বাঘাইছড়িতে বিস্তৃণ এলাকায় বেড়েছে তামাক চাষ

॥ মিল্টন বাহাদুর ॥ রাঙ্গামাটি জেলার প্রত্যন্ত দুর্গম সীমান্তবর্তী বাঘাইছড়ি উপজেলা ক্রমেই বেড়ে চলেছে তামাক চাষ। কাচালং নদীর তীরে মাইলের পর মাইল ফসলী জমিতে চাষ হচ্ছে তামাকের। উপজেলা প্রশাসনের নাকের ডগা এলাকা জুড়ে পরিবেশ ধ্বংসকারি তামাক চাষ করছে কতিপয় অসাধু চাষীরা। ফলে ব্যাহত হচ্ছে খাদ্যশষ্য উৎপাদন। তামাক চাষের ফলে পরিবেশের ক্ষতির সাথে সাথে উৎপাদনে জড়িতদের বাড়ছে স্বাস্থ্য ঝুঁকিও।
১৯০০ বর্গ কিলোমিটারের আয়তনের দেশের সবচেয়ে বড় উপজেলা বাঘাইছড়ি। ভৌগলিক দিক থেকে বাঘাইছড়ির ভূমির অর্ধেক সমতল। সাজেক ছাড়া বাঘাইছড়ির ৬টি ইউনিয়নের ৩ হাজার ৬শ ১০ হেক্টর জমিতে কৃষি কাজে ব্যবহার করা হয়।
ধান, গম, ভুট্টা, আখের পাশাপাশি এখানে প্রচুর পরিমানে সবজি উৎপাদনে এ উপজেলার খ্যাতি রয়েছে। এক সময় এখানকার উৎপাদিত খাদ্য শষ্য ও সবজি স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে জেলার বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হতো। কিন্তু তামাক কোম্পানীগুলোর প্রলোভনে পড়ে উর্বর জমিগুলো এখন তামাক চাষে ব্যবহার করছে কৃষকরা। ১শ ৯০ হেক্টর আবাদি জমিতে তামাক চাষ হচ্ছে। অধিক লাভের আশায় চাষীরা ঝুঁকে পড়ছে তামাক চাষে। এ তামাকের চাষ করে ভাল নেই এখানকার কৃষকেরা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, কাচালং নদীর দু পাশে হাজার হাজার হেক্টর জমিতে তামাক চাষ করার কারনে পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে এবং তামাক পোড়াতে বনের কাঠ উজাড় করা হচ্ছে। এতে আস্তে আস্তে উজার হয়ে যাচ্ছে বন বনভূমি। আর ধান, গম, আলু, সরিষা, মরিচ, ভুট্টাসহ অন্যান্য ফসলের আবাদ দিন দিন কমে যাচ্ছে। তামাকের কারণে স্থানীয় এলাকাবাসীসহ তামাক চাষীদের স্বাস্থ্য ঝুঁকিও বাড়ছে। এই সব ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসনের কোন কিছু করার নেই বলে জানালেন প্রশাসন। তবে প্রতি মাসিক সমন্বয় সভায় এই ব্যাপারে কথাবার্তা উঠলেও তা কাগজে কলমে সীমাবদ্ধ থাকে।
এলাকাবাসীরা অভিযোগ করে বলেন, এই বিস্তৃণ এলাকা জুড়ে তামাক চাষ করছে বিগত দিনে ওই সব এলাকায় প্রজেক্টের মাধ্যমে ইরি ধানের চাষ হতো। এখন ইরি ধান চাষ বাদ দিয়ে বেশী লাভের আশায় তামাকের চাষ করছে। আর এইসব তামাক চাষের জড়িত আছে এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তিরা।
এছাড়াও তামাক চাষের সাথে জড়িত আছে কাঠ। জ্বালানি কাঠ ছাড়া নাকি তামাক পুড়ানো যায় না। তাই বন উজাড় করে তামাকের চুল্লিতে পোড়ানো হচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির মূল্যবান কাঠ। আর এই ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নিচ্ছেন না বন বিভাগ।
স্থানীয় লাইল্যা ঘোনা গ্রামের সফি ও হোসেন আলী বলেন, যে ভাবে দিন দিন তামাক চাষের পরিধি বাড়ছে আগামী ৫-১০ বছরে মধ্যে পরিবেশে হুমকির মুখে পড়বে বলে আশংকা প্রকাশ করেন। এছাড়াও যে হারে তামাক চাষ হচ্ছে ভবিষ্যতে মৌসমী রবি শষ্য বাইরে থেকে আমদানি করতে হবে। বিগত দিনে বাঘাইছড়ির উৎপাদিত তরিতরকারি যেতো বাইরে বর্তমানে বাইরে থেকে কাচা সাকসবজি না আসলে এই এলাকার লোকজন না খেয়ে থাকতে হবে।
তামাক চাষী অলি উল্লাহ বলেন, এই চাষে অত্যন্ত লাভবান চাষীরা। ধান বা অন্যান্য চাষে এত লাভবান হওয়া অত্যন্ত কঠিন। আর তামাক চাষে দাদন পাওয়া যায়। বাকি অন্যান্য চাষে তেমন সুবিধা করতে না পেরেই বাধ্য হয়ে চাষিরা তামাক চাষের দিকে ঝুকে পড়ছে। তবে আমেরিকা ব্রিটিশ টোবাকো কোম্পানি লিঃ জমির মালিকদের যে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন তাতে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে মাটির উর্বরতা বা মাটির পরিবেশগত কোন সমস্যা হবে না।
এ ব্যাপারে বাঘাইছড়ি উপজেলা কৃষি অফিসার আল ইমরান বলেন, তামাক চাষ ব্যাপারে কোন প্রকার বিধি নিষেধ নেই। তামাক চাষ বন্ধে সুনিদিষ্ট কোন আইন না থাকায় কৃষকদের নিরুৎসাহ করা ছাড়া আর কোন ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছেনা। তবে আমরা তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণ বা এই চাষ না করার ব্যাপারে নিরুৎসাহীত করতে সভা ও সেমিনার করে কৃষকদের বোঝাতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি এবং এই ব্যাপারে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে প্রদক্ষেপ গ্রহন করা হচ্ছে।
এদিকে এ ব্যাপারে রাঙ্গামাটি কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক রমনী কান্তি চাকমা জানান, কৃষকরা উৎপাদিত কৃষি পন্যের ন্যায্যবাজার মূল্য না পাওয়ায় তামাক চাষের উপর বেশি উৎসাহী হয়ে উঠেছে। তাই তাদেরকে তামাক চাষে নিরুৎসাহিত করে ফসলী জমিতে মৌসুমী ফসল লাগাতে উৎসাহ দিতে হবে। আর খাদ্য উৎপাদনের চেয়ে তামাকের জমিতে অধিক পরিমানে সার ও বিষ ব্যবহার করার কারনে ফসলী জমির উর্বরতা নষ্ট হয়ে যায়।
তাই দ্রুত পাহাড়ে তামাক চাষ বন্ধ কিংবা নিয়ন্ত্রন করা না হলে ভবিষ্যতে খাদ্য উৎপাদনে চরম সংকট দেখা দেবে বলে মনে করেন স্থানীয় অধিবাসীরা।

মুক্ত গণমাধ্যম চাই : সকল গণমাধ্যমে এক নীতিমালা, তথাকথিত ওয়েজ বোর্ড বাতিল, নিজস্ব বেতন বোর্ড, বিজ্ঞাপন ও ক্রোড়পত্র নীতিমালা নিয়ন্ত্রণ মুক্ত, প্রয়োজনীয় কাঁচামালের মূল্য কমানো ও মফস্বলের পত্রিকাগুলো সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করে টিকিয়ে রাখতে হবে

Archive Calendar
Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031