারি বর্ষণ’ বলেন আবহাওয়াবিদরা।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ আবদুল মান্নান জানান, প্রতি ঘণ্টায় ২০ থেকে ২৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিচ্ছে ঘূর্ণিঝড় মোরা। অন্তত ২০০ কিলোমিটার ব্যসের এই ঘূর্ণিঝড় সকাল ৬টায় উপকূল অতিক্রম শুরু করলে পুরোপুরি স্থলভাগে উঠতে দুপুর হয়ে যেতে পারে।

উপকূল পার হওয়ার পর বৃষ্টি ঝরিয়ে ঘূর্ণিঝড় দুর্বল হয়ে পড়ে এবং এক পর্যায়ে তা স্থল নিম্নচাপে পরিণত হয়।

গত ২৬ মে দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হওয়ার পর রোববার সকালে তা নিম্নচাপে এবং মধ্যরাতে ঘূর্ণিঝড়ের রূপ নেয়।

এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সাগর তীরের আট দেশের আবহাওয়া দপ্তর ও বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্যানেলের তালিকা অনুযায়ী তখন এর নাম দেওয়া হয়ে ‘মোরা’ (MORA)। নামটি প্রস্তাব করেছিল থ্যাইল্যান্ড।

নিম্নচাপ থেকে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার পর ১৮ ঘণ্টায় ২৮৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেয় মোরা; এরপর সেটি পরিণত হয় প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে।

সর্বশেষ গত ১৫ এপ্রিল সকালে দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় একটি নিম্নচাপ সৃষ্টি হয় এবং পরদিন তা ঘূর্ণিঝড় ‘মারুথা’য় রূপ নেয়। পরে সেটি দক্ষিণপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে মিয়ানমার উপকূল অতিক্রম করে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরেরর পরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এর আগে ২০০৭ সালে ঘূর্ণিঝড় সিডরের সময় মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছিল।
“মোরা সিডরের মতো অতোটা শক্তিশালী হয়তো হবে না, তবে এখনও এটার বাতাসের বেগ ঘণ্টায় ৮৯ কিলোমিটার বা তার বেশি। সেক্ষেত্রে ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের প্রভাব থাকবেই।”

Archive Calendar
Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031