॥ নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম হতে সকল অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের আল্টিমেটাম দিয়েছে নিপীড়িত নির্যাতিত পার্বত্যবাসী। গতকাল রাঙ্গামাটিতে নির্যাতিত ও নিপিড়িত মানুষের পক্ষে আয়োজিত মহাসমাবেশে নেতৃবৃন্দ এই আল্টিমেটাম দেন। নেতৃবৃন্দ বলেন অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানিতে অতিষ্ট পার্বত্য চট্টগ্রাম। প্রতিরোধ না থাকায় অবৈধ অস্ত্র হাতে প্রতিদিন মহড়া দিয়ে যাচ্ছে সন্ত্রাসীরা বলে মহা সমাবেশে উল্লেখ করেন নেতৃবৃন্দ। নেতৃবৃন্দ বলেন অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা না হলে আগামীতে কঠোর কর্মসূচী ঘোষণা করা হবে।
গতকাল রবিবার (১৪ মে) রাঙ্গামাটিতে পাহাড়ে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করে সন্ত্রাস বিরোধী অভিযান জোরদার করে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজী, খুন, গুম অপহরণবন্ধের দাবীতে বিক্ষোভ ও সমাবেশে নেতৃবৃন্দ এই আল্টিমেটাম দেন।
নির্যাতিত নিপীড়িত পার্বত্যবাসীর সদস্য বেগম নুরজাহান সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সদস্য জাহাঙ্গীর কামাল, এডভোকেট পারভেজ তালুকদার, কাজী মোঃ জালোয়া, ইঞ্জিনিয়ার সাহাদাৎ ফরায়জী সাকিব, জুরাছড়ি উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান রূপ কুমার চাকমা, মার্গারেড পাংখোয়া, জাহাঙ্গীর কামাল, এ্যাডভোকেট আবছার আলী, মোর্শেদা আক্তার, সোহেল রিগ্যান, মোঃ ইউনুস, উজ্জ্বল পালসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। মহা সমাবেশে ঘোষণা পত্র পাঠ করেন নির্যাতিত নিপীড়িত পার্বত্যবাসীর আহবায়ক জাহাঙ্গীর আলম মুন্না।
নিপীড়িত নির্যাতিত পার্বত্যবাসীর ব্যানারে রাঙ্গামাটি ও বিভিন্ন উপজেলা থেকে হাজার হাজার সাধারণ মানুষ এই সন্ত্রাস বিরোধী বিক্ষোভে যোগ দেয়।
রাঙ্গামাটি পৌরসভা চত্বর থেকে সাধারণ মানুষের সন্ত্রাসী বিরোধী মিছিলটি বের হয়ে শহরের জিমনেশিয়াম চত্ত্বরে গিয়ে সমাবেশে যোগ দেয়। এসময় শহরের বেশির ভাগ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
বক্তারা বলেন, পার্বত্য চুক্তির প্র্রায় দুইদশক পার হয়ে গেলেও পাহাড়ে খুন, গুম, অপহরণ, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি দিনদিন বেড়েই চলেছে। সন্ত্রাসীদের কাছে পাহাড়ী-বাঙ্গালী সাধারণ মানুষের জীবন জিম্মি হয়ে পড়েছে। পাহাড় থেকে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের দাবী দীর্ঘদিনের।
বক্তারা বলেন, শুধুমাত্র অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের মাধ্যমে পাহাড়ের সন্ত্রাসীদের দমন করা সম্ভব। পাহাড়ের সন্ত্রাসীদের দমনে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান জোরদার করা না হলে পার্বত্য এলাকা সন্ত্রাসীদের কাছে অভয়ারন্য হয়ে উঠবে। পাহাড়ে শক্ত হাতে সন্ত্রাস দমনের জন্য সরকারের প্রতি দাবী জানান বক্তারা।
পাহাড়ে সন্ত্রাসীদের প্রতিনিয়ত হত্যা-গুমসহ অপহরণের ঘটনাগুলোতে মানবাধিকার সংগঠনগুলো সন্ত্রাসীদের পক্ষ নিয়ে বিতর্কিত অবস্থান নিচ্ছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করে সন্ত্রাসীদের হাতে সাধারণ মানুষের নির্মম হত্যাকান্ড নিয়ে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর রহস্যজনকভাবে নিরব ভূমিকা নিয়েও সমাবেশ উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
নির্যাতিত নিপীড়িত পার্বত্যবাসীর আহবায়ক জাহাঙ্গীর আলম মুন্না ঘোষণা পত্রে বলেন, ১। অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানিতে অতিষ্ট পার্বত্য চট্টগ্রাম। প্রতিরোধ না থাকায় অবৈধ অস্ত্র হাতে প্রতিদিন মহড়া দিয়ে যাচ্ছে সন্ত্রাসীরা। ফলে নির্বিচারে খুন, গুম সহ নানা অপকর্ম করছে সন্ত্রাসীরা। তাই নির্যাতিত নিপিড়িত মানুষের পক্ষে এই সমাবেশ ঘোষণা করছে আজ হতে আগামী ৩০ নভেম্বর এর মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম হতে সকল অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করতে হবে।
২। পার্বত্য চট্টগ্রামে আজ মজলুম মানুষের রক্তে বন্যা বইছে। বিচার না হওয়ায় খুনীরা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তাই অবিলম্বে পার্বত্য চট্টগ্রামে এ যাবৎ সংগঠিত সকল হত্যাকান্ডের বিচার প্রক্রিযা শুরু করতে হবে।
৩। সন্ত্রাসী আর চাঁদাবাজদের দৌরাত্বে পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষ আজ দিশেহারা। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চাকুরী করা একজন সামান্য কর্মচারী থেকে শুরু করে উচ্চ পদস্থ র্প্যন্ত এমন কেউ নেই যাদেরকে চাঁদাবাজরা রেহাই দিচ্ছে। আজকের সমাবেশ ঘোষণা করছে, আজ হতে পার্বত্য চট্টগ্রামে চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্যক্রম চলতে দেয়া হবে না। এবং যদি করা হয় তবে এ অঞ্চলের আপামর জনতা সংগে নিয়ে গণ প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে।
৪। এ পর্যন্ত পার্বত্য চট্টগ্রামে সন্ত্রাসীদের হতে নিহত ও আহতদের তালিকা করে উপযুক্ত ক্ষতিপুরণ দিতে হবে।
৫। রাঙ্গামাটি মেডিকেল কলেজ ও রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়কে অতি দ্রুততার সাথে তাদের নিজস্ব ক্যাম্পাস নির্মাণ করার মাধ্যমে এর পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করতে হবে।
উল্লেখিত ঘোষণা সমূহ ও সরকারের নিকট করা দাবী সমূহ অতিদ্রুত বাস্তবায়ন করা না হলে পর্যায়ক্রমে মানববন্ধন, গণস্বাক্ষর কর্মসূচী, পদযাত্রা সহ বৃহত্তর আন্দোলনের কর্সসূচী ঘোষণা করা হবে বলে হুশিয়ারী উচ্চারণ করেন।