॥ নন্দন দেবনাথ/মিল্টন বাহাদুর ॥ প্রাণ ফিরে পেলো রাঙ্গামাটি জেলাবাসী। রাঙ্গামাটি পাহাড় ধ্বসের ঘটনায় ৮দিন বন্ধ থাকার পর গতকাল বুধবার দুপুর থেকে রাঙ্গামাটি চট্টগ্রাম সড়ক হালকা যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয়েছে। যানবাহন ও জনসাধানের চলাচলের জন্য রাস্তা খুলে দেয়ায় রাঙ্গামাটিতে যেন বইছে আনন্দের বন্যা। এই যেন নতুন করে প্রাণ ফিরে পাওয়া। রাঙ্গামাটির বাইরে এবং রাঙ্গামাটির ভিতরে যারা আটকা পড়েছে এবং ব্যবসায়ীরা এই নিয়ে মহা খুশী।
গতকাল সেনাবাহিনীর চট্টগ্রাম এরিয়া কমান্ডার ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল জাহাঙ্গীর কবির তালুকদার রাঙ্গামাটির সাপছড়ি শালবনে নতুন সংযোগকৃত সড়কের উপর যান চালিয়ে রাস্তার পার হয়ে হালকাযান চলাচলের জন্য উম্মুক্ত করে দেয়া হয়।
এ সময় সড়ক ও সেতু মন্ত্রনালয়ের সচিব এম এ এন সিদ্দিক, সড়ক ও জনপথ বিভাগের চীফ ইঞ্জিনিয়ার ইবনে আল মাসুদ, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ রুহুল আমিন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল গোলাম ফারুক, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রেজাউউ মজিদ, রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মানজারুল মান্নান, পুলিশ সুপার সাঈদ তারিকুল হাসান, সড়ক ও জনপথ রাঙ্গামাটির নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ এমদাদ হোসেন সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দরা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে এরিয়া কমান্ডার সাংবাদিকদের বলেন, সেনাবাহিনী ও সড়ক বিভাগের সদস্যরা অতিদ্রুত রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম সড়কে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়া রাস্তা পুর্ণস্থাপন করে যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে তা এই সড়কের পূর্ণ নির্মাণ কাজে আরো স্পৃহা যোগাবে।
আট দিন বন্ধ থাকার পর যানবাহন চলাচল শুরু হওয়ায় মানুষের মনে ছিল উচ্ছাস আর আনন্দ। অতিদ্রুত সড়ক যোগাযোগ পুনরায় স্থাপিত হওয়ায় তারা সেনাবাহিনী ও সড়ক বিভাগের কর্মীদের অভিনন্দন জানান।
এ দিকে রাঙ্গামাটি চট্টগ্রাম সড়কের অবস্থান পর্যবেক্ষণে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এম এ এন সিদ্দিক ও সড়ক বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী ইবনে আলম হাসান দুপুরে রাঙ্গামাটি সড়কের ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন করেন। সড়ক যোগাযোগ চালু কারার পর তারা জানান, আগামী ১ মাসের মধ্যে এই সড়কে ভারী যান চলাচলের জন্য ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। সেনা বাহিনী ও সড়ক বিভাগ যৌথভাবে এই কাজ করবে বলে তিনি জানান।
এই দীর্ঘ আট দিন রাঙ্গামাটি জেলা বাসীর জন্য ছিলো নরক যন্ত্রনা। রাঙ্গামাটি জেলা শহরের সাথে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় মানুষকে যে দূর্ভোগ পোহাতে হয়েছে তা বলে বোঝানোর কোন অপেক্ষো রাখে না।
সাইফ উদ্দিন নামে ক্ষুদ্র এক কাচামাল ব্যবসায়ী জানান, আমরা প্রতিদিন রাঙ্গামাটিতে কাচাপণ্য বিক্রি করি। তার জন্য রানীরহাট থেকে পণ্য সামগ্রীক্রয় করে রাঙ্গামাটি নিয়ে বিক্রয় করতাম। সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় আমাদেরকে পায়ে হেটে পাহাড় বেয়ে মালামাল অধিক ভাড়া গুনে রাঙ্গামাটি যেতে হয়েছে। সেনাবাহিনী ও সড়ক জনপথ রাস্তাটি সংস্কার করে দেয়ায় আমরা হালকা যানবাহন নিয়ে রাঙ্গামাটি পণ্য সরবরাহ করতে পারবো।
উল্লেখ্য, রাঙ্গামাটি পাহাড়া ধ্বসের ঘটনায় জনবসতিপূর্ণ এলাকা, সড়ক মহাসড়ক ও বিস্তির্ন পাহাড়ী ভূমির ক্ষতিসাধিত হয়েছে। এই ক্ষতি নিরুপনে দীর্ঘদিন সময় লেগে যেতে পারে বলে স্থানীয়রা মনে করছেন।
রাঙ্গামাটি জেলা কন্ট্রোল রুম সুত্রে প্রাপ্ত তথ্যে সর্বশেষ রাঙ্গামাটিতে পাহাড় ধ্বসের ঘটনায় নিহত ১১৮, নিখোঁজ ২জন। নিহতের মধ্যে ৫৭ জন বাঙ্গালী, ৬১ জন পাহাড়ী। এর মধ্যে পুরুষ ৪৭জন, নারী ৩৪ ও শিশু ৩৬।